সময় এগোলেও কমেনি জনপ্রিয়তা, মধ্যবিত্তের চাহিদা মেটাতে কিভাবে তৈরি হয়েছিল বাপুজী কেক!
বালক, যুবক, তরুণ, কৈশোর এই সমস্ত বয়স পেরিয়ে এখন বৃদ্ধ বয়সের চৌকাঠ ছুঁইছুঁই বাপুজী কেকের। প্লাস্টিকে মোড়া কতইনা রংবেরঙের সুস্বাদু কেক এলো, গেলো, কিন্তু বাপুজী কেকের জনপ্রিয়তাকে কেউ হার মানাতে পারেনি। ছাপোষা মধ্যবিত্তের বেকার যুবকের সকালবেলা মাটির ভাঁড়ে এক কাপ দুধ চায়ের সঙ্গে বাপুজি কেকে কামড় দেওয়ার শান্তি অথবা টিফিন টাইমে বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাওয়ার মজা, প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে মনের দুঃখে বাপুজী অথবা পিকনিকে কলা, ডিমসেদ্ধ, বাপুজী। বিদেশি কোম্পানিরা একসময় এসে কতইনা লড়াই করল কিন্তু বাপুজী কেকের জায়গা কিন্তু এখনো সেই একই রয়েছে।
মাত্র ৬ টাকাতেই পেট ভর্তি খাবার বলতে যা বোঝায় তা হল বাপুজী। ১৯৭৩ সালে জানা পরিবারের হাত ধরে শুরু হয় এই বাঙালির অন্যতম নস্টালজিয়া বাপুজির পথ চলা। জানা পরিবারের অন্যতম এক সদস্য অলোকেশ জানা সর্বপ্রথম নিউ হাওড়া বেকারি প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কেক সংস্থার রেজিস্ট্রেশন করে। প্রথমে হাওড়ার পদ্মপুকুর পরে একে একে লেকটাউন এবং হুগলির শ্রীরামপুরে এই বাপুজী কেকের কারখানা খোলা হয়। কম দামে, স্বাদেও মন্দ নয়, চৌকাকৃতি এই কেকের মধ্যে আছে টাটকা ফলের গন্ধ। আনন্দ, উচ্ছ্বাসে, একাকিত্বে, অভিমানে, রাগে সবসময় বাঙালির একমাত্র বন্ধু বাপুজী কেক।
পরবর্তীকালে জনপ্রিয়তা এতই বাড়তে থাকে যে কেকের পাশাপাশি বিস্কুট, পাঁউরুটি ইত্যাদিরও প্রোডাকশন শুরু হয়। পরবর্তীকালে জানা পরিবারের নতুন প্রজন্মের এই ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হয়েছেন। অলোকেশ জানার দুই পুত্র, অমিতাভ জানা এবং অনিমেষ জানা তারাও এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন। এই কেক তৈরীর কারখানাতে কয়েকটা হাতেগোনা মেশিন আছে। বাদ বাকি সমস্ত কাজটাই দুই হাতের ভালোবাসা দিয়ে কর্মচারীরা করে থাকেন। মাঝখানে নোট বন্দীর সময় বেশ কিছুদিন বাপুজী কেকের প্রোডাকশন বন্ধ ছিল, সেই সময় সাধারণ মানুষের চাহিদা বুঝিয়ে দিয়েছিল যে বাপুজী কেকের জনপ্রিয়তা একচুলও কমেনি। প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার বাপুজী কেক বিক্রি হয় এমনটাই পরিসংখ্যান বলছে।
বর্তমানে পরিবেশ দূষণ নিয়ে যখন চারিদিকে এত বেশি মানুষ সোচ্চার হচ্ছেন, সেই পরিস্থিতিতে বাপুজী কেকের কথা না বললেই নয়, চারিদিকে যখন দেশি বিদেশি কোম্পানির খাবার প্লাস্টিকের প্যাকেট এবং সেই কোম্পানির কর্ণধার বলছেন যে প্লাস্টিকে মোড়া না হলে খাবার বেশি দিন ভালো থাকে না, সেই পরিস্থিতিতে বাপুজী কেক এখনো কাগজে মোড়া। সেই কাগজে মোড়া কেক কিন্তু দিনের পর দিন ভালোই থাকছে। অত দিন আগেও এই বাপুজী কেকের কোম্পানি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে প্লাস্টিক ব্যবহার না করেও ব্যবসা করা যায়।