আমি মোটা হই না I am blessed: দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায় Exclusive Interview
সরল, সাদাসিধে, নরম মনের মেয়ে চারু বাস্তব জীবনে কেমন তা জানার জন্য চোখ রাখতেই হবে এই সাক্ষাৎকারে। যার প্রথম হাতেখড়ি হয় ‘কাজললতা’ ধারাবাহিক দিয়ে তারপর ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালী’, তিন নম্বর কাজ হিসেবে তাঁর লিস্টে যোগ হয় ‘টেক্কা রাজা বাদশা’।
এরপর সেই নরম মাটির মেয়ে ‘সাঁঝের বাতি’। আজ কোনো ছদ্মবেশী চারুকে নিয়ে কথা বলব না, আজ বরং জেনে নেব চারুর ভিতর লুকিয়ে থাকা আসল মানুষটিকে। অভিনেত্রী দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়কে আমরা পেয়ে গেছি তাঁর হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও, অভিনেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বেশ খানিকটা আড্ডায় মেতে উঠলেন আমাদের সংবাদ প্রতিনিধি কৌশিক পোল্ল্যে
পর্দায় চারুকে দেখে দর্শকদের খুবই ভালো লাগছে তো এই চারুর মতন একটি চরিত্রে অভিনয় করে আপনার কি রকম লাগছে?
– চারুর মতন একটা চরিত্র আমি প্রথমবারই প্লে করছি। চারুর মতো এই চরিত্র করতে পারাটা খুবই ডিফিকাল্ট। এরকম ইনোসেন্ট একটা মেয়ে, যে একদম অন্য ধরনের এবং সে সবাইকে মানিয়ে চলার চেষ্টা করে, এই যুগে সেরকম মেয়ে খুঁজে পাওয়া খুবই অসম্ভব। আমি নিজেও তো চারুর মত নই কোথাও। তো চারু হল পারফেক্ট, এটি এমন একটি চরিত্র যে সব দিক থেকে পারফেক্ট। সেই রকম একটি চরিত্র করতে আমার ডেফিনিটলি খুব ভালো লাগছে। কারণ আমরা বাস্তব জীবনে যেরকম মানুষ হয়ে থাকি তো আমরা তো সব দিক থেকে পারফেক্ট হই না তো কাল্পনিক একটি চরিত্র সেগুলি করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। চারু বলে এই যেই মেয়েটি সেই চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে আমি ভীষণ খুশি।
‘সাঁঝের বাতি’ সিরিয়াল এ আমরা দেখেছি যে চারু খুব ঠান্ডা স্বভাবের মেয়ে, তো বাস্তবে আপনি কি রকম?
– পুরোটাই অপোজিট। অনস্ক্রিন চারু খুব শান্তশিষ্ট এবং খুব আস্তে কথা বলে আর আমি ঠিক ততটাই ফাস্ট কথা বলি, মানে আমি ভীষনই দুরন্ত, আমি এক জায়গায় কখনো বেশিক্ষণ থাকতে পারিনা। আমার সমস্যা হয়, আমি বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারিনা, দাঁড়িয়ে কাজ করি, ঘোরাফেরা করি। মানে পুরোটাই অপোজিট বলতে পারো। কিছু কিছু সিমিলারিটিজ থেকেই যায়। আর কিছু চরিত্র প্লে করতে করতে সিমিলারিটিজ তৈরিও হয়ে যায়। দেড় বছর ধরে একটা চরিত্র প্লে করতে করতে চারুর কিছু ক্যারেক্টারস্টিক্স আমার মধ্যে চলে এসেছে এবং দেবচন্দ্রিমার কিছু চরিত্র চারুর মধ্যে ফুটিয়ে তুলি যা ওরা কেটে দেয়। আর এটা খুব স্বাভাবিক কারণ দেবচন্দ্রিমা তো উল্টো। মানে চারুরটা আমি নিলে অসুবিধা নেই কিন্তু দেবচন্দ্রিমারটা চারু নিলে অসুবিধা হয়ে যায়।
পর্দার পিছনে যখন কাজ চলে বা শুটিং করতে হয় না অর্থাৎ অন্য কোনো কাজ চলে তখন কি কি খুনসুটি হয়?
– আমি একজন ব্লগার, আমাদের একটা চ্যানেল আছে যখন শুটিং থাকে না, আমরা রিসেন্টলি ইউটিউব করা শুরু করেছি। আগে যখন থাকতো না আমি প্রচুর সিনেমা দেখেছি, ঘুরতে যেতে আমি ভীষণ ভালোবাসি, নতুন জিনিস এক্সপ্লোর করতে ভীষণ পছন্দ করি। মজার ঘটনা বলতে এরকম ঘটনা তো প্রচুর ঘটতে থাকে এবার হঠাৎ করে বললে মনে করাটা খুব ডিফিকাল্ট। যদি মনে পরে আমি তোমাকে বলছি নেক্সট প্রশ্নটা করো।
দ্য কনফিউজড বক্স এর কাজ কি রকম ভাবে এগোচ্ছে?
– আমরা যখন প্রথম শুরু করেছিলাম তখন টু হান্ড্রেড ভিউজও পেতাম না। প্রায় এক বছর হল আমাদের কনফিউজড বক্স। এখন আমরা এক লাখ ভিউজ পাই। ডেফিনেটলি আসতে আসতে অনেকটাই আমরা এগিয়ে গেছি, আই হোপ আমরা 100k সাবস্ক্রাইবার পাবো। আসতে আসতে আমরা খুব ভালো দিকেই এগোচ্ছি।
একদম আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা রইল।
– থ্যাংক ইউ সো মাচ।
প্রিয় মানুষের সঙ্গে লকডাউন এর আগে কোন কোন জায়গায় ঘুরেছেন?
– লকডাউন এর আগে বাইরে কোথাও যাওয়া হয়নি, কলকাতাতেই চারিদিকে ঘুরেছি। তখন শ্যুটিংয়ের প্রচুর প্রেশার ছিল, যা ঘুরেছি মোটামুটি কলকাতাকেন্দ্রিক ঘুরেছি।
এখন অনেকেই ওয়েব সিরিজের দিকে ঝুঁকছে, আপনারও কি ইন ফিউচার এরকম কোন প্ল্যান আছে?
– আমার সব কিছুরই প্ল্যানিং আছে। শুধু মেগা নয় বড়পর্দাতেও কাজ করতে চাই। কারণ ওয়েব আজকের দিনে একটা খুব ভাল মাধ্যম হয়ে গিয়েছে অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে যাওয়ার। আমরা প্রায় সবাই খুব ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছি। থিয়েটারে গিয়ে দেখার থেকে আমরা অনলাইনে কিছু দেখা খুব পছন্দ করছি। যেভাবে সবকিছুই এগোচ্ছে আমিও নরমালি সেভাবে এগিয়ে যেতে চাই। আমি সব প্লাটফর্মে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।
ছোট থেকেই কি রুপোলি পর্দায় আসার ইচ্ছে ছিল?
– ছোট থেকে সিনেমা ডেফিনেটলি দেখতাম ভালো লাগত, আসলে ছোটবেলা থেকেই বাবা মায়েরা যেরকম শেখায় ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে এবং এটা তোমায় করতে হবে, এরকম একটা নরমাল ধারণা ছিল। তারপর আমার হঠাৎ করে মনে হল না এটা আমার ভালো লাগছে না। তখন তো অ্যাক্টিং কি বুঝতাম না, তবে ওই গ্ল্যামারের প্রেমে পড়েই আমার ইন্ডাস্ট্রিতে আসা এবং তারপর অভিনয়কে ভালোবেসে এখানে থেকে যাওয়া।
যদি অভিনেত্রী না হতেন তবে দেবচন্দ্রিমাকে আমরা কোন পেশায় দেখতে পেতাম?
– এয়ার হোস্টেস। কারণ আমার বরাবর পছন্দ ওদের ড্রেসকোড পছন্দের। এই ক্লাসটা আমার খুব পছন্দের ছিল। মানে, হয় মডেলিং করব নয় এয়ার হোস্টেস হব বা ফ্যাশন ডিজাইনিং করব।
আমাদের প্রত্যেকের লাইফেই নানারকম স্ট্রাগল থাকে , আমরা অনেকেই স্ট্রাগল করে জীবনে এগিয়ে যাই, বিশেষ করে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই বিভিন্ন রকম স্ট্রাগল করেন, আপনি কি তথাকথিত কোন স্ট্রাগলের মুখোমুখি হয়েছেন?
– লাইফটাই তো স্ট্রাগল, সব সময় স্ট্রাগল চলতে থাকে। ডেফিনেটলি ডে ওয়ানে যখন আমি কাজ শুরু করেছিলাম তখন খুব কম স্যালারিতে কাজ করতে হয়েছে, এখানে কলকাতায় আমার বাড়ি নয়, তো এখানে আমি রেন্টে থাকতাম তখন। সবটাই ম্যানেজ করতে হত এবং যেটা ভীষণই কষ্টের। সেখান থেকে এখানে আসা সত্যি আমি ভীষণ লাকি ফিল করি।
‘কাজললতা’ করার পরপরই ওই সময়েই তো আপনি প্রেমে পড়েন, একদিকে ইন্ডাস্ট্রিতে সবে সবে ক্যারিয়ার গড়ে উঠছে আর তার পাশাপাশি প্রেম, তো এই দুইয়ের মধ্যে কখনো সংঘাত হয়নি?
– আমি দুটো জায়গা খুবই আলাদা করে রাখি, প্রফেশনাল জায়গা এবং পার্সোনাল জায়গা। বরাবর সেটাই করতাম। মানে আমি কাজের জায়গায় কোনদিনই প্রেম করা পছন্দ করিনি বা প্রেম করার সময় কাজ টেনে আনব এটাও পছন্দ করিনি। ডেফিনেটলি আমাদের প্রেমটা কাজললতা থেকেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু আমরা যতক্ষণ কাজ করতাম, ঐরকম ভাবে ক্যালকুলেট করে তো প্রেম করবো বা করবো না হয়না, বাট স্ক্রিপ্ট পেলে আমরা সবাই আগে কাজে ফোকাস করতাম তারপর কাজ হয়ে গেল তো গল্প হয়ে থাকতো। তখন যেহেতু খুবই নতুন ছিলাম আমি কাজটাকেই ফার্স্ট প্রায়োরিটি দিয়েছিলাম। এখনো কাজই আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি। আর আমি যেহেতু কোনদিন গুলিয়ে ফেলিনি তাই আমার অসুবিধা হয়নি। আর আমি সবটা খুব ভালো ভাবে ম্যানেজ করতে পারি। এবং এটায় আমি ব্লেসড।
নেপোটিজমের জন্য কখনো কোনো কাজ হাতছাড়া হয়েছে? বা এই শব্দগুলোতে কি আপনি বিশ্বাসী?
– এটা বলা খুব টাফ। আমার সাথে এখনো পর্যন্ত এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার তো মনে পড়ছে না, হয়তো ভুল করেছি তার জন্য বাদ গিয়েছি, সেটা হতেই পারে কারণ যারা প্রডিউসার আছেন তারা তো অবশ্যই ভালোটাই খুঁজবেন। মানে আমার এখানে কোন ইমোশান কাজ করে না। আমার থেকে বেটার কেউ হতেই পারে, তারা যদি তাকে নেয় আমি তো সেটাকে নেপোটিজম বলতে পারবোনা। আমার সঙ্গে এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি যার জন্য আমি এই ওয়ার্ডগুলো ঠিকমতো ডেসক্রাইব করতে পারবোনা।
২০২০ তে নতুন কী কী শিখেছেন বিশেষ করে লকডাউন এর সময়টাতে?
– আমি যেহেতু ব্যাক-টু-ব্যাক কাজ করছি তাই বাড়ি যাওয়া প্রায় হয় না। এই লকডাউনে আমি আমার ফ্যামিলির সঙ্গে পুরোটাই কাটিয়েছি। নিজেকে নতুনভাবে এক্সপ্লোর করেছি আমি। যে কাজগুলো পারতামনা সেই কাজ নতুন করে করার চেষ্টা করেছি, ইউটিউব দেখে রান্না করেছি, ড্রয়িং করেছি। মানে এমন কিছু কিছু কাজ যেগুলো আমি কোনদিন করবো বলে ভাবিনি সেই কাজগুলো করেছি। এমনকি বাড়ি থেকে শুটিং করেছি। লকডাউন যেমন সবাইকে খুব বোর করেছে যেমন অনেক কিছু শিখিয়েছে, অনেক কিছু এক্সপ্লোর করতে শিখিয়েছে, এমনকি শিক্ষা দিয়েছে আমাদের টাকা পয়সা গুছিয়ে রাখা কতটা উচিত।
স্টার জলসায় এই মুহূর্তে একগুচ্ছ নতুন ধারাবাহিক আসছে তো সে ক্ষেত্রে দর্শকদের একটাই প্রশ্ন তাহলে কি সাঁঝের বাতি শেষ হচ্ছে শীঘ্রই?
– না, সাঁঝের বাতি শেষ হচ্ছে বলে এরকম কোনো খবর আমার কাছে নেই। ‘সাঁঝের বাতি’তে এই মুহূর্তে খুব স্ট্রং স্টোরি লাইন তৈরি হয়েছে, যেটা ‘সাঁঝের বাতির’ দর্শক দেখলে বুঝতে পারবেন।
এই মুহূর্তে সত্যিই একটা জমজমাট প্লট চলছে। যাইহোক আরেকটা বিষয় হলো, ২০২০-র মতো একটা ভয়ঙ্কর বছর গেল, সবাই কম বেশি প্রবলেম ফেস করেছে, এরকম একটা বছর শেষ করার পর ২০২১ এ কি প্রত্যাশা রয়েছে?
– ২০২০ আমাদের সকলেরই কমবেশি খুব খারাপ গেছে। আমরা হোম আইসোলেশনে ছিলাম। তো সবকিছু মিলিয়ে আমিও আমার খুব কাছের মানুষদের হারিয়েছি তো আমি কোনদিনও চাইবো না এই ২০২০-র মত একটা বছর আর কোনদিনও ভবিষ্যতে ফিরে আসুক। আমি জানিনা কোভিড কবে যাবে বা ভ্যাক্সিনেশন কবে শুরু হবে তো ২০২১ যাতে খুব ভালো ভাবে কাটাতে পারি, আমি আশা করি যাতে সবাই সুস্থ ভাবে থাকে এবং কারোর কোনো কাজ চলে না যাক আবার আমরা বাড়িতে বসে না যাই। আমি ২০২১ এ সবাইকে আমার তরফ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সবার ২০২১ খুব ভালো কাটুক।
এখন শীতের আমেজ চলছে, ডায়েট ভেঙ্গে কখনো পিঠেপুলি খাওয়া হয়?
আমি বরাবর কখনো ডায়েট করতে অভ্যস্ত নই। আমি মোটা হই না I am blessed. আমি সত্যিই জীবনে কোনদিনও ডায়েট করিনি। আমার খাওয়ার কোনো বাছবিচার নেই। রেস্টুরেন্টের খাবার ছাড়াও আমি বাড়ির সব রকম খাবার খেতে পছন্দ করি। আমি বেসিক্যালি পেটুক এবং আমি খেতে পছন্দ করি। বিশেষ করে আইসক্রিম এবং মিষ্টি আমার ভীষণ পছন্দ। মকর সংক্রান্তিতে আমাদের বাড়িতে অনুষ্ঠান হয় তো সব রকমের পিঠা ছোটবেলা থেকে খেয়ে আসছি। এখনো আমি খাই। তবে ইন ফিউচার হয়তো আমাকে ডায়েট করতে হতে পারে। কারণ এখন যা অত্যাচার করছি ভগবান বেশিদিন তা সহ্য করবে না।
এবারে আসছি একটু ব্যক্তিগত প্রশ্নে, টলিউডে একটা বিয়ের মরশুম চলছে, ২০২১ এ অনেকেই বিয়ের প্ল্যান করছেন, আপনার কি কোনো প্ল্যান চলছে?
– ২০২১ এ আমার বয়সটাও একুশে আটকে আছে। খুবই ছোট আমি। তো আমার মনে হয় বিয়েটা এত তাড়াতাড়ি করা ঠিক নয়। যারা যারা বিয়ে করছে তারা ঠিক টাইমে বিয়ে করছেন। তো আমি আর একটু সময় নিই, আমার ক্যারিয়ার গোছাতে চাই, আরো অনেক কাজ করতে চাই তখন ডেফিনেটলি বিয়ে নিয়ে ভাববো। বিয়ে তো আছেই জীবনে, এটা একটা পার্ট অফ লাইফ। করতে তো হবেই একটা সময়, তাও ধরে নাও এখনো দশ বছর দেরি আছে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে আপনার মূল্যবান সময় শেয়ার করার জন্য, নতুন বছরের সমস্ত শুভ কামনা রইল Hoophaap এর টিমের পক্ষ থেকে।
– ধন্যবাদ আপনাকেও