Hoop Meet

একসঙ্গে একাধিক কন্ঠে কথা বলে তাক লাগানো কণ্ঠশিল্পী সমাপন মিশ্রের Exclusive Interview

জন্মাষ্টমীর দিন পড়ন্ত বিকেলে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আমাদের সংবাদ প্রতিনিধি কৌশিক পোল্ল্যে যোগাযোগ করেন সম্প্রতি নেটদুনিয়ায় আলোড়ন তুলে দেওয়া কণ্ঠশিল্পী সমাপন মিশ্রের সঙ্গে। আলাপচারিতায় তার একটি স্বল্প সময়ের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় ‘Hoophaap’ এর পক্ষ থেকে-»

প্রথমেই আপনার নিজের সম্বন্ধে যদি দু চার কথা বলেন

-নিজের সম্পর্কে বলতেই বর্তমানে আমি একজন শিক্ষার্থী আমি স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছি রবীন্দ্র ভারতী ইউনিভার্সিটি থেকে। এবং পাশাপাশি competitive exam এর প্রস্তুতি নিচ্ছি।

বাড়িতে কে কে রয়েছে?

– আসলে আমাদের যৌথ পরিবার, কিন্তু বাবা কাজের সূত্রে মসলন্দপুর থেকে বিরাটিতে বাড়ি করেন। এখানে আমার মা বাবা আমার দাদা এবং ঠাকুমা দাদু রয়েছেন। কিন্তু জ্যাঠা জেঠি ভাই বোন সকলের সঙ্গেই আমরা Virtually Connected বাবার চাকরির কারণে।

বন্ধুদের সঙ্গে সমাপন

আপনি যে একাধিক কন্ঠে কথা বলেন এই অভিনব চেষ্টার শুরু কবে থেকে?

-একেবারে গোড়া থেকে বলতে হবে বিষয়টা, ছোট থেকে একা একাই আমার বড় হয়ে ওঠা, নিজের সঙ্গে কথা বলা। গানের প্রতি আমার বিশেষ ঝোঁক ছিল। আমার মামারবাড়ির ইটের পাঁজায় পাঁজায় সংস্কৃতি, দাদু ওস্তাদ কেরামত উল্লাহ খান সাহেবের ছাত্র ছিলেন। দাদুর পাঁচ সন্তান, মা সবার বড়। আমার মায়ের থেকেই গানের প্রতি যে ভালোবাসা এবং ঝোঁক তৈরি হয়। প্রথম জীবনে মায়ের কাছেই গানের হাতেখড়ি, পরবর্তীতে বিশ্বজিৎ দা নামক একজন স্যারের কাছে আমি শিখেছি। থার্ড ইয়ার পর্যন্ত পরীক্ষা দেওয়ার পর পড়াশোনার চাপে গানটা আর কন্টিনিউ করা হয়নি। বয়সন্ধিকালে গানের চড়ায় উঠতে আমার খুব সমস্যা হত এবং সেখান থেকেই আমি নিজের বেশকিছু ভিন্ন গলার স্বর আবিষ্কার করি। এরপরই মাথায় এলো কেন আমি দ্বৈত কন্ঠে গান করতে পারবোনা? এরপর কথাও বলতে শুরু করি এবং তখন থেকেই আমি বুঝতে পারি। এরপর বিভিন্ন কন্ঠে আমি কথা বলতে শুরু করি।‌ আমি ভীষণ রেডিও শুনতাম এবং সেটা আমায় আকর্ষণ করতো। এরপর থেকেই শুরু হয় দ্বৈতকণ্ঠে ফোনে রেকর্ডিং করা। সেগুলো মাকে শোনাতাম, দাদাকে শোনাতাম, পরিবারের অন্যান্য সবাই কেও শোনালাম, তারা প্রত্যেকে ভীষণ অ্যাপ্রিশিয়েট করল। তারাই আমাকে এটা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবতে বলে।

তারপর?

– তখন থেকেই আর.জে হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছেটা আমার মনে একটু একটু করে দানা বাঁধতে শুরু করে। সকলেই পছন্দ করতো তো সেখান থেকে আমার সূত্রপাত। সুমনা দি এবং সৌমি দি, আমার এই দুই দিদি আমাকে ভীষণ ভাবে সাহায্য করেন। তাদের পরামর্শেই রেডিও জগতের সঙ্গে যুক্ত ডঃ অমর্ত্য সাহার সঙ্গে পরিচয় হয়। উনি নিজের ফ্রেন্ডস এফএম এর জকি ছিলেন। ভদ্রলোক অত্যন্ত ভালো, আমাকে অনেক স্নেহ করেন। আমার সব সময় গাইড করেছেন প্রথম থেকে। ওনাকে আমার স্বপ্নের বিষয়ে পুরোটা জানানোর পর ওরা নিজের প্রোডাকশন হাউজের একটি ওয়ার্কশপ আমায় অ্যাটেন্ড করতে বলেন। অ্যামোস ইনস্টিটিউশন অফ টেলিভিশন প্রোডাকশন (AITP) এর সেই ওয়ার্কসপে আমি যাই। সেখানেই আর আর.জে দীপ (98.3) এর সঙ্গে পরিচয় করার সুযোগ হয়। ক্লাস নেওয়ার পর উনি সকলকে একটা প্যাসেজ পড়তে দেন। সেখানেই বিভিন্ন কন্ঠে উইদাউট স্ক্রিপ্ট আমি ছোট্ট একটি উপস্থাপন করি। সেটার পর দীপ স্যার আমাকে খুব অ্যাপ্রিশিয়েট করেন। এর তিন-চার মাস পর উনি আমাকে কন্টাক্ট করেন এবং সানডে সাসপেন্স এর সায়ক আমান এর লেখা গল্প ‘শিশুরা অকারনে কাঁদে’-তে কন্ঠ প্রদানের সুযোগ দেন। সেই সূত্রেই লেখক সায়ক আমানের সঙ্গে পরিচয় হয়ে যায়। ওনার ‘মিডনাইট হরর স্টেশন’ (ইউটিউব চ্যানেল) এ থ্রিলারল্যান্ড এবং বিভা পাবলিকেশন এর যৌথ সহযোগিতায় ‘হীরা-মানিক জ্বলে’ নামক একটি প্রজেক্ট হয়, সেখানেও আমি কন্ঠ প্রদানের সুযোগ পাই। এক্ষেত্রে রণদীপ নন্দী দার অবদানও অনস্বীকার্য। তারপর ওই চ্যানেলেই পবিত্র ঘোষের লেখা ‘টফি’ তেও কণ্ঠ প্রদান করি।

Rj দীপ এবং অমর্ত্য সাহার সঙ্গে সমাপন
পরিবারের সকল সদস্যদের সঙ্গে সমাপন

আমাদের পোর্টাল থেকে ইতিমধ্যেই আপনার যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেটির পিছনের গল্পটা যদি একটু শেয়ার করেন

– মোটামুটি দু-বছর হলো আমার ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেখানে নিজের খেয়াল-খুশি মতোই কনটেন্ট দিতাম। প্রথমদিকে ভিডিও গুলো খুব একটা ভিউজ পেত না এরপর কাছের মানুষদের পরামর্শেই মুখ দেখিয়ে ভিডিও করার সাহস পাই। যেহেতু প্রথমদিকে নিজেকে দেখিয়ে ভিডিও করতাম না সে ক্ষেত্রে অনেকেই বুঝতে পারতেন না। তারপর একদিন ভীষন সাহস করেই নিজের ভিডিও বানাই, এরপর প্রথম ‘পাকা দেখা’ নাটকটি আমি মুখ দেখিয়েই পরিবেশন করি। এ ব্যাপারে জগন্নাথ বসু উর্মিমালা বসু আমার অনুপ্রেরণা। সেখানেই দর্শকদের থেকে বিপুল সাড়া পাই। সেই ভিডিওটিই আমার সর্বপ্রথম ভাইরাল হয়। আমার আগের স্কুলের স্যার অরুনাভ মুখার্জি নিজের টাইমলাইনে ভিডিওটি শেয়ার করেন, আর.জে দীপ স্যার এবং অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ সহ আরো অনেকেই শেয়ার করেন। ভিডিও সূত্রেই আমার আগের স্কুলের স্যার ম্যাডামদের সঙ্গে আমার আবার পরিচয় হয়। ওনারা প্রত্যেকে আমাকে আশীর্বাদ করেন ভালোবাসেন এবং স্নেহ করেন। এটা আমার কাছে একটা বড় প্রাপ্তি।

তারপর কি করলেন?

– এরপর আমার ভাইবোনেরা বলে প্রথম ভিডিও দিয়েই ক্ষান্ত হোস না। এরকম তো অনেকেই ভাইরাল হয় কিন্তু পরবর্তীতে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সে কারণেই ওরা ভিডিও কন্টিনিউ রাখার পরামর্শ দেয় এবং পরবর্তী ভিডিওতে বিভিন্ন কন্ঠে আমার পরিবেশনার দিকটি তুলে ধরতে বলে। তারপরেই রেডিও উপস্থাপনের ভাবনা চিন্তা মাথায় আসে। স্ক্রিপ্ট ছাড়াই সম্পূর্ণ বিষয়টা করি যেটা আমার খুব ভালো লাগে। পরবর্তীতে দেখি সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে মানে যেটা আপনাদের পোর্টাল থেকে নিউজ কভার করা হয়।

দর্শকেরা আপনার ভিডিও দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ, এক্ষেত্রে আপনার প্রতিক্রিয়া ঠিক কি?

– তাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাতে চাই। বড়দের আন্তরিক প্রণাম এবং ছোটদের ভালোবাসা। এ দেশ ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে এবং বহু প্রবাসী বাঙালিরা শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। তারা যেন এভাবেই পাশে থাকেন, সাথে থাকেন আমার। এতো ভালোবাসা পেয়ে আমি সত্যিই সমৃদ্ধ।

আপনার পড়াশোনা এবং কর্মজীবন নিয়ে বিস্তারিত যদি কিছু বলেন

– আমি যেহেতু মাস্টার্স করছি খুব ইচ্ছে রয়েছে পড়াশোনাটা কমপ্লিট করার। এরপর বি.এড করার ইচ্ছে রয়েছে। টিচার হওয়ার একটা ইচ্ছা রয়েছে আমার ভিতরে। আর.জে হওয়ার যে সুপ্ত ইচ্ছা রয়েছে তার পাশাপাশি কম্পিটিটিভ এক্সাম দিচ্ছি। অনেকগুলি দরজাই খোলা রাখছি যাতে ভিত শক্ত থাকে।

তাহলে সে ক্ষেত্রে টিচার না আর.জে কোনটার প্রায়োরিটি আগে?

– (একটু হেসে) সে ভাবে বলতে গেলে তুমি ব্রেনের কথা শুনবে না হৃদয়ের কথা, অবশ্যই আমি বলব হৃদয়ের কথা কারণ সেটা যেহেতু ভালোবাসি। বাবা-মা সহ বাড়ির বাড়ির বেশ কয়েকজন সদস্য যেহেতু টিচার তাই এই পেশাতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে এই আর.জে হওয়ার নতুন ঝোঁক দানা বাঁধতে থাকে।
দুটোরই ইচ্ছে রয়েছে কিন্তু এই মুহূর্তে যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় যদি সেরকম সুযোগ পাই তাহলে অবশ্যই আর.জে হব।

ক্রিয়েটিভ কাজকর্মে পরিবার কতখানি সমর্থন করেছে?

– পরিবার তো আমাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে, বাড়ির প্রত্যেকে।

আর বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন?

– বন্ধুবান্ধবও কিন্তু ভীষণ সাপোর্টিভ। ওদের কাছে রেকর্ডিং পাঠাতাম। ওরা শুনতো এবং ভীষন অ্যাপরিসিয়েট করত। এছাড়াও আমার বিধান নগর কলেজের প্রফেসর সিদ্ধার্থ দে, কেতকী দত্ত ম্যাডাম, তারই আয়ারল্যান্ডের বন্ধু পারমিতা সেনগুপ্ত ম্যাডাম এনাদের অবদান আমার জীবনে স্বর্ণযুগের মতো উজ্জ্বল।

এবছরের বসন্ত উৎসবে আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয় একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন বাইরের কলেজের কিছু ছাত্র ছাত্রী, সেই নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান?

– ব্যাপারটা হচ্ছে কি, এই নেটের দুনিয়ায় যখন কিছু ভাইরাল হয় তার তো একটা খারাপ দিক ভালো দিক থাকে। এখন মানুষ ভাবে কম। একটা কাজ তো করে দিলেই হলো না তার যে কোনোটেশন বা কনসিকোয়েন্স থাকে সেটা আমাকে ভুগতে হবে এটা মানুষ ভাবে কম। হয়তো ব্যাপারটা হচ্ছে যে বা যারা এসব কাজ করেছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে দেখা যাবে তারাও এত গভীরভাবে ভাবেনি। রোদ্দুর রায় ঠিক না ভুল সে বিতর্কে যাব না, কিন্তু উনার প্রেজেন্টেশনটা ঠিক নয়। আমাদের সমাজ এতটাও অ্যাডভান্সড নয় যে উদ্বাহু হয়ে সবটা মেনে নেবে। তো তার যে খারাপ কোনোটেশন সেটা পড়বেই। যার কারণে এই বিষয়টা ওই কম ভাবা স্টুডেন্ট গুলোকে এফেক্ট করেছে।

নিজেকে তিনটি শব্দের মধ্যে বর্ণনা করুন

– ( একটু হেসে) সে ভাবে ভেবে দেখা হয়নি কখনো। আমার বর্তমান পরিস্থিতি দিয়ে বলি তাহলে, একজন শিক্ষার্থী যেটা হয়তো সারা জীবন থেকে যাব। সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগী। আর একটা যদি বলি আমি আমার মতো।

প্রিয় কবি কে এবং কেন?

– আমার প্রিয় কবি অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছোটবেলা থেকেই তাঁর কবিতা পড়েছি, ওনাকে ভীষণ কাছের মানুষ মনে হয়। কেন সেভাবে হয়তো তার কোনো লজিক্যাল এক্সপ্লেনেশন নেই।

সম্প্রতি শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসতে চলেছে এই বিষয়টিকে ঠিক কোন চোখে দেখছেন?

– যখন হঠাৎ করে কোনো পরিবর্তন আসে হয়তো দীর্ঘমেয়াদী তার কোনো ভালো ফল রয়েছে, সে কারণেই ভাবনা চিন্তা করে এরকম নিয়ম ব্যবস্থা আসতে চলেছে। তবে যাদের কাছে পরিবর্তনটা হল তারা একেবারেই পুকুর থেকে সমুদ্রে এসে পড়ল। তবে আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আমি তো এই বিষয়ে খুব হতবাক, আমরা তো সেই শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যাইনি, ফলে জানিনা আগামী দিনে ছাত্র-ছাত্রীদের কি প্রতিক্রিয়া হবে।

whatsapp logo