Hoop Special

রাজবাড়ীতে রাত কাটানো আর স্বপ্ন নয়, রয়েছে থাকার বন্দোবস্ত সঙ্গে রকমারি পদ

কংক্রিটের শহর কলকাতা। কর্মব্যস্ততায় সারাক্ষণ দৌড়চ্ছে আমজনতা। মফস্বলের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রেনে করে কলকাতায় যায় প্রত্যেকটি মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য। আবার সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত শরীরে ফিরে আসে আবার যে যার বাড়িতে। কংক্রিটের জঙ্গলে মানুষ থাকতে থাকতে দমবন্ধ হয়ে আসে। করোনা ভাইরাসের জন্য লকডাউন হওয়ার দরুন মানুষ একেবারে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছিল। জীবন-জীবিকার তাগিদে গৃহবন্দি অবস্থাতে মানসিকভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তাই যদি একটু মুক্তির স্বাদ পেতে চান আর এক দু দিনের ছুটি কোন ভাবে ম্যানেজ করতে পারেন তাহলে কলকাতার খুব কাছেই খন্নানের ইটাচুনা রাজবাড়ি আপনার জন্য উপযুক্ত ডেস্টিনেশন।

ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় ইটাচুনা রাজবাড়ীর জন্মের কাহিনী। এই রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কুন্দ্রারা। এই কোন জায়গায় পরবর্তীকালে কুন্ডু পদবি ধারণ করেন। ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে সাফল্য নারায়ন কুন্ডুর বংশধররা ইটাচুনা রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন। কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে যদি একটুও সবুজের জঙ্গলে যোগ দিতে চান তাহলে অবশ্যই ঘুরে আসবেন এই রাজবাড়ীতে। রাজবাড়ীর বিশাল ফটক পেরিয়ে বিশাল প্রাসাদোপম ইমারত আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে এই বাড়ির অন্দরমহলে।

রাজপ্রাসাদের দেওয়ালে হাত বোলালে কিংবা কান পাতলে শুনতে পাবেন ইতিহাসের কাহিনী। প্রাসাদোপম রাজবাড়ী কোনায় কোনায় দেখা যায় প্রাচীনত্ব এর ছোঁয়া। চোখ তুলে অপর দিকে তাকালেই চোখে পড়বে কড়ি বরোগার ছাদ, প্রাসাদের সামনে বিশাল উঠোন জুড়ে রয়েছে বাতিস্তম্ভ। তবে রাজপ্রাসাদের অন্দরমহল এবং বাহিরমহল সম্পূর্ণই আলাদা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে কাছারিবাড়ি, বাজার সরকারের ঘর, হিসাবের ঘর ইত্যাদি।

এত সুন্দর প্রাসাদোপম প্রেক্ষাপটকে কাজে লাগিয়েছিলেন লুটেরা ছবির পরিচালক। এইখানে সোনাক্ষী সিং এবং রণবীর সিংয়ের জুটিতে প্রাসাদোপম বাড়িটিকে কাজে লাগানো হয়েছিল। সন্ধ্যা হলেই এই বাড়ি থেকে শুনতে পাওয়া যায় ঘণ্টাধ্বনি। ঠাকুরদালানে জ্বলে ওঠে ঝাড়বাতি। শুধু তাই নয়, পাশের বাঁশুরিয়া গ্রাম থেকে এক বাঁশিওয়ালা রোজ আসেন এই রাজবাড়ীতে বাঁশি বাজাতে। তাই একটা দিন থাকলে আপনি বাঁশির সুরে নিজের মনকে হারিয়েও নিয়ে যেতে পারেন দূর-দূরান্তে।

রাজকীয় কায়দায় প্রতিদিন আপনি খাবার পাবেন। দুটি করে লুচি সাথে ভাত, ডাল, পোস্ত, সুক্ত, থোড়, মোচা, মাছ-মাংস যা অর্ডার করবেন মুখের সামনে তাই হাজির হবেন। তবে প্রতিদিন এক মেনু হয় না। বাজারে যখন যেটা পাওয়া যায় সেটাই রান্না করার চেষ্টা করা হয়। তবে খাবারের মেন্যুতে আভিজাত্যের ছোঁয়া সর্বদা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়।

ইটাচুনা রাজবাড়িতে থাকতে গেলে আপনাকে মোটামুটি তিন হাজার টাকা খরচ করতে হবে। বিছানা হিসেবে একদিনের জন্য পালঙ্ক রাত্রি বাস করার সৌভাগ্যটা মিস করবেন না। তবে এর আশেপাশে রয়েছে মাটির বাড়ি যেখানে আপনি রাত্রি বাস করতে পারে। সেখানে ভাড়া অবশ্য খানিকটা কম। রাজকীয় কায়দায় থাকা-খাওয়া এবং প্রাসাদোপম বাড়ীতে রাজবাড়ীর ছোঁয়া পেতে অবশ্যই ঘুরে আসুন ইটাচুনা রাজবাড়ী। বর্ধমান মেন লাইনে ট্রেনে করে হাওড়া থেকে পান্ডুয়া লোকাল এ আসতে হবে খন্নান স্টেশন এর নেবে অটোরিকশা ধরে মিনিটের পথ এই ইটাচুনা রাজবাড়ী।

Related Articles