Hoop Meet

মানুষ নিজের চরিত্র রেখে যাবে, টাকা পয়সার কোনো দাম নেই: ঈশান মিত্র Exclusive Interview

প্রেমে মানুষ অন্ধ হয়, এমন কথা শুনেছেন নিশ্চয়। কিন্তু, এই অন্ধ মানুষও যে তার প্রেমকে চিনে নিতে পারে, তার গন্ধে রন্ধ্রে মিশে যেতে পারে, তা জানা আছে? আজ HoopHaap Portal কথা বলবে সেই মানুষটির সঙ্গে যিনি নব প্রজন্মের এক উদীয়মান শিল্পী। যার কণ্ঠে রয়েছে উন্মাদনা, দরদ, বিস্ময় আর যিনি একেবারেই সহজ মানুষ। তিনি হলেন ঈশান মিত্র। যিনি শুনিয়েছিলেন “তুমি অন্ধ হয়ে যাও, আমায় গন্ধে চিনে নাও”। হ্যাঁ, তরুণ গায়ক ঈশান মিত্র এই মুহূর্তে টলিউডের অন্যতম প্লেব্যাক সিঙ্গার। বাংলা সিনেমা হোক বা ওয়েব সিরিজ সব জায়গায় ঈশান বুঝিয়ে দিয়েছেন “শোনো আমি আবার জন্ম নেব”।

শুধু গান শুনেছি। বিশেষ কিছুই জানি না। ব্যাক্তিগত ভাবে ‘চরিত্রহীন’ সিরিজের গান শুনেই প্রেমে পড়েছি। এছাড়াও ‘ড্রাকুলা স্যার’ সিনেমা দেখার সময় দুটো গান শুনি, মন ছুয়ে ছিল। একজন শ্রোতা হিসেবে বলা যেতে পারে ঈশান মিত্রের গান মন স্পর্শ করেছে। বাংলার শ্রোতাদের জন্য কোন কোন ধরনের গান উপহার দিতে চান?

-আমি যখন গান গাই তখন গানের জন্য আমি গান গাই, গান আমার জন্য তৈরি হয় না। আমি মনে করি যেকোনো গান বা যেমনই গান হোক সেই গানের মধ্যে ঢুকে যাই। যেমন ধরো কোনো রোম্যান্টিক গান এলো বা স্যাড সং এলো আমি সেই জোনে ঢুকে যাই। এবার যদি কোনো আইটেম সং আসে আইটেম সং এর মত গাই। আমি চেষ্টা করবো গানটাকে একশো শতাংশ রেসপেক্ট দিয়ে গাইতে পারি। আমি চেষ্টা করি যেই গান আমার কাছে আসবে আমি তা এমন ভাবে করার চেষ্টা করবো যা সকলের মন ছুঁয়ে যাবে।

ঈশান মিত্রের গানের শুরু কবে থেকে হয়?

-আমার বাবা গান শেখান, যখন বাড়িতে সবাই ক্লাস নিত, অনেক বাইরের ছেলেরা মেয়েরা আসতো গান শিখতে বাবার কাছে, তখন আমি শুধু দেখতাম কি হচ্ছে। পরে ধীরে ধীরে বাবা আমাকে একটু গান সম্পর্কে বোঝাতেন, রেওয়াজ করতেন। তারপর যখন দেখলেন আমি সক্ষম আছি তখন আমি আমার ঘরানা পেলাম। গুরুমা শ্রীমতী কৃষ্ণা গাঙ্গুলীর থেকে আমি আমার ঘরানা পেলাম। এরপর আমি গজল, ক্ল্যাসিক্যাল, ভজন জনারে পা রেখে এগোই। এখনও আমি যখন জামশেদপুর যাই গুরুমার কাছে গিয়ে কাজ শিখি। এখনও ১৬ বছর ধরে আমি এই চর্চায় আছি । এরপর যখন কলকাতায় স্ট্রাগল করা শুরু করলাম তখন এখানে নন্দন বাগচী যিনি আছেন, ওনার কাছে আমি কিছু টেকনিক্যাল গ্রুমিং সব কিছু করলাম, তারপর ধীরে ধীরে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলাম। এছাড়াও আমি মিউজিক প্রোগ্রামিং করি আর এটা আমি নন্দন বাগচীর কাছে শিখেছিলাম।

বাংলার দর্শকদের মধ্যে উন্মাদনা তৈরি করার জন্য কি কি প্ল্যান আছে?

-আমার একটা ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। অনেক দিন আগেই শুরু করেছি। এর মধ্যে নতুন কিছু গান, ভিডিও আমরা আনার চেষ্টা করবো। লাইভ করার সিচুয়েশন নেই, ঠাকুর করুক সব তাড়াতাড়ি নরম্যাল হয়ে যাবে। তবে ঈশান মিত্র লাইভ করার ইচ্ছা আছে। অরিজিন্যাল কম্পোজিশন রাখবো।

সঙ্গীত জগতে কাকে অনুসরণ করতে ইচ্ছা করে?

-যারা আমার সবাই সিনিওর। যার কাছে দেখছি আমি কিছু শিখতে পারছি আমি তাকে অনুসরণ করি। আমার আইডল বা আদর্শ যদি কে জিজ্ঞেস করো তবে আমার বাবা হচ্ছেন আমার আইডল, আমার গুরুমা। যাদের সঙ্গে বসে গল্প করি তাদের থেকেই কিছু শিখি।

এখনও পর্যন্ত যারা যারা আপনার গান শুনেছে তাদের অধিকাংশের মত, আপনার গাইকির মধ্যে অরিজিৎ সিং এর ছোঁয়া আছে। কি মনে হয় আপনার?

-(একটু হেসে) অরিজিৎ দার সঙ্গে আমি পার্সোনালি কাজ করেছি। একটা গান আমি ওনার সঙ্গে অ্যারেঞ্জ করেছি। অরিজিৎ দা গিটার বাজিয়ে ছিল আর আমি ওটার রেকর্ড করেছিলাম। ওর যেই ধরনের ঘরানা আমারও সেই একই ঘরানা। অরিজিৎ দার টোন আর আমার ভয়েজ টোন অনেক আলাদা, তবে আমরা একই ঘরে কাজ করি, আর সেটা হল ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর ঘর, তো আমরা প্লেব্যাকের জন্য যেগুলো ব্যবহার করি তাতে করে আমাদের পিচ অনেক ম্যাচ করে। অরিজিৎ দা খুব টেকনিক্যাল মানুষ, আমি ২০০৯ থেকে এই লাইনে আছি। তাই কিছুটা সেম হতে পারে।

উজাড় করে গান গাওয়ার জন্য প্রেরণা কোথা থেকে পান?

-(একটু ভেবে) আমি একটা জিনিষ খুব চেষ্টা করি, আমি ওই গানের মধ্যে ঢুকে যাই। ধরো, কোনো গান গাইছি যার মধ্যে আমার গার্লফ্রেন্ড মারা গেছে, তখন আমি নিজেকে ওই এক্সপেরিয়েন্স দিই যে সত্যি ও মরে গেছে। আইটেম সং গাওয়ার সময় আমি মাইক নিয়ে নাচতে নাচতে গাই। কেননা, আমার গুরুমা একটা কথা বলেছিল ‘সবসময় গান গাইবে না, গানের জন্য গাইবে’।

শিল্পী ঈশানকে গান ছাড়া গিটার প্লে করতেও দেখা গিয়েছে। এটা কবে থেকে আয়ত্ত করলেন?

-গিটার, হারমোনিয়াম, কিবোর্ড আমি ছোট থেকেই বাজাতাম। পিয়ানো থাকলে পিয়ানো বাজাতে পারি।

রকস্টার হওয়ার ইচ্ছা কি আছে?

-বলতে পারবো না, তবে একজন আর্টিস্ট হওয়ার ইচ্ছা আছে।

ঈশান কতটা মাটির মানুষ?

-ডিফিকাল্ট কোয়েশ্চেন। সত্যি কথা বলতে আমি যেমন, তেমনই থাকতে পছন্দ করি। আমি হওয়াই চটি, হাফপ্যান্ট পরে এদিক ওদিক চলে যাই। আমি একটা জিনিস মনে করি মানুষ নিজের চরিত্র রেখে যাবে, টাকা পয়সার কোনো দাম নেই।

ঈশান মিত্রের আর কি কি প্যাশন আছে গান বা মিউজিক ছাড়া?

-ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স আমার ড্রিম ছিল। দেশের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলাম। পরীক্ষায় বসেছিলাম। কিন্তু ফ্যামিলি ভয় পেয়ে যায়। স্বপ্ন স্যাক্রিফাইস করে গান নিয়ে এগোলাম। এটাও হতে পারে যে আমার ভাগ্যে এটাই ছিল।

আপনি ডেস্টিনি বিশ্বাস করেন।

-হ্যাঁ, করি। আমি গান গাইছি সকলের জন্য।

মুম্বাই থেকে ডাক আসছে?

-বোম্বেতে আমাদের অনেক কাজ চলছে। অমিত ঈশান এর অনেক মিউজিক আছে। গত বছর ও এই বছরে যা হচ্ছে তাতে করে কাজ ধীর গতিতে এগোচ্ছে। আমার বোম্বেতে প্রথম প্লে ব্যাক। অনুষ্কা শর্মার প্রোডাকশন হাউসের ‘পরী’ সিনেমায় আমার প্রথম প্লে ব্যাক। এরপর বিদাই বোমকেশ।

গানের জন্য গলার যত্ন নেওয়া মাস্ট। ঈশান মিত্র গলার জন্য কিভাবে যত্ন নেন?

-রেওয়াজ করে যাচ্ছি। রাত্রে কিছু মেডিসিন নিই গলার জন্য।

পছন্দের খাবার?

-ডাল, ভাত, উপর থেকে একটু ঘি আর আলু পোস্ত। আমি মাছও খাই। আমার বাবা, মা অনেক স্যাক্রিফাইস করেছে একটা সময়, তাই ভাত ডাল যথেষ্ট।

প্রিয় রঙ?

-কালো

ক্যামেরার সামনে আসতে পছন্দ?

-আগে ক্যামেরা দেখলে মনে হয় কেউ বন্দুক নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আসতে আসতে নিজেকে তৈরি করছি।

ঈশ্বরে বিশ্বাস আছে?

-হ্যাঁ আছে।

মেডিটেশন করা হয়?

-রেওয়াজ ই আমার মেডিটেশন

প্রিয় শব্দ?

-মা

গান শোনার আবদার ছিল, আর উনি তা পূরণ করেছেন, ধন্যবাদ ঈশান মিত্র। HoopHaap এর তরফ থেকে অনেক শুভেচ্ছা আর একরাশ ভালোবাসা।