পেটের দায়ে সাইকেল চালিয়ে হাতে তৈরি মিষ্টি বিক্রি করেন সাগর, রয়েছে রকমারি মিষ্টির সম্ভার
রানাঘাট থেকে কলকাতা দূরত্ব যা ভাবলেই অনেকেরই কপালের ভাঁজে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হবে। আর এই ভাবেই করোনাভাইরাসের জন্য হওয়া লকডাউনে গোটা সময়টা রানাঘাট থেকে কলকাতায় সাইকেলে করে মিষ্টি বিক্রি করতে এসেছিল এক যুবক। বর্তমানে ট্রেন চলার জন্য আপাতত ট্রেনে করে যাতায়াত করে। রানাঘাট থেকে ট্রেনে উঠে তার প্রথম গন্তব্য হয় আগরপাড়া। তারপরে বেলঘড়িয়ার নানান জায়গায় ঘুরে ঘুরে মিষ্টি বিক্রি করে শেষে মিষ্টির খালি বাক্স নিয়ে আবার ঘরে ফেরা। আবার পরদিন ভোর তিনটের সময় উঠে মিষ্টি হাতে করে নিয়ে বেরিয়ে পড়া জীবন ও জীবিকার তাগিদে।
মুর্শিদাবাদে আদিবাড়ি হওয়া সত্ত্বেও রানাঘাটে আপাতত বাসস্থান সাগরের। তার আসল নাম ইমরান সেখ। তবে সকলে তাকে সাগর নামেই ডাকে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে তার এতটাই নামটা হয়েছে যে অর্ডার নিয়ে মানুষ তার থেকে মিষ্টি নেন। তার কাছে যা যা মিষ্টি থাকে প্রত্যেকটি মিষ্টির দাম মাত্র ৫ টাকা। এই দুর্মূল্যের বাজারে ৫ টাকার মিষ্টি ভাবাই যায় না। ছানার জিলিপি, রসগোল্লা, কালোজাম, ল্যাংচা সবেরই দাম মাত্র ৫ টাকা। সাথে রয়েছে কালাকাঁদ যার দাম ৮ টাকা আর রয়েছে ঘি। ঘি এর দাম প্রতি কেজি ৪০০ এবং ৮০০ টাকা।
বাবা, মা, ভাই, বোনের সংসারে প্রত্যেকেই চাষাবাদের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন কিন্তু রোজগার একটু বাড়ানোর জন্য মাত্র কুড়ি বছরের এই যুবককে পাড়ি দিতে হয়েছে দূর-দূরান্তে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়িতে অর্ডার নিয়ে মিষ্টি দেওয়ার কাজ করে। একটা ফোন করলেই সাগর আপনার বাড়ির কাছে হাজির হয়ে যাবে মিষ্টির ভান্ডার নিয়ে। তবে কয়েকটা জায়গাতেই সাগর প্রতিদিন মিষ্টি নিয়ে যায় সে আপনার বাড়ির কাছাকাছি আসতে পারবে কিনা তা জানার জন্য আপনাকে একটা ফোন করে নিতে হবে। সাগরের ফোন নম্বর হল – 7384262639
যে বয়সে ছেলেরা বইখাতা নিয়ে স্কুল-কলেজে যায়, পড়াশোনা করতে সেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে সাগরকে। সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়েছে কারণ এর থেকে বেশি পড়াশোনা করানোর ক্ষমতা তার পরিবারের লোকের ছিল না। সংসার টানার জন্য বাবার রোজগারের পাশাপাশি অন্য কিভাবে রোজগার বাড়ানো যায় তা চিন্তা-ভাবনা করতে গিয়েই এমন পরিকল্পনা। তবে বর্তমানে অনেক ইউটিউবারের সাহায্যে সাগরের মিষ্টি বিক্রির পরিমাণ অনেকাংশে বেড়ে গেছে। যেখানে সে আগে সারা দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টি মিষ্টি বিক্রি করত সেখানে পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এখন প্রতিদিন ৮০০ টার মত মিষ্টি বিক্রি করে সে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত সাগরের পাশে দাঁড়ানো আমাদের যার যে রকম ক্ষমতা, সেই ক্ষমতা দিয়ে সাগরের কাছ থেকে মিষ্টি কিনে ছেলেটিকে একটু সাহায্য করতে পারলে মন্দ কি। তাই আর সাত-পাঁচ না ভেবে এই ফোন নম্বরে ফোন করে ফেলুন। দেখবেন ৫ টাকায় কি সুন্দর আপনার মনের মতন মিষ্টি আপনার বাড়িতে হাজির হয়ে গেছে।