সঙ্গিনীকে আকৃষ্ট করার জন্য অভিনব কায়দার সাহায্য নেন পেঙ্গুইনরা, চলে প্রেমের প্রস্তাব পর্ব
সাদা বরফের চাদরে মধ্যে দিয়ে টুকটুক করে হেলেদুলে হেঁটে যাওয়া প্রাণীটিকে আমরা প্রত্যেকেই পছন্দ করি। তাছাড়া পেঙ্গুইনের অনেক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে অজানা মানুষের সান্নিধ্যে এসে তারা বেশ বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিতে পারে। তবে হেলেদুলে চললেও প্রয়োজন পড়লে কিন্তু বেশ তাড়াতাড়ি দৌড়াতে পারে। তাছাড়া খুব দরকার হলে বুকের সাহায্যে ভর দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অনায়াসে চলে যায় পেঙ্গুইন পাখির দল। এদের রয়েছে ছোট দুটি ডানা, ডানা ঝাপটিয়ে একটু দূরে যেতেও পারে। পেঙ্গুইনের বৈশিষ্ট্য হলো এরা সারাজীবন একজন সঙ্গিনীর সঙ্গে কাটিয়ে দেয়।
সঙ্গিনীকে আকৃষ্ট করার জন্য গোলাপ ফুল নয়, মুখে করে নিয়ে আসে রঙিন পাথর। যে পুরুষ এর ঠোঁটের মধ্যে থাকা রঙিন পাথর পছন্দ হয় সেই পুরুষকেই সারা জীবন সঙ্গী হিসেবে হিসাবে পেতে চায় মেয়ে পেঙ্গুইন। তবে কোনো সঙ্গীর সঙ্গে জীবন কাটাতে গিয়ে যদি দেখে বাচ্চার মৃত্যু সংখ্যা বেশি হচ্ছে তাহলে সেই সঙ্গীকে তৎক্ষণাৎ বাতিল করে নতুন সঙ্গীর খোঁজ করে মেয়ে পেঙ্গুইনটি। সন্তান প্রসব করার পরেই সন্তানকে যত্ন নেওয়ার দায়িত্বে মা-বাবা দুজনেই সমান ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এদের শরীরের মধ্যে থাকা ক্রপ নামে এক ধরনের তরল পদার্থ তৈরি হয়, যা বাচ্চাদের জন্য উপকারী একটি উপাদান। একে ক্রপ মিল্ক বলে।
পেঙ্গুইন একাকীত্ব পছন্দ করেনা। দলবদ্ধতাই এদের একমাত্র নিয়ম। যখন ডিমে তা দেয় তখন যদি কোনো কারণে তুষারঝড় হয়, তাহলে দলের প্রত্যেকটি সদস্যরা ডিমগুলোকে রক্ষা করে। সবাই মিলে জড়ো হয়ে একটি ইনসুলেটর কেবিন তৈরি করে। যার ফলে ঠান্ডা হাওয়া ডিমগুলিকে ছুঁতে পারেনা। বাচ্চারাও ডিম ফুটে বেরোনোর পর বাবা-মায়ের সঙ্গে এবং পুরো দলের সদস্যদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন কিন্তু কোন কারণে যদি সামুদ্রিক সিল, হাঙ্গর, কিলার হোয়েল এর চোখে পড়ে যায় তাহলে তৎক্ষণাৎ শেষ করতে হয় সেই ছোট্ট জীবনকে।
ডিমে তা দেওয়ার সময় মা বাবা দুজনে মিলেই এই কাজটি সম্পন্ন করে। দুজনেই সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে দুটো পা জড় করে এক পায়ের মধ্যে থেকে ডিম বার করে অন্যের পায়ের মধ্যে ডিম খুব সাবধানে দিয়ে দেয়, ডিম যদি কোনো কারণে বরফের উপর পড়ে তাহলে তৎক্ষণাৎ সে ডিমটি নষ্ট হয়ে যায়। পেঙ্গুইনের ইনকিউবেশন সময় মোটামুটি 64 দিন। এই সময় এক সপ্তাহ বাবার কাছে এবং পরের সপ্তাহে মায়ের কাছে এইভাবে অল্টারনেটিভ হিসেবে মা-বাবা ডিমগুলির যত্ন করে।
সমুদ্রের নিচ দিয়ে অনেক দূর গিয়ে নিজের জায়গায় আবার কি করে ফিরে আসে এ প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এরা সূর্যের আলোর সাহায্যে দিক নির্ণয় করতে পারে। পেঙ্গুইনরা সাধারনত বছরে একবার ডিম পাড়ে। তুষারঝড় গুলি যখন হয় তারা অদ্ভুত ভাবে নিজেদের মধ্যে একটা একটা বৃত্ত তৈরি করে যাকে হার্ডলিং বলে। এরা লবণাক্ত সমুদ্রের জল পান করতে পারে। অনেক পেঙ্গুইন আছে যারা পাথর দিয়ে বাসা বানায়, আবার অনেকে মাটির তলায় গর্ত খুঁড়ে থাকে। তবে বর্তমানে প্রচন্ড পরিমানে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য বরফ গলে জল হতে চলেছে। যার জন্য এদের জীবন এখন খুবই সংকটের মধ্যে রয়েছে। অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়া ছাড়া এরা বেঁচে থাকতে পারেনা। তাই আমাদের উচিত এদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। এর জন্য মানুষ অনেক খানি দায়ী। মানুষের উচিত ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করা যাতে পেঙ্গুইন বা এই সমস্ত বরফ অঞ্চলে থাকা সমস্ত পশুপাখিদের নিশ্চিন্তে তাদের জীবন অতিবাহিত করতে পারে।