‘পিরিয়ডস’ শব্দটি এখনও অবধি সমাজের কাছে ট্যাবু। অথচ এটি একটি সাধারণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। প্রাকৃতিক নিয়মেই নারী এই প্রক্রিয়ার অধিকারী। তবু এখনও অবধি তা নিয়ে কথা বলতে মেয়েরা প্রায় কেউই স্বচ্ছন্দ নন। তবে এবার এই প্রসঙ্গে মা ও দিদিমার সাথে আলোচনা করলেন নভ্যা নভেলি নন্দা (Navya Naveli Nanda)। অমিতাভ বচ্চন (Amitabh Bachchan) ও জয়া বচ্চন (Jaya Bachchan)-এর কন্যা নভ্যা সেই অর্থে স্টারকিড হিসাবে কোনোদিনই স্পটলাইটে ছিলেন না। তবে তিনি বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে ঘটনাচক্রে পাপারাৎজিদের ক্যামেরাবন্দি হয়েছিলেন। স্বাধীনচেতা নভ্যা বর্তমানে একটি পডকাস্ট শো সঞ্চালনা করেন যার নাম ‘হোয়াট দ্য হেল নভ্যা’। এই শোয়ে এদিন বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছিলেন জয়া ও শ্বেতা। তাঁদের সাথেই নভ্যা আলোচনা করলেন পিরিয়ডস সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে।
নভ্যার প্রশ্ন ছিল, জয়া ও শ্বেতার পিরিয়ডস শুরুর দিনগুলি কেমন ছিল! উত্তরে শ্বেতা বলেন, অবশ্যই সারাদিন নিজের ঘরে একা থাকতে ইচ্ছা করত। অনেক চকোলেট ও কার্বোহাইড্রেটস জাতীয় খাবার খেতেন তিনি। কিন্তু একদমই অন্যরকম ছিল জয়ার অভিজ্ঞতা। কেরিয়ারের শুরুতে সেই সময় জয়া বা অন্য নায়িকাদের ভ্যানিটি ভ্যান থাকত না। ফলে তাঁরা মহিলাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা থেকেও বঞ্চিত ছিলেন। জয়া জানালেন, পিরিয়ডস-এর সময় যথেষ্ট সমস্যা হত। ঝোপের পিছনে গিয়ে স্যানিটারি কাপড় পরিবর্তন করতে হত । জয়া মনে করিয়ে দিলেন সেই সময়ের কথা যখন স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রচলন হয়নি।
মেয়েরা পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করতেন। এই কাপড়গুলি কোমরে আটকে রাখার জন্য প্রয়োজন হত ওই কাপড়ের তৈরি একটি বেল্ট যা মেয়েরা নিজেরাই তৈরি করে নিতেন। অনেকে সুতির কাপড়ের পরিবর্তে ব্যবহার করতেন সুতির নরম ও পাতলা তোয়ালে। জয়া বললেন, শুটিংয়ের সময় একসাথে চারটে স্যানিটারি কাপড় নিয়ে কাজ করতে যেতেন। সাথে থাকত একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ। তাতে কাপড়গুলি জমা করে বাড়িতে নিয়ে এসে ফেলতেন জয়া। তবে তার জন্য শুটিং শেষ হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে হত যা ছিল যথেষ্ট অস্বস্তিকর। তবে শোয়ের মাঝেই পিরিয়ডস ও সেই সময়ের অসুবিধা নিয়ে এত কথা বলার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন জয়া। কিন্তু এই ক্ষমার প্রয়োজন ছিল না। কারণ মহিলারা যদি নিজেদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা না বলেন, তাহলে তাঁদের জন্য কেউ বলার থাকবে না। এটি সত্য।
নভ্যা মহিলাদের স্বাস্থ্য ও সমানাধিকারের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। শুধুমাত্র নভ্যাই নন, অনেকেই মহিলাদের অগ্রগতির জন্য এগিয়ে আসছেন। কিন্তু মহিলাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাঁদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। ঋতুস্রাব বা ‘পিরিয়ডস’-এর দিনগুলি স্যানিটারি ন্যাপকিন ছাড়া সত্যিই কি আর কোনও সুবিধা পান মহিলারা? সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ মহিলা প্রত্যেকেই পরিচ্ছন্ন টয়লেট নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। পিরিয়ডস-এর সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবর্তন করতে হলে হয়তো বর্তমানে কোনো ঝোপ খুঁজতে হয় না। কিন্তু অভাব রয়েছে পরিচ্ছন্ন টয়লেটের। ফলে মহিলারা প্রায়ই সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। পথে বেরোলে তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই। ফলে অনেকক্ষণ ইউরিন শরীরে জোর করে ধরঃ রাখার ফলে মহিলাদের কিডনির সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ভারতীয় সংবিধানে শিক্ষার অধিকার ও স্বাস্থ্যের অধিকার সকলের জন সমান হলেও মহিলারা কেন বারবার তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তর কি দিতে পারবেন পাঠককুল?
View this post on Instagram