এখনও অবধি কবিতা কৃষ্ণমূর্তি (Kavita Krishnamurti)-র গাওয়া গান ‘হাওয়া হাওয়াই’ ভীষণ বিখ্যাত। এরপরেও অনেকেই ‘হাওয়া হাওয়াই’ গানটি রিক্রিয়েট করেছেন। কিন্তু কবিতার স্থান অটুট রয়েছে। অথচ কবিতা চাননি এই গানটি ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ফিল্মে থাকুক। কারণ গানটি তিনি ভুল গেয়েছিলেন। ‘হাওয়া হাওয়াই’-র কন্ঠদাত্রী সম্পর্কে জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে অনেকগুলি বছর আগে যখন গায়িকা হতে মুম্বইয়ে এসেছিলেন কবিতা।
গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন চোখে নিয়ে মুম্বইয়ের কলেজে অ্যাডমিশন নিয়েছিলেন কবিতা। তখন তাঁর নাম কবিতা নয়, সারদা (Sharda)। কলেজের ফাংশনে ‘যাইয়ে আপ কাঁহা যায়েঙ্গে’ গেয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (Hemanta Mukhopadhyay)-এর চোখে পড়ে গিয়েছিলেন কবিতা। কিংবদন্তী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মুম্বইয়ে পরিচিত ছিলেন হেমন্ত কুমার নামে। তিনি সারদাকে প্রস্তাব দেন, তাঁর সাথে স্টেজ শোয়ে গান গাওয়ার। সারদা হেমন্ত কুমারের সঙ্গে স্টেজ শো করতে শুরু করলেন। কিন্তু তিনি যখন স্টেজে আসতেন, তখন সকলে তাঁকে ‘তিতলি উড়ি’ গানের জন্য অনুরোধ করতেন। কারণ এই গানটি গেয়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত শিল্পী সারদা রঞ্জন আয়েঙ্গার (Sharda Ranjan Ayengar)। ফলে একই নামের জন্য সারদাকে সবাই সেই সঙ্গীতশিল্পী ভাবতে শুরু করেছিলেন।
View this post on Instagram
এই কারণে প্রত্যেক অনুষ্ঠানে সারদাকে বলতে হত, তিনি নামী সঙ্গীশিল্পী সারদা নন। তিনি একজন কলেজ ছাত্রী। এই সমস্যা সমাধানের পথ বার করলেন হেমন্ত। তিনি সারদাকে নিজের নাম পরিবর্তন করতে বললেন। সারদা নিজের নতুন নাম রাখলেন কবিতা। আজও কবিতা মনে করেন, এই নামটি তাঁর সৌভাগ্যসূচক। নাম পরিবর্তনের পরেই হেমন্তের ব্যবস্থাপনায় লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar)-এর সাথে বাংলা গান ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে’ গাওয়ার সুযোগ পান কবিতা। কিন্তু কবিতা ডাবিং আর্টিস্ট হিসাবে গানটি গাইতেন। পরে ফাইনাল অ্যালবামের জন্য গানটি গাইতেন কোনো নামী শিল্পী। কিন্তু প্রতিভা কখনও চাপা থাকে না। ফলে সুযোগ এসেই গেল। লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলালের সুরে ‘হাওয়া হাওয়াই’ গাইলেন কবিতা।
1987 সালে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ফিল্মের জন্য তৈরি হয়েছিল ‘হাওয়া হাওয়াই’ গানটি। ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’-র মতো বড় প্রজেক্টে এই গানটি গাওয়ার কথা ছিল আশা ভোঁসলে (Asha Bhonsle)। সেই সময় লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলালের কাছে ডাবিং আর্টিস্ট হিসাবে কাজ করতেন কবিতা। জাভেদ আখতার (Javed Akhtar)-এর নির্দেশ অনুযায়ী কবিতা গান লিখলেন। কিন্তু গানের শুরু দিকে ভাষাগুলি শুনে নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলেন কবিতা। পরের দিন রিহার্সালের সময় মিউজিশিয়ান, কোরাস শিল্পীরা ও কবিতা নিজে গানটি গাইতে গিয়ে হেসে ফেলেছিলেন। এই ঘটনায় অত্যন্ত রেগে গিয়ে পেয়ারেলাল সকলকে বকেছিলেন। এরপর গানটি এক টেকেই রেকর্ড করেন কবিতা। ছয়মাস পরে লক্ষীকান্ত ফোন করে কবিতাকে জানালেন, তাঁর কন্ঠে গাওয়া গানটি ফিল্মের জন্য মনোনীত হয়েছে। কিন্তু কবিতা বলেন, গানটি আবারও তাঁকে গাইতে হবে। কারণ তিনি ভুল গান গেয়েছেন। গানের একটি বিশেষ লাইনে ‘জানু’-র পরিবর্তে ‘জিনু’ গেয়েছিলেন কবিতা। কিন্তু লক্ষীকান্ত তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, এই গানটির ভাষা অনুসারে এটিকে শ্রোতারা মজাদার মনে করবেন। সুপারহিট হয়েছিল ‘হাওয়া হাওয়াই’। শুরু হয়েছিল বলিউডে প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসাবে কবিতার যাত্রা।