whatsapp channel

চাইনিজ থেকে অথেন্টিক বাঙালি খাবারের থালা নিয়ে হাজির নৈহাটির সান্যাল দম্পতি

নারীরা যে দশভূজা হয়, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন নৈহাটির বাসিন্দা শারদীয়া সান্যাল চক্রবর্তী। এক সময় নারীর পরিচয় ছিল শুধুই রান্নাঘরে, কিন্তু সেই রান্নাঘরেই চাইনিজ থেকে অথেন্টিক থালি সাজিয়ে আপনার জন্য…

Avatar

HoopHaap Digital Media

Advertisements
Advertisements

নারীরা যে দশভূজা হয়, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন নৈহাটির বাসিন্দা শারদীয়া সান্যাল চক্রবর্তী। এক সময় নারীর পরিচয় ছিল শুধুই রান্নাঘরে, কিন্তু সেই রান্নাঘরেই চাইনিজ থেকে অথেন্টিক থালি সাজিয়ে আপনার জন্য হাজির হয়ে গেছেন নৈহাটির দম্পতি শারদীয়া এবং সৌরভ সান্যাল। বিয়ের আগে বাসিন্দা ছিলেন কোন্নগরের। সেখানেই ২০০৭ সাল থেকে শুরু করেছিলেন নিজের তৈরি বুটিক, যার নাম দেন শারদীয়া বুটিক। ছোটবেলা থেকে আঁকতে ভালোবাসেন শারদীয়া। আঁকিবুকি কাটতে কাটতে কখন যে একে প্রফেশন হিসেবে বেছে নিয়েছেন তা তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি। তবে এক্ষেত্রে তার স্বামীর অবদান কিছুটা হলেও ছিল। ২০০৫ সালে স্বামীর সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় হয়। তখন থেকেই ভাবনাচিন্তা করেন দুজনে আলাদা করে কিছু করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। সেইখান থেকেই স্বপ্নের পথচলা শুরু হয়। দু’জনের একজন নৈহাটিতে নিজের বাড়িতেই খুললেন জিম, অন্যজন কোন্নগরে শুরু করলেন শারদীয়া বুটিক।

Advertisements

Advertisements

আঁকিবুকির পাশাপাশি রান্না করতেও বেশ ভালবাসতেন তিনি। তার এই অসাধারণ রান্নাবান্নায় যাদের অবদান আছে তারা হলেন দিদা, মা, শাশুড়িমা। আপাতত ছোটখাটো একটি রান্নার ব্যবসায় নেমে পড়েছেন তিনি। মার বাড়ি ঢাকা-বিক্রমপুর এবং বাবার বাড়ি চট্টগ্রামে হওয়ায় খাঁটি বাংলাদেশের রান্নার আদল চোখে পড়ে শারদীয়ার রান্নাঘরে। ২০১৫ সালে ১৮ ই জানুয়ারি বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে এসে নিত্য নতুন রান্না করে বরের মন জয় করে নিয়েছিলেন শারদীয়া। আর পাঁচটা বাঙালি বধু যেমন বাড়িতে রান্না করে সেইভাবেই চলছিল রান্নাবান্না। তখনও রান্নাবান্না নিয়ে তিনি বড় স্বপ্ন দেখেননি। জিম আর বুটিক এই নিয়েই চলছিল তাদের দুজনের কর্মকাণ্ড। তবে করোনার আবহে লকডাউনের দরুন বুটিকের এক্সিবিশন করা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছিলনা, তার জন্য কিছু দিনের জন্য স্থগিত করে দিতে হয় বুটিকের কাজ।

Advertisements

Advertisements

বুটিকের কাজ আপাতত থেমে গেলেও সেই থেমে যাওয়ার সময় থেকেই শুরু হয় অন্য একটি কাজের জন্য নতুন উদ্যোগ। স্বামীকে নিত্যনতুন রান্না খাইয়ে তিনি আগে থেকেই স্বামীর মন জয় করে নিয়েছিলেন, তাই এইরকম সময় সৌরভ বাবুও তার পাশে দাঁড়িয়ে হাতটাকে শক্ত করে ধরলেন। সেখান থেকেই শুরু হলো এই রান্নাবান্নার পুরো কনসেপ্ট। সৌরভবাবু নিজে একজন খাদ্যরসিক মানুষ। তবে তিনি শুধু যে রসনাতৃপ্তি করেই মনভরান তা নয়, তার হাতের বানানো কেক, দইবড়া, রাবড়ি, গাজরের হালুয়া, বিরিয়ানি বিশেষ করে মাটন বিরিয়ানি একেবারে ফাটাফাটি। স্বামী হিসাবে এমন যদি একজন বন্ধু পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই। যেমন ভাবা তেমন কাজ, ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে শুরু করলেন একটি মোমো আউটলেট, নাম দিলেন Momo Hours। তবে শুধুমাত্র চাইনিজ খাবার নয়, শারদীয়ার রান্নাঘরে রয়েছে বাঙালি পুরনো হারিয়ে যাওয়া খাবার। আঁকতে ভালোবাসতেন বলে শুধুমাত্র শাড়িতেই আঁকার কাজ নয়, রান্নাঘরে ঢুকলেই দেখা যায় পুরনো রান্নাঘরকে কিভাবে সাবেকি আদলে ছবি এঁকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছেন তিনি। পুরনো দেওয়ালে ফুটে উঠেছে সাবেকি সনাতনী আলপনা, লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ কলাগাছ, বাঙালির চিরকালের আবেগ এক হাঁড়ি রসগোল্লা, এবং মাছ। সাবেকিয়ানা বজায় রাখার জন্য রান্না করা হয় কাঁসার বাসনে।

তবে এবার জেনে নিন খাবারের তালিকায় কিকি রয়েছে- নলেন গুড়ের দুধ গোকুল, ক্ষীর সাগর, গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি, লাবড়া, গলদাকারী, রুই কমলা, গুড়ের পায়েস, কালাকাঁদ, আমের আচার, নকশী-পিঠা, নবরত্ন চাটনি, বড়ি দিয়ে মুলো শাক, নারকেলের তক্তি, কাঁচকলার চিলিকারি, ফিরনি, চটপটা মশালাদার স্টাফড ভেন্ডি, মনোমোহিনী, কচুর শাক দিয়ে চিংড়ি পটলের দোলমা, আমের চাটনি, সুন্দরী ইলিশ, সোনামুগের ডাল, মোচা চিংড়ি, তালের কেক, নলেন গুড়ের পাটিসাপটা, নিরামিষ ধোকার ডালনা, ছানার ডালনা, লুচি, পুরি, কচুরী, রাধাবল্লভী, পরোটা, নান, বিভিন্ন রকমের ভর্তা, খোসা বাটা, ঝিঙে আলু পোস্ত চিংড়ি, আলুর চোখা, মানকচু বাটা, কচুর ডালনা, নিরামিষ আমিষ, ইলিশের মাথা দিয়ে পুঁইশাক, পালং পনির, পালং চিকেন, লাউডগা, কুমড়ো ডগা, কাটোয়া ডাঁটার চচ্চড়ি, বকফুল, কুমড়ো ফুল, সজনে ফুলের বড়া, শুটকি মাছ, লোটে মাছের ঝুরো, শংকর মাছের কষা, চিতল মাছের মুইঠা, কাঁকড়ার ঝাল, তেল কই, পাবদা, পারসে। চাটনির মধ্যে রয়েছে আম, আমড়া, চালতা, জলপাই, টমেটো, কাঁচা তেঁতুল ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে নানান হারিয়ে যাওয়া পুরনো দিনের রান্না। এছাড়া চাইনিজ এবং মোমোর তালিকায় রয়েছে সেজুয়ান, চিলি, তন্দুরি, স্পাইসি, গারলিক, স্টীমড, বাটার, আফগানি রেশমি মালাই পনির, এগ ফ্রাইড জিঞ্জার গারলিক, মাঞ্চুরিয়ান, হট এন্ড সাওয়ার, সুইট এন্ড সাওয়ার মোমো সমস্ত কিছুই ৫ পিস পাওয়া যাবে মাত্র ৫০ টাকায়। চিকেন ৬ পিস পাওয়া যাবে মাত্র ৮০ টাকায়। মাটন উইথ বোন ৬ পিস মাত্র ১৫০ টাকা, বোনলেস মাত্র ২০০ টাকা, পনির ৬ পিস মাত্র ৮০ টাকায়। এখানকার স্পেশালিটি ১২ ইঞ্চি মোমো যার দাম মাত্র ১০০ টাকা। সমস্ত রকমের মকটেল এবং লস্যি পাওয়া যাবে মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়। বাঙালি থালি শুরু হচ্ছে মাত্র ৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। গোটা লকডাউনে মানুষের থেকে সামান্য টাকার বিনিময় যদি মনের মত খাবার পরিবেশন করা যায় তাহলে মন্দ হয়না এই ভাবনা থেকেই শুরু, রান্না নিয়েই এগিয়ে যাওয়া সান্যাল দম্পতির। তবে অর্ডার দিতে গেলে অবশ্যই নিজের ফোনে সেভ করে রাখুন দুটি নাম্বার। ছোটখাটো অনুষ্ঠানের অর্ডার নেওয়া হয়। গঙ্গার এপার থেকে ওপার সর্বত্রই এনাদের খাবার ছড়িয়ে পড়েছে। বেশীজনের অর্ডার দিতে গেলে তিন দিন আগে অবশ্যই ফোন করে জানাতে হবে। কম জনের রান্না নিলে একদিন আগে ফোন করে জানালেই হবে। এত কিছু খাবারের কথা শুনে জিভে জল চলে আসছে তো? তাহলে আর ভাবছেন কেন ঝটপট ফোন করে একদিন খাবার নিয়েই দেখুন। বাজি ধরে বলতে পারি, একবার নিলেই খেতে ইচ্ছা করবে বারবার। বর্তমানে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাজের চাপে সংসারে বেশিক্ষণ সময় দিতে পারেননা। সমস্ত মা- ঠাকুমার আমলের সাবেকি রান্নাবান্না হারিয়ে যাচ্ছে রান্নাঘর থেকে। সেই সমস্ত হারিয়ে যাওয়ার রান্নাকেই নতুন করে সাজিয়ে গুছিয়ে আপনার মন এবং পেট ভরানোর জন্য তৈরি হয়ে রয়েছেন নৈহাটির সান্যাল দম্পতি। বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো এবং জিমের হনুমান ঠাকুরের পুজোর সময় প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ জনের রান্না একাই সামলেছেন এই দম্পতি।

ফোন করার সময় সকাল ৭ টা – ৯ টা পর্যন্ত।
ফোন নাম্বার
9830568042
9836640596

ঠিকানা: 4 No, A.K Devi Road, Naihati, 743165, 24 (N) PGS, WB.সাঁইবাবার মন্দির অথবা বুড়োশিবতলার কাছে আকাশদীপ অ্যাপার্টমেন্টের উল্টোদিকে Sourav’s Multi Gym.

whatsapp logo
Advertisements
Avatar