পড়াশোনার খরচ চালাতে ডেইলি কিচেন করে প্রতিষ্ঠিত বরানগরের নেহা, তালিকায় নানান রকমের পদ
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা করে দিদিমণি হওয়ার স্বপ্ন ছিল এক কন্যার। আর পাঁচটা মেয়ের জীবন যেমন ভাবে অতিবাহিত হয় সেও ছোটবেলা থেকে ঠিক তেমনই স্কুল-কলেজ কাটিয়ে সাধারণের মতো জীবনযাপন করছিল। স্বপ্ন দেখেছিল মাস্টার ডিগ্রী কমপ্লিট করে বি.এড করবে। সেইমতো এগোচ্ছিল এক-পা এক-পা করে। ২০২০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস এর সময় যখন গোটা পৃথিবী জুড়ে লকডাউন চলছিল। তখন চোখের সামনে দেখেন বাবার আর্থিক অবস্থা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই রকম পরিস্থিতিতে যখন উচ্চশিক্ষার স্বপ্নের কথা তিনি বাড়িতে জানান, তখন স্বাভাবিকভাবেই পরিবারে তৈরি হয় মনোমালিন্য। প্রত্যেক বাবা-মায়েরা চায় তাকে তার সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে বড় করতে কিন্তু সাধ আর সাধ্যের মধ্যে যখন ফারাক অনেকটা হয়ে যাওয়ায় তখন মা বাবাকেও পিছিয়ে আসতে হয়।
এমনই এক ভেঙে যাওয়ার স্বপ্ন থেকে নতুন করে উঠে আবার জেগে উঠেছেন বরানগরের নেহা দত্ত। ২১ বছর বয়সেই জীবন তাকে শিখিয়েছে অনেকখানি। সবদিক ভাবনা-চিন্তা করে মাস্টার্স করার স্বপ্নকে থামিয়ে দিয়ে সেই মাস্টার্স করার পয়সাতেই শুরু করলেন নিজের ব্যবসা। পড়াশোনা করার পাশাপাশি তিনি রান্না করতেও খুব ভালোবাসতেন। সখ আর জীবিকাকে একসঙ্গে মিশিয়ে তিনি শুরু করলেন হোম ডেলিভারির ব্যবসা।
প্রতিদিন নিয়ম করে মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছতে গেলে যে পরিকাঠামোর প্রয়োজন হয় একদম প্রথমে সেসব ভাবতে গিয়েই কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে তার পাশে এসে তার হাত শক্ত করে চেপে ধরেছিলেন তারই ভালোবাসার মনের মানুষটি। পেশায় একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হয়েও সুমিত বাবু নেহাকে বলেছিলেন, “তুই খাবার বানিয়ে দে আমি পৌঁছে দিয়ে আসবো।” সুমিত বাবুর মুখ থেকে বেরোনো এই কয়েকটা কথাই নেহাকে অনেক মনের জোর দিয়েছিল। পরিবার এবং বন্ধুদের কাউকেই তিনি পাশে পাননি।
অবশেষে দুজনে মিলে এই হোম ডেলিভারির ব্যবসা শুরু করেছিলেন ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২০ সাল থেকে। প্রথম দিন শুরু হয়েছিল এক প্লেট খিচুড়ির মাধ্যমে। ক্রমশ বাড়তে থাকে কাস্টমারের তালিকা। বর্তমানে ১০০ জনের ওপর মানুষকে খাবার দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছেন নেহা। পারিবারিক অনুষ্ঠানে নানান রকমের খাবার সাজিয়ে, মানুষকে নিজের হাতের খাবার খাইয়ে আনন্দ দিতে পারেন নেহা। কয়েকদিন আগে তিনি বিয়ের ক্যাটারিংও করেছেন। অবশেষে ছমাসের মধ্যে নিজের একটি ক্যাটারিং সার্ভিস ওপেন করেন। সাধের অনুষ্ঠান, অন্নপ্রাশন,জন্মদিন সমস্ত অনুষ্ঠানে নেহা খাবার সাপ্লাই করে থাকেন।
ছোট্ট হোম ডেলিভারির ব্যবসার নাম দিয়েছেন ‘টেস্টি বং’। উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা, হাওড়া থেকে বালি, উত্তরপাড়া, ব্যারাকপুর সোদপুর, কোন্নগর সমস্ত জায়গাতেই খাবার ডেলিভারি করা হয়। নেহার রান্নাঘরে হারিয়ে যাওয়া মা ঠাকুমার আমলের রেসিপি আপনি খুঁজে পাবেন। খাদ্যতালিকায় থাকে নারকেল চিংড়ি, ছানার ডালনা, তোপসে ফ্রাই, পোস্ত মুরগি, ধোকার ডালনা, চালতার অম্বল আরো কত কি। যারা যোগাযোগ করতে চান তারা অবশ্যই এই ফোন নাম্বার গুলিতে যোগাযোগ করুন-
নেহা দত্ত 7439768644
সুমিত সাহা 7003533813