বাংলাদেশের কুমিল্লার দুর্গামন্ডপে দশমীর দিন চলেছে তান্ডবলীলা। দুর্গামুর্তি সহ অন্যান্য মুর্তিগুলি ভেঙে পুকুরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ইস্কন মন্দিরটিও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী হিন্দু মানুষ। কট্টরপন্থী মুসলমানদের এই কার্যকলাপের কঠোর নিন্দা করে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশের নামী ব্যক্তিত্বরা। এবার মুখ খুললেন জয়া আহসান (Jaya Ahsan)।
বাংলাদেশের রংপুরের একটি আগুন জ্বলা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে জয়া তুলে দিয়েছেন একটি বিখ্যাত কবিতার কয়েকটি লাইন। কবিতার লেখক নবারূণ ভট্টাচার্য (Nabarun Bhattacharya)। তিনি লিখেছেন “এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না /এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না/ এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না/ এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না”। তবে শুধু জয়াই নন, মুখ খুলেছেন চঞ্চল চৌধুরী (Chanchal Chowdhury)-ও। তিনি লিখেছেন, বিজয়া কতটা শুভ ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু মানবতার বিসর্জন হচ্ছে। মানুষরূপী অমানুষগুলি ধর্ম এবং শান্তি দুটোই নষ্ট করতে বদ্ধপরিকর। মানুষ বাঁচলে ধর্ম বাঁচবে, পৃথিবী বাঁচবে।
পরিচালক মহম্মদ সারওয়ার ফারুকি (Sarwar Farooqi) লিখেছেন, ঘটনার ঠিকঠাক তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আগামীতে যেন এইরকম কিছু না ঘটে তার সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ফারুকির এই কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর আগেও বাংলাদেশে দুর্গাপুজোকে টার্গেট করে হিংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে এই ধরনের পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, তার জন্য সরকারকে অনেক আগেই ব্যবস্থা নিতে হত বলে মনে করছেন একাধিক মানুষ। ফারুকি লিখেছেন, হিন্দু বন্ধু ও প্রতিবেশীকে একা বোধ করতে দেওয়া উচিত নয়।
প্রতিবাদ করেছেন গাজী আবদুন নূর (Gazi Abdun Noor)। তিনি লিখেছেন, একাত্তর ছিল, থাকবে। গাজী অনুরোধ করেছেন, এই ঘটনা যেন হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে।
বাংলাদেশের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে সরব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Haseena)। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ এক অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশে সকল ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে বসবাস করবে। যার যার ধর্ম, সে সে পালন করবে। শেখ হাসিনা প্রত্যেক বাংলাদেশীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ধর্ম যার যার, কিন্তু উৎসব সবার। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার।
মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমর্থনে অবশ্যই চলে আসে একাত্তর। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার সময় ঝরেছে প্রচুর রক্ত। হিন্দুর রক্ত না মুসলিমের রক্ত, সেই বিভেদ ছিল না সেদিন। শুধু ছিল, সোনার বাংলা গড়ার তাগিদ যেখানে হিন্দু ও মুসলিম একত্রে ভাগ করে নেবেন সুখ-দুঃখ। প্রতিবেদক বিশ্বাস করেন না, যেসব কট্টরপন্থী মুসলমানরা বাংলাদেশকে অশান্ত করার প্রয়াস করছেন, তাঁরা আদতে বাংলাদেশী। সত্যকে উদঘাটন করা সংবাদমাধ্যমের অবশ্য কর্তব্য। হুপহাপ (HOOPHAAP)-এর পক্ষ থেকে এই ধরনের ঘটনার চরম নিন্দা করার পাশাপাশি মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে আবেদন করা হচ্ছে, বাংলাদেশকে অশান্ত করার এই প্রক্রিয়ায় কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হাত রয়েছে কিনা তা দেখার। গাজী আবদুন নূর এর আগে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন জামাত -ই-ইসলাম-এর মাথা চাড়া দেওয়ার সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। বাংলাদেশের এই ঘটনা সেই সন্দেহকেই আরও বদ্ধমূল করে তুলছে।