কিভাবে বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হলো পিঠে পুলি উৎসব! রইল অজানা ইতিহাস
শরৎকালের বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গোৎসব এরপরই আসে বাঙালির অত্যন্ত প্রিয় ঋতু হেমন্ত। হেমন্ত যদিও ঋতুচক্রের তালিকায় খুবই ক্ষণস্থায়ী ঋতু তবুও হেমন্ত আমাদের মনে এক অন্যরকম আনন্দের সৃষ্টি করে পিঠে পুলি, পাটিসাপটা এর মধ্যে দিয়ে। নতুন ধানের গন্ধে চারিদিক মম করে। নিয়ম অনুযায়ী এই নতুন ধান দিয়েই তৈরি হয় পিঠে। শুধু নতুন ধান নয় পিঠে তৈরির আরেকটি উপকরণ হলো নতুন গুড়।
সাধারণত পৌষ মাসের যে শেষের দিন অর্থাৎ মকর সংক্রান্তিতে এই বাঙালির ঘরে ঘরে আনুষ্ঠানিকভাবে পিঠেপুলি খাবার প্রচলন শুরু হয়ে আসছে বহুদিন থেকেই। তবে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিন থেকেও পিঠে পুলি খাওয়ার রীতি রয়েছে। একসময় গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে মা বোনেরা চাল গুঁড়ো করে পিঠে বানাতে ব্যস্ত থাকতো। কংক্রিটের জঙ্গলে শহুরে মেয়েরা চাকরি করতে ব্যস্ত থাকলেও অনেকেই সখে বাড়িতে পিঠে বানায়। বাড়িতে বানানো না হলেও এখন মিষ্টির দোকানগুলি সব রকমের ব্যবস্থা রাখে। এই শহরাঞ্চলের মানুষজনও এই পিঠেপুলির স্বাদ থেকে খুব একটা বঞ্চিত থাকেননা।
পৌষ সংক্রান্তি অথবা পয়লা অঘ্রাণ বাংলার ঘরে ঘরে পিঠেপুলির প্রচলন থাকলেও গোটা শীতকাল জুড়েই বাঙালিরা পিঠে, পুলি উৎসব চালাতে থাকে। বাংলাদেশে নানান রকমের পিঠের প্রচলন আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঝিনুক পিঠা, শিমুল পিঠে, পুলি পিঠে, নকশা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, মালপোয়া পিঠা, চুষি পিঠা সূর্যমুখী পিঠে প্রভৃতি।
পিঠেপুলি, পাটিসাপটার ইতিহাস খুব একটা জানা যায় না, তবে শ্রীরামকৃষ্ণের পঠনশৈলীতে বারবার উঠে এসেছে এই পিঠেপুলির কথা। বর্তমানে আধুনিকারা পিঠেপুলির সংজ্ঞা কে খানিকটা পাল্টে দিয়েছেন তারা পাটিসাপটা বলতে এখন হয়তো বোঝেন প্যানকেক। নারকেলের পুর এর বদলে তারা হয়তো মাঝেমধ্যে ব্যবহার করেন চকলেটের পুর। সমাজ জীবনের মতো পিঠে পুলি পাটিসাপটা কেউ এসেছে নতুনত্বের ছোঁয়া।
তবে এই নতুন ফসল উঠলে তাকে উৎসব হিসেবে গ্রহণ করার ইতিহাস শুধু আমাদের দেশেই নয়। ভারতবর্ষে যেমন গ্রামবাংলায় নবান্ন উৎসব পালিত হয় ঠিক তেমনি দেশ-বিদেশের নতুন ফসল উঠলো সেই ফসল রান্না করার চল রয়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়া যতই লাগুক না কেন পিঠে পুলি, পাটিসাপটা বাঙালির মনের মধ্যে বেঁচে থাকবে। এ কথা স্বীকার করতেই হবে।