Hoop Special

Tourism: শহর থেকে দূরে পাহাড়ে ঘেরা নিরিবিলি গ্রামটিতে ঘুরে আসুন, মন ভালো হতে বাধ্য

‘বৃষ্টি পড়ে এখানে বারো মাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে’ জানেন কি, কোথায় সাদা সাদা মেঘ গাভীর মতো চরে? না শুধুমাত্র কবির কল্পনায় নয়, বাস্তবে এমন একটি জায়গা আছে যেখানে গেলেই উপরের দুটি লাইন আপনার বারবার আওড়াতে ইচ্ছা করবে। অসাধারণ ডেস্টিনেশনটি দার্জিলিং থেকে কিছু দূরে। দীঘা, পুরী, দার্জিলিং তো অনেক গেলেন, এবার দার্জিলিং থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে একবার ঘুরে আসতে পারেন পাইন গাছের জঙ্গলে ঘেরা অপরূপ স্থানটিতে। মনের মানুষটিকে সঙ্গে নিয়ে অথবা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দার্জিলিংয়ের খুব কাছেই ‘লেপচাজগৎ’ থেকে। এখানকার অধিবাসীরা মূলত লেপচা প্রজাতির। তাইতো ছোট্ট গ্রাম পুরোটা তৈরি হয়েছে লেপচাদের নিয়ে।

শহুরে কংক্রিটের জঙ্গলে থাকতে থাকতে যদি এই মন একেবারে ভারাক্রান্ত হয়ে যায়, কিংবা যদি মাঝে মাঝে মনে হয়, একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচবো তাহলে নিঃসন্দেহে একবার ঘুরে আসতে পারেন এই অসাধারণ জায়গাটিতে। কিন্তু দেশ-বিদেশে এতো ভালো ভালো জায়গা থাকতে হঠাৎ দার্জিলিংয়ের এই ছোট্ট গ্রামটিতে কেনইবা যাবেন? যারা গ্রামটিতে একবার ঘুরে এসেছেন তারা এই প্রশ্ন শুনে হেসেই ফেলবেন। তারা হয়তো বারবার বলবেন যখনই সময় পাব তখনই ছুটে চলে যাব এই গ্রামে। কিন্তু যারা জানেন না, তাদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা বলা, শান্ত, নিরিবিলি স্থানে চুপচাপ বসে যদি সামনে থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে উপলব্ধি করতে চান, তাহলে একবার ঘুরে আসুন অসাধারণ এই জায়গায়।

দার্জিলিংয়ের মতো অত কোলাহল নেই এই স্থানে। হাতে গোনা কয়েকটা হোমস্টে ছাড়া থাকার জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাত হাজার ফুট ওপরে এমনই অপরূপ সুন্দর ওক, পাইন আর রডোডেনড্রনের জঙ্গল রয়েছে, যা এখানে এসে চাক্ষুষ না করলে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। ভোরবেলা একটু ঘুম থেকে উঠে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে সামনে থেকে উপভোগ করা কাঞ্চনজঙ্ঘার অভিজ্ঞতাই যেন আলাদা। যারা ফটো তুলতে ভালোবাসেন বা চান নিজেদের মন-ক্যামেরায় এই ধরনের সুন্দর সুন্দর দৃশ্যকে একেবারে আবদ্ধ করে রাখতে তারা কিন্তু অবশ্যই এখানে গেলে প্রচুর পাহাড়ি পাখি, অর্কিড, চা বাগান দেখতে পাবেন। খেয়াল করবেন, একটা ক্লিকও যেন মিস না হয়।

হোমস্টেতে পেতে পারেন পছন্দমতো খাবার, তবে কাছাকাছি সুখিয়াপোখরি থেকে কিনেও আনতে পারেন প্রয়োজনীয় খাবার। তবে শুধু তাই নয়, যদি ক্যাম্প ফায়ায় করতে চান, তাহলে এক্সট্রা কিছু টাকা দিতে হবে। তবে এ বিষয়টি এতটাই মনোরম লাগবে যে পকেটের দিকে চোখই যাবে না। শুধু সূর্যোদয় নয়, সূর্যাস্ত দেখবেন একেবারে দুচোখ ভরে। রাত বাড়তেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসে গোটা লেপজগৎজুড়ে। লেপচাজগতের যেকোনো উঁচু স্থান থেকে সোজা তাকালেই দেখতে পাবেন আলোয় ঝলমলে দার্জিলিং শহর। ঘন মিশকালো অন্ধকার থেকে এমন তারা ঝলমলে শহরের দিকে তাকিয়ে আপনার একবার হলেও বলতে ইচ্ছা করবে ‘আহা কি দেখিলাম, জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না’।

লেপচাজগৎ থেকে ঘুরে আসতে পারেন কাছাকাছি বেশ কয়েকটি জায়গায়। চলুন দেখে নিই জায়গা গুলি কি কি –

১) জোরপোখরি – লেপচাজগৎ থেকে মাত্র 5 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দুটি যমজ হ্রদ। ‘জোর’ কথাটির মানে দুটি আর ‘পক্রি’ কথাটি স্থানীয় ভাষায় মানে হল হ্রদ।

২) ঘুম মনাস্ট্রি – এই স্থানটি লেপচাজগৎ থেকে মাত্র 10 কিলোমিটার দূরে। এটি দার্জিলিংয়ের সবচেয়ে প্রাচীন মনাস্ট্রি, এর ভিতরে প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন বুদ্ধদেব।

৩) পশুপতি মার্কেট – লেপচাজগৎ থেকে প্রায় 15 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মার্কেট। এটি ভারত-নেপাল সীমানার খুব কাছে অবস্থিত। বাড়ির মানুষগুলোর জন্য যদি কিছু কিনতে চান, তাহলে এই জায়গাটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান।

৪) মিরিক – লেপচাজগৎ থেকে প্রায় 30 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিরিকের প্রধান আকর্ষণ হলো সুমেন্দু লেক। পাইন গাছের ঘেরা এই লেকটি দেখতে অসাধারণ।

কোন সময়ে যাবেন-

অক্টোবর মাস থেকে এপ্রিল মাসের যে কোনো সময় ঘুরে আসতে পারেন এই জায়গায়।

কিভাবে পৌঁছবেন লেপচাজগৎ –

১) আকাশপথে – লেপচাজগৎ এর কাছাকাছি বিমানবন্দরটি হল বাগডোগরা। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বাগডোগরা পৌঁছানো যাবে সহজেই ।

২) ট্রেন পথে – হাওড়া, শিয়ালদা থেকে ট্রেনে করে আসতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন লেপচাজগৎ।

৩) সড়কপথে – সড়কপথে পৌঁছতে পারেন নিউ জলপাইগুড়ি। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন লেপচাজগৎ।

তাহলে আর কি ‘উঠল বাই তো কটক যাই’। না না, উঠল বাই তো লেপচাজগৎ যাই। এখানে যাওয়ার সময় অবশ্যই শীতের পোশাক নেবেন। পাহাড়ে চলার জন্য ভালো জুতো, সাথে রাখতে পারেন কিশমিশ, কাজু, আখরোট। সবমিলিয়ে দারুন জায়গা লেপচাজগৎ। একবার গেলে মন বলবে আবার চলে যাই এই স্বর্গীয় স্থানে।