তখনও অমিতাভ বচ্চন সিনেমা জগতে নিজের নাম কামাতে পারেননি। অভিনয় জগতে অমিতাভের আসার আগে থেকেই রাজেশ খান্না তাঁর একচেটিয়া আধিপত্য নিয়ে রাজ করছিলেন। কিন্তু ছিপছিপে এই লম্বা মানুষটার আগমন যেন ভীত নড়িয়ে দেয় রাজেশের। তাঁর স্টারডমের আলো ধীরে ধীরে অন্যদিকে ঘুরতে থাকে। একটা সময় রাজেশের ফ্যানেরা তাঁর দেখা পাওয়ার জন্য বাড়ির সামনে ভিড় করত, বহু মহিলা তাঁর প্রেমে পাগল ছিলেন, এমনকি রাজেশ খান্নার গাড়ি লিপস্টিকের দাগে ভরে যেত, সেই রাজেশ খান্নার জীবনে অমিতাভ বচ্চন ছিলেন সূচ।
অমিতাভের প্রথমের দিকের প্রায় ছবিই ফ্লপ হত। কিন্তু তাও চেষ্টা থামাননি তিনি। ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা তৈরি করার জন্য কাজের কোন গাফিলতি অমিতাভ বচ্চন দিতেন না। অবশেষে সুপারস্টার রাজেশ খান্নার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার সুযোগ পান অমিতাভ। রাজেশের সঙ্গে তিনি প্রথম কাজ করলেন ‘আনন্দ’ ছবিতে।
‘আনন্দ’ দেখার পর দর্শকদের মধ্যে অমিতাভ একটু একটু করে জায়গা করে নিতে শুরু করেছেন, তখন রাজেশের অনুরাগীদের মনে হতে শুরু করলো যে কেউ একজন এসেছে রাজেশকে টক্কর দেওয়ার জন্য। ‘আনন্দ’ হিট হওয়ার পর দ্বিতীয়বার দুজন ‘নমকহারাম’ ছবিতে কাজ করতে শুরু করেন। সেইসময় সুপার হিট ওই সিনেমা। এই ছবিতে অমিতাভ ছিলেন সেকেন্ড লিডে। প্রধান নায়ক রাজেশ খন্না। কিন্তু মুক্তির পর বেশি প্রচার পান অমিতাভ। দর্শকদের মনে প্রায় পাকাপাকি জায়গা বানিয়ে নেন বচ্চন।
ব্যাস এরপর হাতে আসে ‘জঞ্জীর’। আবারও সুপার হিট হয় এই সিনেমা। পাশাপাশি ঠাণ্ডা লড়াই মোড় নিতে শুরু করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সঙ্কটে। একদিকে ক্যারিয়ার নিয়ে সঙ্কট অন্যদিকে বৈবাহিক জীবনের সমস্যা সব নিয়ে রাজেশ খান্নার জীবন বেশ কিছুটা থমকে গিয়েছিল। তবে মানুষটি বেশ মজার ছিলেন। নিজের হানিমুনেও নাকি বন্ধুদের নিয়ে গিয়েছিলেন লন্ডন। ১৬ বছরের ডিম্পলকে বিয়ে করার পরে তাঁর ঘরে দুটি কন্যা সন্তান আসে, কিন্তু সুরা পান তাঁকে তলানিতে গিয়ে ঠেকায়। বি টাউন থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করেন। এর মধ্যে ডিম্পল তাঁকে ছেড়ে মেয়েদের নিয়ে অন্যত্র থাকতে শুরু করেন।
একবার রাজেশ খান্না অমিতাভ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে আমি কেরানি নই, আমি সুপারস্টার তাই আমি আমার মুডের চাকর নই। যখন আমার ইচ্ছে হবে, তখন আমি কাজ করব। এছাড়াও, একবার একটি ছবির শুভ মহরৎ এর সময় রাজেশ খান্নাকে ডাকা হয়। সেই ছবিতে অভিনয় করছিলেন অমিতাভ। রাজেশ খান্না শুভ মহরৎ এ এলে সকলে ভিড় করে তাঁকে নিয়ে, কিন্তু যখনই অমিতাভ সেটে প্রবেশ করেন তখন গোটা ভিড় অমিতাভের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়। সেদিনই রাজেশ খান্না বুঝেছিলেন যে তাঁর রাজ্যপাঠ তাঁর চোখের সামনেই হাতছাড়া হয়ে গেল। এরপরেই তিনি সুরাপানে আসক্ত হয়ে যান।
ব্যর্থতা ঢাকতে তিনি রাজনীতির ময়দানে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু সেখানেও তেমন সাফল্য পাননি। অমিতাভকে দেখার পর তাঁরও ছোট পর্দায় আসার ইচ্ছা হয়েছিল, এমনকি বিগ বসের ঘরে যাবেন বলে ঠিকও করেছিলেন তিনি কিন্তু বাড়ির মানুষেরা রাজী না থাকায় তিনি আর ছোট পর্দায় ফিরতে পারেননি।
আজ তিনি নেই, ১৮ জুলাই, ২০১২ সালে রাজেশ খান্না পরলোকগমন করেন ঠিকই কিন্তু আজও তাঁর সিনেমা, অভিনয় দর্শকদের মনে দাগ কাটে। আজও ভেসে আসে কোরা কাগজ থা ইয়ে মানুষ মেরা