কিভাবে ব্রিটিশদের সময় থেকেই বাংলার এক জেলার নাম হয়েছিল ‘কোচবিহার’
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের জলপাইগুড়ি বিভাগের এক অন্যতম জেলা। কোচবিহার আয়তনের হিসাবে এটি রাজ্যের ত্রয়োদশতম জেলা। জনসংখ্যার হিসাবে এটি ষোড়শ বৃহত্তম জেলা। এই জেলার উত্তরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা, দক্ষিণে রয়েছে বাংলাদেশের রংপুর বিভাগ, পূর্বে রয়েছে অসমের ধুবরি জেলা এবং পশ্চিমে জলপাইগুড়ি জেলা ও বাংলাদেশের রংপুর বিভাগ।
বর্তমানে কোচবিহার জেলা অতীতে বৃহত্তর কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। ১৭৭২ সালে কোচবিহার রাজ্য ব্রিটিশ ভারতের একটি করদ রাজ্যে পরিণত হয়। তারপরে অনেকদিন পর সেই সময় রাজা জগদ্দিপেন্দ্র নারায়নপুর বাহাদুর প্রার্থীরা ভারত সরকারের হাতে তুলে দেয়।
কোচবিহার কামতার অন্তর্গত। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় শাহজাহানানামা গ্রন্থ থেকে ‘কোচবিহার’ নামটি পাওয়া যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মেজর রেনেলের মানচিত্রে কোচবিহার ‘বিহার’ নামে উল্লেখিত ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে ভুটানের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় কোচবিহার রাজ চন্দ্র নারায়ন ও ওয়ারেন হেস্টিংস এর মধ্যে একটি চুক্তি হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, কোচবিহার ব্রিটিশদের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। সেই থেকেই এই রাজ্যের নাম হয় ‘কোচবিহার’। আর এই রাজ্যের রাজধানীর নাম হয় বিহার ফোর্ট। তবে অনেকে মনে করেন, এখানে ‘কোচ’ জাতির মানুষের অবস্থান ছিল তাই এখানকার নাম ‘কোচবিহার’।
উত্তরবঙ্গের সমভূমির অন্তর্গত এই জেলাটিতে ভূভাগ বেশ উঁচু নিচু। কোন অঞ্চল এতটাই নিচু যে বর্ষাকালে দুকুল ছাপিয়ে বন্যা হয়। উঁচু ভূমি দেখা গেলেও এই অঞ্চলে কোন পাহাড়, পর্বত নেই। একাধিক বিশাল আকার ঝিল এবং প্রচুর নদ নদী রয়েছে। এখানে জলঢাকা, তোর্সা, কালজানি, রায়ডাক, গদাধর ইত্যাদি নদী দেখা যায়। এই নদীগুলি উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ পূর্বে প্রবাহিত।
কোচবিহারের জনপ্রিয় লোকসংগীত হলো ‘ভাওয়াইয়া’। তাছাড়াও কোচবিহারের জনপ্রিয় পালা গান ‘বিষহরা’। এখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পুন্ডিবাড়ি কোচবিহার আচার্যই ব্রজেন্দ্রনাথ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়, তুফানগঞ্জ মহাবিদ্যালয়, মেখলিগঞ্জ মহাবিদ্যালয়, দিনহাটা মহাবিদ্যালয়, মাথাভাঙ্গা মহাবিদ্যালয় ইত্যাদি রয়েছে। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে এখানে পরিবহনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এটি পূর্বে আসাম রাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত। এছাড়াও রেলপথ, আকাশপথে এখানে যাওয়া যায়। নিউ কোচবিহার জেলার প্রধান রেল স্টেশন এবং কোচবিহার বিমানবন্দর হলো এখানকার বিমানবন্দর।