ঈশ্বর বেঁচে থাকার কারণ ছিনিয়ে নিলেন, স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সায়রাবানু
কিছুদিন আগেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে ঈশ্বরের কাছে সকলের মঙ্গল কামনা করেছিলেন। 7 ই জুলাই সকালে মুম্বইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বলিউডের কিংবদন্তী অভিনেতা দিলীপ কুমার (Dilip kumar)। সমস্ত আশঙ্কাকে সত্যি করে ঈশ্বরের কোলে আশ্রয় নিলেন সকলের প্রিয় ‘দিলীপ সাব’।
সায়রা বানু (sairabanu)-র সঙ্গে চুয়ান্ন বছরের দাম্পত্যজীবনে সায়রাবানুকে একা রেখে চলে গেলেন তিনি। 7 ই জুলাই সকালে সাড়ে সাতটা নাগাদ হিন্দুজা হাসপাতালে দিলীপ কুমারের মৃত্যুসংবাদ সায়রাবানুকে জানানো হলে অশীতিপর সায়রা বলেন, ঈশ্বর তাঁর বেঁচে থাকার কারণ ছিনিয়ে নিলেন। দিলীপ সাবের জীবনের সুখ-দুঃখে সত্যিকারের সাথী ছিলেন সায়রাবানু। দিলীপ কুমারের জীবনের প্রথম প্রেম মধুবালা (Madhubala)-র সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পর দিলীপ কুমার আর কোনো নারীকে নিজের জীবনে সামিল করতে চাননি। দিলীপের জীবনের সেই সময়ের সাক্ষী ছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা ওমপ্রকাশ (omprakash)। তিনিও আজ পৃথিবীতে নেই।
View this post on Instagram
কেরিয়ারের প্রতি সমস্ত মনোযোগ দিয়ে দেওয়া দিলীপ কুমারের জীবনে একাধিক অভিনেত্রী এলেও তিনি সবার থেকে দূরে থাকতে চেয়েছেন। সুপারস্টার হিসাবে দিলীপ কুমারের আলোকে যখন ভাসছে বলিউড, তখন অত্যন্ত ছটফটে বালিকা হিসাবে বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ সায়রাবানুর। অসাধারণ সুন্দরী সায়রাবানুর মা-ও ছিলেন নামী অভিনেত্রী। ফলে সায়রাবানুর দিকে পুরুষরা পতঙ্গের মতো আকৃষ্ট হলেও তাঁকে প্রেম নিবেদন করার সাহস কারোর ছিল না। অপরদিকে মাত্র বারো বছর বয়স থেকে দিলীপ কুমারের ফ্যান সায়রা ক্রমশ দিলীপ কুমারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছিলেন। সায়রাবানুকে দিলীপ কুমার প্রথমদিকে পছন্দ করতেন না। তাঁর শিশুসুলভ স্বভাব সহ্য হত না দিলীপ সাবের। কিন্তু সায়রা ছিলেন নাছোড়বান্দা। সায়রাবানুর মা-ও মানতে পারছিলেন না সায়রাবানুর থেকে বয়সে অনেকটাই বড় দিলীপ কুমারের প্রতি সায়রাবানুর একতরফা প্রেম। কিন্তু একসময় সেই একতরফা প্রেম দিলীপ কুমারের জীবনকেও সমৃদ্ধ করেছিল।
1966 সালে মাত্র বাইশ বছর বয়সে সায়রাবানু বিয়ে করেন 44 বছর বয়সী দিলীপ কুমারকে। তাঁদের দাম্পত্যের স্থায়ীত্ব নিয়ে সেদিন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। দিলীপ-সায়রার দাম্পত্যে একসময় ঢুকে পড়েছিলেন সমাজকর্মী আসমা রেহমান (asma Rehman)। সুযোগসন্ধানী আসমা দিলীপ কুমারকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিলেন। এই কাজে আসমার স্বামীর মদত ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে আইনের সাহায্যে দিলীপ কুমার এই ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন সায়রাবানুর কাছে। সায়রা জানতেন দিলীপ ফিরবেন তাঁর কাছেই। সায়রা তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন। এরপর বার্ধক্যের কারণে দিলীপ কুমারের নানান শারীরিক সমস্যায় সায়রাই ছিলেন তাঁর সঙ্গিনী। বহু বছর ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন দিলীপ। অক্লান্ত সায়রা তাঁকে নিয়ে বারবার ছুটেছেন হাসপাতালে। দিলীপকে সেবা করে সুস্থ করে তুলেছেন। সায়রাবানু ছিলেন দিলীপ কুমারের অক্সিজেন।
View this post on Instagram
দিলীপ কুমারের মিথ্যা মৃত্যুসংবাদ রটনায় ক্ষুব্ধ হতেন সায়রা। কিন্তু 7 ই জুলাই সকালে সেই মিথ্যাটাই সত্যি করে দিলীপ কুমার চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মুম্বইয়ের জুহু কবরস্থানে বিকাল পাঁচটায় দিলীপ কুমারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হল। সায়রাবানুর সঙ্গে দেখা করেছেন শাহরুখ খান (shahrukh khan), অনিল কাপুর (anil kapoor), ধর্মেন্দ্র (Dharmendra) প্রমুখ। দিলীপ কুমারের আত্মার শান্তি কামনা করে ভরে গেছে সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু সায়রাবানুকে কিছুই স্পর্শ করছে না। বড্ড একা হয়ে গেলেন সায়রাবানু। 7 ই জুলাই বিকাল পাঁচটায় বলিউডের সূর্যাস্তের সাথেই সায়রাবানু রয়ে গেলেন একরাশ স্মৃতি নিয়ে।