ঠাকুরবাড়ীর প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে হয়েছিলেন গোয়ালিয়রের পতৌদি প্যালেসের বেগম। দেখতে দেখতে ছিয়াত্তরটি বসন্ত পার করে সাতাত্তর বছর বয়সে পা দিলেন শর্মিলা ঠাকুর (Sharmila Tagore)। শুরুটা হয়েছিল কিংবদন্তী সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray)-র হাত ধরে। ‘অপুর সংসার’ ফিল্মে যখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee)-র বিপরীতে অভিনয় করলেন, তখন তিনি পঞ্চদশী। বিজয়া রায় (Bijaya Ray) তাঁর বিয়ের বেনারসী ও অলঙ্কারে সাজিয়েছিলেন অপর্ণারূপী শর্মিলাকে। হিট করল ‘অপুর সংসার’। কিন্তু পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুরবাড়ীর অন্দরে একই সঙ্গে ঘটল আপত্তি ও বিপ্লব। শর্মিলা অভিনেত্রী হতে চাইলেন। মানতে পারছিলেন তাঁর মা-বাবা। কিন্তু সমর্থন ছিল বোন ঐন্দ্রিলা (Oindrila Tagore)-এর। ‘কাবুলিওয়ালা’ ফিল্মে মিনির চরিত্রে অভিনয় করার পর তিনি আর অভিনয় না করলেও শর্মিলাকে সমর্থন করেছিলেন।
View this post on Instagram
ঐন্দ্রিলার তরফ থেকে একরাশ শুভেচ্ছা নিয়ে মুম্বই পাড়ি দিলেন ঠাকুরবাড়ীর কন্যা। সেখানে তখন সাদা শাড়ি পরা, পার্টিতে কোকা-কোলা খাওয়া নায়িকার যুগ। গালে টোল ফেলা হাসিতে নজর কাড়লেন বঙ্গতনয়া শর্মিলা। অভিনয়ের খাতিরে অল্পবয়সী শর্মিলা অভিনয় করলেন বৃদ্ধার চরিত্রে, ‘আরাধনা’ ফিল্মে। বাংলার আরও এক নামী নায়িকার কাছে প্রথমে রাখা হয়েছিল এই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব। তিনি ফিরিয়ে দিলে অত্যন্ত নিমরাজি পরিচালক ‘আরাধনা’-য় শর্মিলাকে নায়িকার চরিত্রে বাছাই করে সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সুপারহিট হল ‘আরাধনা’। তখন পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুরবাড়ীতেও শুরু হয়েছে শর্মিলা ম্যাজিক।
কিন্তু হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে নামী ফিল্ম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে প্রকাশিত হল শর্মিলার সুইমসুট পরা ছবি। তৎকালীন বলিউডে নায়িকারা সুইমসুট পরার কথা ভাবতে পারতেন না। সেই কাজ ছিল খলনায়িকাদের। কিন্তু সবকিছু নিমেষে বদলে দিলেন শর্মিলা। তিনি তখন স্টার। ফলে সমালোচনা করলেও মেনে নিতে বাধ্য হলেন সবাই। এরপর থেকেই শুরু হল তাঁর ডায়েট নিয়ে চর্চা। বাঙালি মেয়েদের মধ্যে রটে গেল, শর্মিলা নাকি ফিগার ভালো রাখতে কাঁচা পেঁপে খান। ফলে অনেকেই চেষ্টা করলেন, এই ডায়েট ফলো করার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না।
View this post on Instagram
অপরদিকে শর্মিলার প্রেমে তখন হাবুডুবু খাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট টিমের তৎকালীন ক্যাপ্টেন টাইগার পতৌদি (Tiger Pataudi) ওরফে গোয়ালিয়রের নবাব মনসুর আলি খান পতৌদি। শর্মিলাও তাঁকে পছন্দ করেন। একসময় টাইগার শর্মিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। ঠাকুরবাড়ীতে এর আগে অন্য ধর্মের পুরুষকে কেউ বিয়ে করেননি। ফলে আবারও আপত্তি। কিন্তু বরাবরের মতো শর্মিলার জেদের কাছে হার মানতে হল সকলকে। এবারেও সমর্থন করলেন ঐন্দ্রিলা। তিনি নিজের হাতে বিয়ের তত্ত্বে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের সদস্যদের ক্ষীরের পুতুল বানালেন। গোয়ালিয়রের নবাব পরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী ধর্মান্তরিত হয়ে আয়েশা বেগম নাম নিয়ে গোয়ালিয়র প্রাসাদে পা রাখলেন শর্মিলা। নবাব পরিবারে এই প্রথম কোনও হিন্দু কন্যা ও বলিউড তারকা এলেন বেগম হয়ে। ঐতিহ্যবাহী নবাবি বিয়ের পোশাক পরে বাড়ির বৌ হলেন শর্মিলা।
View this post on Instagram
কিন্তু বিয়ের পরেও নিজের অভিনয় ছাড়েননি তিনি। তাঁকে সমর্থন করতেন টাইগার। পরবর্তীকালে টাইগার ও শর্মিলার দুই কন্যাসন্তান সোহা (Soha Ali Khan Pataudi), সাবা (Saba Ali khan Pataudi) ও এক পুত্রসন্তান সইফ (Saif Ali khan)-এর জন্ম হয়। সইফ ও সোহা নামী বলিউড তারকা। কিন্তু সাবা ফ্যাশন ডিজাইনার ও সোশ্যাল ওয়ার্কার। প্রকৃতপক্ষে, শর্মিলা নিয়ম ভাঙেননি, নতুন নিয়ম তৈরি করেছেন। কিংবদন্তী শর্মিলা ঠাকুরের জন্মদিনে ‘হুপহাপ’ (HOOPHAAP)-এর তরফ থেকে রইল একরাশ শ্রদ্ধাপূর্ণ শুভেচ্ছা।
View this post on Instagram