Hoop SpecialHoop Story

কুসংস্কারের ঊর্ধ্বে গিয়ে মাসিক চলাকালীন ঠাকুরের জন্য ভোগ রান্না করেন মা সারদা

ঋতুস্রাবের সময় মেয়েদের ঘর থেকে বেরোনো বারণ, পুজো করা বারণ, গুরুজনদের খেতে দেওয়া বারণ। মাসের ওই দিনগুলো তারা যেন অস্পৃশ্যের মত এক কোণে পড়ে থাকবে। অন্তত সমাজ তাই শিখিয়েছে। বড় বড় শাস্ত্র পড়ে যারা পন্ডিত হয়েছেন তারাই এমনটা বলেছেন। এসময় মেয়েদের স্পর্শ করাও পাপ। এমন ধ্যান-ধারণা বহুদিন আগে কারের। তবে বর্তমানেও যে সমাজ কিছুটা পাল্টেছে এমনটা বলা যায় না। সমাজ যতই এগিয়ে যাক মেয়েরা যতই চাকরি করুক ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার চেষ্টা করুক মাসের ওই চারটে দিন সমাজের আর পাঁচটা লোক তাদেরকে বুঝিয়ে দেয় যে সে মহিলা। যতই সে চাকরি করে সংসার, অফিস সামলাক না কেন ওই চারটে দিন সে সেই পুরনো ধ্যান-ধারণা নিয়ম মানতে বাধ্য। কিন্তু শুনতে অবাক লাগে এই সমস্ত নিয়মের উল্টো পথে হেঁটেছিলেন সারদা দেবী। সেই সময় দাঁড়িয়ে এই কাজটি করা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। মাসের ওই দিন গুলিতে তিনি রান্না করতেন পূজা করতেন স্বামীর সেবা করতেন। কোন কিছুই শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে না জানিয়ে তিনি করেননি।

স্মৃতিকথা পড়ে জানা যায়, একবার শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ভয়ানক পেটের সমস্যা হয়েছিল। তিনি কোন রকম মশলাযুক্ত খাবার খেতে পারছিলেন না। তাই জন্য মা সারদা তার জন্য হালকা ঝোল, শুক্তো বানিয়ে দিতেন। কিন্তু তখন মাসের ওই তিন দিন মা রান্না ঘরে ঢুকবেন না। তখন খাবার আসতো মন্দির থেকে। কিন্তু সেই মন্দিরের খাবার খেলেই ঠাকুরের পেটের অসুখ বেড়ে যেত। ঠাকুর তখন অভিযোগের সুরে মাকে বলেছিলেন, মা রান্না করেননি বলেই ঠাকুরের পেটের অসুখ বেড়ে গেল। তখন মা ঠাকুরকে বুঝিয়ে বলেছিলেন মেয়েদের ওই অশুচির তিন দিন রান্না করতে নেই। সেই শুনেই ঠাকুর বলেছিলেন ‘মনই শুচি অশুচি, শরীরে শুচি হয় না’।

এইভাবে দীর্ঘদিনের কুসংস্কারে কুঠারাঘাত করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ এবং মা সারদা দেবী। অতদিন আগে তারা যদি বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেন তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সমাজ কেন বুঝতে পারবে না! এখন সমাজ তো অনেক বেশি শিক্ষিত। শিক্ষার আলো যত বেশি প্রবেশ করবে মানুষের মন থেকে কুসংস্কার তত দূরে চলে যাবে। এই সত্যই তো এতদিন ধরে মানুষকে শিখিয়ে আসা হয়েছে। শিক্ষাই একমাত্র পুরনো ধ্যান-ধারণা, পুরনো আবর্জনাকে সরিয়ে দিয়ে নতুন আলো দেখাতে পারে। তবে আমরা কি শুধু পুঁথিগত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি? সমাজের বোধোদয় কবে হবে? এ প্রশ্নের উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। মায়ের ১৬৮তম জন্ম তিথি উপলক্ষে মায়ের এই সাহসী পদক্ষেপ ছড়িয়ে পড়ুক নতুন প্রজন্মের উপর।

Related Articles