whatsapp channel

আজকের গল্প: স্কুল প্রেম « অর্পিতা বসু

প্রত্যেকের জীবনে কোনো না কোনো দিন প্রেম আসে। কখনো কলেজে উঠে, তো কখনো অফিস প্রেম আবার কখনো বিয়ের পর ও স্বামীর সাথেই প্রেম। কিন্তু কখনো কখনো স্কুলেও দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের…

Avatar

HoopHaap Digital Media

Advertisements
Advertisements

প্রত্যেকের জীবনে কোনো না কোনো দিন প্রেম আসে। কখনো কলেজে উঠে, তো কখনো অফিস প্রেম আবার কখনো বিয়ের পর ও স্বামীর সাথেই প্রেম। কিন্তু কখনো কখনো স্কুলেও দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের সাক্ষী থাকে অনেকেই। আজ আমি এরকম একটি দুষ্টু মিষ্টি স্কুল প্রেমের কথা বলবো। এই গল্পে নায়ক নায়িকা হলেন তনিমা ও আকাশ।

Advertisements

তনিমা কলকাতার হোলি চাইল্ড গার্লস নামক একটি কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা করতো। আর আকাশ কলকাতার হেয়ার স্কুলে পড়াশোনা করতো। দুজনে আলাদা স্কুলে পড়াশোনা করলেও এক টিউশনে করতো। আকাশ তনিমার থেকে ১ বছরের মতো বড় ছিল। কিন্তু দুজনে সমবয়সীর মতো মিশতো। তনিমা বেশ ডানপিঠে আর চঞ্চল আর আকাশ শান্ত ও দৃঢ প্রকৃতির স্বভাবের ছিল। এদের প্রতিদিন রাজীব স্যারের টিউশনে দেখা হতো। ক্লাস ৪ থেকে তনিমা আকাশকে চিনতো। আর এদের দেখা হলেই কোনো না কোনো কিছু নিয়ে ঝগড়া হতো। টিউশন ক্লাসে সবাই তনিমাকে খুব ভালোবাসতো বলে আকাশের খুব হিংসে হতো। তনিমার ও একদম পছন্দ ছিল না আকাশকে। আকাশ পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। স্কুলে প্রত্যেকবার রেজাল্টে প্রথম থেকে দ্বিতীয় হয়নি। আর তনিমা কম বেশী ভালোই রেজাল্ট করতো।তাও তনিমা টিউশন স্যারের ও স্যারের বৌ এর খুব প্রিয় পাত্রী ছিল।

Advertisements

এই করতে করতে তিন বছর অতিক্রম হলো। একদিন তনিমার কাকার বিয়ে ছিল বেশ কদিন পড়তে আসেনি আর সেই সময় আকাশ তনিমাকে প্রথম মিস করে। কিন্তু কেন মিস করে আকাশ বুঝতেও পারেনা। ১০ দিন পর আবার তনিমা রাজীব স্যারের কাছে পড়তে যায় কিন্তু সেদিন পড়তে যায় অন্যরকম ভাবে। তনিমা মেয়ে হলেও ছিল টম বয়। সেদিন প্রথম মেয়েদের মতো সেজে আর পায়ে নুপুর পড়ে পড়তে যায়। কাকার বিয়ের জন্য পায়ে নুপুর পড়েছিল তনিমা। তনিমার মা সেই সময় মেয়েকে জোড় করে মেয়েদের সাজে সাজিয়েছিল। আর সেই লালিত্য থেকে যায় তনিমার মুখে। আর সেদিন প্রথম আকাশ তনিমার প্রেমে পড়ে। তনিমা সেদিন নুপুর পড়ে রাজীব স্যারের বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছিল। আর এই আওয়াজ আকাশের বেশ লাগে। এরপর আকাশ কোনোদিন তনিমার সাথে ঝগড়া করেনি। এইসব দেখে বড্ডো অবাক লাগে তনিমার। এরপর তনিমার কাকার বিয়ে মিটটে পুরোনো সাজে ফিরে আসে তখন আকাশ তনিমাকে বলে ওঠে, তনিমা জানিস তোকে মেয়ে সাজে বেশি ভালো লাগে বিশেষ করে নুপূর পড়লে। অবশ্য তনিমা কিছু বলেনি কিন্তু এরপর থেকে মাঝে মাঝে তনিমা ও নুপূর পড়ে টিউশান পড়তে যেতো।

Advertisements

আস্তে আস্তে আকাশ আর তনিমার মধ্যে বন্ধুত্ব শুরু হয়। আকাশ অংকে খুব ভালো ছিল। একদিন তনিমা একটা বীজগণিতের অংক কিছুতেই বুঝতে পারছিল না। তখন রাজীব একটু ব্যস্ত ছিল অন্যদের একটা পড়ানো নিয়ে। তখন তনিমা আকাশকে গিয়ে সেই অঙ্কটা দেখিয়ে দিতে। সেদিন আকাশের খুব ভালো লাগে। আকাশের বেস্ট ফ্রেন্ড অনুসুয়া বুঝতে পারে আকাশ তনিমাকে খুব পছন্দ করে। আর অনুসুয়া তনিমার সাথে এক স্কুলে পড়তো। অনুসুয়াকে আকাশ স্বীকার করেছিল তনিমার প্রতি ভালো লাগা। অনুসুয়া আর তনিমা একসাথে স্কুল গাড়িতে ফিরতো। একদিন অনুসুয়া তনিমাকে আকাশের ভালো লাগার কথা বলে। এই কথা শুনতে তনিমার খুব রাগ হয় আকাশের ওপর তক্ষুনি তনিমা আকাশের পাড়ায় গিয়ে খুব ঝেড়ে আসে। যতই তনিমা রেগে যাক কিন্তু সে ও মনে মনে আকাশের প্রেমের প্রস্তাব মনে ধরেছিল। কিন্তু মায়ের ভয়ে তনিমা নাকোচ করে দেয় সেই প্রেম।

Advertisements

আকাশ তনিমা দেখতে দেখতে আর একটু বড় হয়ে যায়। আকাশ ক্লাস ১০ আর তনিমা ক্লাস ৯। দুজনেই আর রাজীব স্যারের কাছে টিউশান পড়েনা। কিন্তু দুজন দুজনের খবর রাখতো অনুসুয়ার মারফত। তনিমা একজন হিন্দু স্কুলের নাম করা শিক্ষকের কাছে অঙ্ক করতো আর আকাশ সেই টিউশন সেন্টারে পাশের ঘরে ইংরেজী পড়তো। আকাশ প্রতি শুক্রবার ক্লাস করার আগে একবার করে তনিমাকে এক ঝলক দেখে ক্লাসে ঢুকতো। একদিন তনিমার জীবনে নেমে এল এক বিপদ। তনিমার মা অসুস্থ থাকায় সেদিন নিজেই একা পড়তে গিয়েছিল। কিন্তু সেদিন ক্লাসে তনিমাএ আর কোনো সহপাঠী উপস্থিত ছিলনা। তনিমা একাই পড়া শুরু করে আর আকাশ ও ওকে দেখে নিজের ক্লাসে ঢুকে পড়ে। ক্লাসের ৩০ মিনিট যেতে না যেতেই তনিমার সেই শিক্ষক তনিমার সাথে অসভ্যতামি করার চেষ্টা করে। সেদিন কোনোরকমে তনিমা বেরিয়ে আসে ক্লাস থেকে এরপর কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি এসে বাবা মা কে সব বলে। তনিমার বাবা মা আর কোনোদিন ক্লাসে পাঠায় না কিন্তু এই ঘটনায় লোকে কি বলবে বলে প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু এরপর তনিমা খুব ভেঙে পড়ে। তনিমার মা বাবা এসব কথা শুধু অনুসুয়ার বাবা মা কে বলেন। এরপর এইসব আকাশ জানতে পারে। আকাশ চুপ থাকার পাত্র নয়। একদিন তনিমার সেই শিক্ষককে স্কুলে গিয়ে মেরে আসে। সেদিন অনুসুয়ার কাছে এই খবর জানতে পেরে খুব খুশি হয় তনিমা।

আকাশের মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষ দিন আকাশের সব স্কুলের বন্ধুদের বিকেলে ঘুরতে যায়। সেদিন তনিমাকে ডাকে অনুসুয়া। সেদিন কলেজ স্কোয়ারের সকল বন্ধুদের সামনে তনিমাকে প্রপোজ করে আকাশ। আর তনিমা কারোর কথা না ভেবে হ্যা বলে দেয়। এরপর দুজন দুজনের সুখে দুঃখে থাকে আকাশ তনিমা। এদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়। আস্তে তনিমা ও আকাশের সব বন্ধুরা মেনে নেয় এই সম্পর্ক। দেখতে ১৩ বছর কেটে যায়। আকাশ আজ একজন এন.আর.এস হাসপাতালের হার্টের ডাক্তার আর তনিমা একজন সরকারি স্কুলের বাংলা শিক্ষিকা। এবার নিজেদের ১৩ বছরের ভালোবাসাকে পরিবারের সম্মতিতে পরিণাম দিল। ধুমধাম করে বিয়ে হল। এখন দুজনে বেশ জমিয়ে সংসার করছে।

[সমাপ্ত]

গল্প: অর্পিতা বসু
পোস্টার ডিজাইন: কৌশিক ব্যানার্জি

(গল্প কেমন লাগল জানাতে অবশ্যই ভুলবেন না। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন।
***এবার থেকে গল্প পাঠাতে পারেন আপনিও। আপনার লেখা গল্প সরাসরি পাঠিয়ে দিন আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। মৌলিক ও অপ্রকাশিত গল্প সর্বদা গ্রহণযোগ্য হবে। গল্প নির্বাচিত হলে অবশ্যই প্রকাশিত করা হবে প্রতি শনি ও রবিবার।***)

whatsapp logo
Advertisements
Avatar
HoopHaap Digital Media