১৯৬০ সালে অর্জুন হিঙ্গোরানির ‘দিল ভি তেরা হম ভি তেরে’ ছবির মাধ্যমে বিনোদন জগতে পা রাখেন ধর্মেন্দ্র। ৭০ দশকে এই ধর্মেন্দ্রকেই প্রথম দেওয়া হয়েছিল ‘গ্রীক গড’ এর তকমা। পঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলার নাসরালি গ্রামে জন্ম এই সুদর্শন নায়কের। বলিউডে আসার আগে পকেটে ছিল না খাবারের টাকা, এমনকি ট্যাক্সি ভাড়াও। সেইসময় মাথার ওপর ছাদ না থাকার জন্য গ্যারেজ ছিল তখন তাঁর আশ্রয়। সিনেমায় আসার আগে পার্ট টাইমে কাজ করতেন। তখন তাঁর ইনকাম ছিল মাত্র ২০০ টাকা। কাজ থেকে ফেরার সময় পুকুরের সামনে বসে একা একা অভিনয়ের প্র্যাকটিস করতেন। অনেক সংগ্রামের পর অবশেষে অভিনয়ে প্রবেশ হয়।
এরপর আর হাতে গুনলেও শেষ হবে না ধরম সিং দেওলের মুভি লিস্ট। ১৯৬০ থেকে বলিউডে একাই রাজ করছিলেন তিনি। পরবর্তীতে অমিতাভ বচ্চন, ঋষি কাপুর ও অন্যান্য তাবড় তাবড় অভিনেতাদের পাশে পেলেও এই ‘হি ম্যান’ তাঁর রাজ্যপাট দক্ষতার সঙ্গেই চালিয়ে যান। সেইসময় মীনাকুমারী, নূতন, মালা সিংহ, সায়রা বানুর মতো নায়িকাদের সঙ্গে ধর্মেন্দ্র জুটি পছন্দ করতেন দর্শকরা, কিন্তু হেমা মালিনীর সঙ্গে যেই কেমেস্ট্রি বড় পর্দায় গড়ে উঠেছিল পর্দায় তাঁর মায়া রিয়েল লাইফে আজও বিদ্যমান।
দেখতে দেখতে ৮৫ তে পা দিলেন এই কিংবদন্তী অভিনেতা যার ঝুলিতে আছে ‘আঁখে’, ‘আখরি রাত’, ‘ডোলি’, ‘আরাধনা’, অনুপমা’, ‘আয়ে দিন বাহারকে’, ‘মঝলি দিদি’, ‘শিকার’, ‘মেরে হমদম মেরে দোস্ত’, ‘শরাফত’, ‘গুড্ডি’, ‘সীতা অউর গীতা’, ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’, ‘দোস্ত’, ‘চুপকে চুপকে’ ও ‘শোলে’ এর মতন শতাধিক হিন্দি সিনেমা। পর্দায় যেমন সুপুরুষ, সুদর্শন ও প্রেমিক মানুষ ছিলেন বাস্তবেও ততটাই প্রেমিক মানুষ ছিলেন ধরম সিং।
খুব কম বয়সে ধর্মেন্দ্র মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে করেন প্রকাশ কউরকে। ঘরে আসে সানি ও ববি। এরপর দুটি কন্যা সন্তানও আসে ধর্মেন্দ্র-প্রকাশের জীবনে।
যখন ক্যারিয়ার মধ্যগগণে ঠিক তখনই প্রেমে বিভোর হয়ে যান বলিউডের ‘গ্রীক গড’। ‘ড্রিম গার্ল’ হেমা মালিনীর প্রেমে হাবুডুবু খেতেন তখন তিনি। হেমা মালির কথায় ‘ম্যায় জাঠ জমলা পাগলা দিওয়ানা’ গানে ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে ডুয়েট নাচ করার সময় একে অপরের প্রেমে পড়েন। সেই থেকে শুরু নতুন প্রেম কাহিনীর। প্রায় ৫ বছর ধরে প্রেম পর্ব চালিয়ে যান এই দুই জুটি। রিয়েল লাইফের প্রেম ছাড়াও এখনো পর্যন্ত পর্দার বীরু আর বাসন্তী এক সঙ্গে ৪২টি ছবিতে কাজ করেছেন। যেমন হিট ছিল তাঁদের অনস্ক্রিন রোম্যান্সের ঝলক ঠিক ততটাই হিট ছিল ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনি।
সেইসময় হেমার ক্রেজ কিছু কম ছিল না। জিতেন্দ্র ও সঞ্জীব কুমারও হেমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু সবার থেকে ছিনিয়ে নেন এই সুদর্শন। আসলে হেমার পরিবারের লোকেরা চেয়েছিলেন জিতেন্দ্রর সঙ্গে হেমা মালিনীর বিয়ে হোক। ‘বেয়ন্ড দ্য ড্রিম গার্ল’ এ হেমা-ধর্মেন্দ্রের প্রেম জানলে আপনাকেও ভাবাবে। জিতেন্দ্রর সঙ্গে হেমার বিয়ে একদম ঠিক। বিয়েবাড়িতে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার হাজির। সই সাবুদ হবে, লোকজন নিমন্ত্রিত ছিল। মাদ্রাজে বসে ছিল বিয়ের সেই রাত। একদম সিনেমার গল্পের মতন ধর্মেন্দ্র মদ্যপ অবস্থায় মাদ্রাজের বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হন। সেই রাতে হেমার বাবা নাকি ধর্মেন্দ্রকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘কেন তুমি আমার মেয়ের জীবন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছ না? তুমি এক জন বিবাহিত পুরুষ, তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে পার না।’’ সেদিন একজন অসহায় প্রেমিকের মতন হেমার বাবার কাছে বিনীত কন্ঠে অনুরোধ জানান ধর্মেন্দ্র। হেমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন শুধু। অনেক অনুনয় বিনয় করার পরে রাজী হন হেমার বাবা। সেদিন হেমা মালিনীর সঙ্গে কথা বলেন। এরপর কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে আসেন হেমা। সকলের কাছে সময় চেয়ে নেন। এদিকে জিতেন্দ্রর পরিবার সেদিন হেমাকে স্পষ্ট জানান যে তাঁদের ছেলে কোন অপশন নয়, হয় আজ বিয়ে হবে নয়তো কোনদিনই নয়। সেদিন হেমা সকলকে ‘না’ উত্তর দিয়েছিলেন। সেদিন ধর্মেন্দ্র জিতে গিয়েছিলেন।
এদিকে প্রকাশ কউর বিবাহ বিচ্ছেদে রাজী ছিলেন না। সেই সময় এই খবর প্রকাশ্যে আসে যে এই দুই হিট জুটি ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ে করেন। যদিও এই কথা তাঁরা কখনো প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি। তবে একথা সত্য, ধর্মেন্দ্র আজও তাঁর প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে পারেননি। কিন্তু আজও ৬ ছেলে মেয়েকে সমান যত্ন করেন। যদিও প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখেননি ধরম সিং। ১৯৭৯ সালের ২১ অগস্ট সামাজিক মতে বিয়ে করেন দু’জনে। সেই থেকে এখনো এই দুই জুটির প্রেম অতুলনীয়।
পদ্মভূষণ বিজয়ী এই প্রবীণ অভিনেতা আজ পা রাখলেন ৮৫ তে। বর্তমান সময়ে চাষাবাদ নিয়েই বেশীরভাগ সময় কাটিয়ে দেন।
Lovely plants 🌱 from a loving friend Santosh. I feel happy at my farm 🍀🍀🍀🍀🍀🍀🍀. Friends, love you for your loving 🥰 response. Jeete raho 👋 pic.twitter.com/OWm92DsFlq
— Dharmendra Deol (@aapkadharam) November 7, 2020