প্রথম সিরিয়ালে হিট দিয়েই বেপাত্তা, স্টারডম ক্রমশ কমছে টেলি অভিনেত্রীদের?
টেলিভিশন সিরিয়াল (Bengali Serial) এবং সিনেমার মধ্যে জনপ্রিয়তা নিয়ে যতই রেষারেষি থাকুক না কেন, দুই মাধ্যমই একে অপরের পরিপূরক। ছোটপর্দার অভিনেতা অভিনেত্রীরা সাফল্য পাওয়ার পরে যেমন বড়পর্দায় পা রাখেন, তেমনি আবার সিনেমার নায়ক নায়িকারাও মুখ দেখান টিভি ধারাবাহিকে। এই চল দীর্ঘদিনের। তবে দর্শকরা মাঝে মধ্যেই অভিযোগ করেন, কোথাও গিয়ে যেন ধারাবাহিকের আগের আমেজটা হারিয়ে গিয়েছে। নায়িকাদের নিয়েও ততটা উন্মাদনা আর লক্ষ্য করা যায় না। এমনকি তাঁরাও আগের মতো সাফল্যের ধারা বজায় রাখতে পারছেন না।
উদাহরণ স্বরূপ সন্দীপ্তা সেন, মধুমিতা সরকারদের ধরা যাক। এই দুই অভিনেত্রীই এখন বড় পর্দার নায়িকা। তবে তাঁদের অভিনয়ে হাতেখড়ি তথা খ্যাতির সূত্রপাত কিন্তু ছোটপর্দা থেকেই। ‘দূর্গা’ সিরিয়ালের হাত ধরে টেলিভিশন স্ক্রিনে প্রথম মুখ দেখান সন্দীপ্তা। প্রথম ধারাবাহিকেই বাজিমাত! সেরা অভিনেত্রী হিসেবে টেলি সম্মান অ্যাওয়ার্ড উঠেছিল তাঁর হাতে। প্রথম সিরিয়ালের যে খ্যাতি সেটা কিন্তু হারিয়ে যেতে দেননি সন্দীপ্তা।
‘টাপুর টুপুর’এও দর্শকরা নতুন রূপে পান তাঁকে। সেই সিরিয়ালও হিট। রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে ‘তুমি আসবে বলে’ তো আজও সিরিয়ালপ্রেমীদের মনে আলাদা একটি জায়গা দখল করে রয়েছে। সিরিয়াল থেকে জনপ্রিয়তা পেয়ে সিনেমায় নাম লেখান সন্দীপ্তা। তারপর ফের যখন ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’তে মা সারদা হয়ে ফেরেন, দর্শক আবারো মুগ্ধ হয় তাঁর অভিনয়ে। সন্দীপ্তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি খেলা ভোলেননি, স্রেফ মাঠটা ছেড়েছিলেন।
সন্দীপ্তার ডেবিউয়ের পরপরই টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি আরো এক অভিনেত্রীকে পায়। তিনি মধুমিতা সরকার। সানন্দা টিভির ‘সবিনয় নিবেদন’ দিয়ে তাঁর সফর শুরু। প্রথম সিরিয়ালেই ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। কারণ মধুমিতার পরবর্তী সিরিয়ালগুলি তাঁর প্রথম কাজকে ভুলিয়ে দেয়। ‘কেয়ার করি না’, ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’, ‘কুসুম দোলা’ পরপর কাজ করে গিয়েছেন অভিনেত্রী। প্রতিটি ধারাবাহিকই টেলিভিশনের ইতিহাসে নিজের নাম তুলেছে। বিশেষ করে ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’র পর ‘পাখি’ নামেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন মধুমিতা। ছোটপর্দার জনপ্রিয়তাকে সঙ্গী করে বড়পর্দায় পা রাখেন তিনি। আর সিরিয়ালে ফেরেননি বটে, তবে তিনি ফিরলেও যে ধামাকা হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রথম সিরিয়ালেই ছক্কা মারার চলটা পরবর্তী প্রজন্মেও সঞ্চারিত হয়েছে। কিন্তু তবুও একটা ফারাক থেকেই গিয়েছে। বর্তমানে যেসব নায়িকারা ডেবিউ ধারাবাহিকেই ইন্ডাস্ট্রিতে একটা ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়েছেন তাদের মধ্যে তৃণা সাহা, সোনামণি সাহা এবং তিয়াশা লেপচার নাম না করলেই নয়। ‘খোকাবাবু’ তৃণার প্রথম সিরিয়াল। মজার কাহিনিতে তাঁর অভিনয় দ্রুত নজর কেড়ে নিয়েছিল দর্শকদের। যদিও তারপরের ধারাবাহিক ‘কলের বউ’ এক বছরও চলেনি। ফ্লপের পর তৃণার কেরিয়ারে সবথেকে বড় ব্রেক আনে ‘খড়কুটো’। দর্শকদের প্রিয় হয়ে ওঠে ‘গুনগুন’। তারপর আবার একটি ফ্লপ ‘বালিঝড়’। অদ্ভূত ভাবে এখানেও কিন্তু ফেরানো হয়েছিল তৃণা-কৌশিকের জুটি। কিন্তু মুখ ফেরালেন দর্শক ।
‘দেবী চৌধুরানী’ হয়ে ছোটপর্দায় অভিষেক সোনামণি সাহার। সেই সোনামণিই আবার দর্শকদের কাছে ‘মোহর’ হয়ে উঠতে বেশি সময় নেননি। প্রতীক সেনের সঙ্গে তাঁর রসায়ন ছিল সুপারহিট। দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ালটি চলার পর শেষ হয় একসময়। সোনামণি ‘রাধিকা’ রূপে আসেন ‘এক্কা দোক্কা’য়। সপ্তর্ষি মৌলিকের সঙ্গে কিন্তু তাঁর জুটি জমেনি। বাধ্য হয়ে আবার ফেরানো হয় প্রতীককে। কিন্তু তৃণার বালিঝড়ের মতো এখানেও ব্যর্থ হয় সোনামণি-প্রতীকের ‘হিট’ জুটি। টিআরপি তলানিতে নিয়েই বিদায় নেয় এক্কা দোক্কা।
কাহিনিটা তিয়াশা লেপচার ক্ষেত্রেও খুব একটা আলাদা নয়। তাঁর ডেবিউ সিরিয়াল ‘কৃষ্ণকলি’ লম্বা সময় ধরে বাংলা সেরা থেকে রেকর্ড গড়েছিল। তিয়াশা হয়ে উঠেছিলেন ‘শ্যামা’। জি এর হিট জুটি তারপর চ্যানেল বদলে যান স্টার জলসায়। কিন্তু এখানেও সেই এক গল্পের পুনরাবৃত্তি। ‘কৃষ্ণকলি’র নীল-তিয়াশা জুটি ‘বাংলা মিডিয়াম’এ টিআরপি আনতে খাবি খাচ্ছেন। গুঞ্জন, শীঘ্রই নাকি বন্ধও হতে পারে সিরিয়ালটি। নয়া প্রজন্মের তিন অভিনেত্রীরই এক দশা কেন? একই জুটি দ্বিতীয় সিরিয়ালে কেন ফেরাতে পারছেন না দর্শক? তবে কি জুটি নয়, বরং জোরালো গল্প খুঁজছেন দর্শকরা? নাকি দিন বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে স্টারডম কমছে এখনকার অভিনেত্রীদের? ‘ওয়ান হিট ওয়ান্ডার’ এর চল কি তবে এখনই থামার নয়? প্রশ্ন অনেক, উত্তর অজানা।