সিনিয়রদের সঙ্গে জুনিয়রদের ঝামেলা চলছে চলবে। সাদার সঙ্গে কালোর লড়াই চলছে চলবে। আর রইল নেপোটিজম, সেও চলছে হয়তো চলবেও। আজ আমরা কথা বলব এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই। সালটা তখন ২০০১। বাঙালি হিন্দু পরিবারের মেয়ে বিপাশা বসু তখন বলিউডে ভাব জমাতে এসেছেন। প্রথম ছবি হিসেবে আব্বাস মুসতানের পরিচালনায় ২০০১ সালের ‘আজনবি’ ছবিতে অভিনয় করেন বিপাশা। ঠিক সেইসময় আরও একজন নবাগতা সেই পর্দায় ছিলেন তিনি হলেন বোল্ড করিনা কাপুর খান। যার ত্বক অত্যন্ত ফর্সা, মোলায়েম। যে কোনো সাবান, ক্রিম, প্রসাধনীর বিজ্ঞাপনে তাঁর ঝাঁ চকচকে শরীর ও মুখশ্রীর উপস্থিতি থাকে। সেই করিনা কাপুর ও শ্যামল ত্বকের অধিকারী বিপাশা বসু একই স্ক্রিন ভাগ করেন ২০০১ এ। করিনা অবশ্য এই সিনেমার আগে ‘রিফিউজি’, ‘মুঝে কুচ কেহেনা হ্যায়’, ‘ইয়াদে’ তে অভিনয় করে ফেলেছেন। তাই যথেষ্ট সিনিয়ার সঙ্গে স্মার্ট।
একজন কাপুর খানদানের মেয়ে একজন কলকাতা নিবাসী বাঙালী মেয়ে। সবে স্ট্রাগল করে রঙিন দুনিয়ায় পা ফেলেছেন। বলিউড তখন তাঁর কাছে অনেকটাই অজানা। তার মধ্যে কাপুর খানদানের মেয়ের সঙ্গে একই স্ক্রিন ভাগ করা, সব মিলিয়ে বিপাশা বেশ নার্ভাস ছিলেন। সেই জন্যেই যখন করিনা কাপুর তাঁকে ‘আজনবি’র সেটে গালে চড় মারে তখন বিপাশা চুপই ছিলেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, ২০০১ সালে ‘আজনবি’র শ্যুটিংয়ে পোশাক নিয়েই ঝামেলার সূত্রপাত করিনা ও বিপাশার মধ্যে। নবাব পত্নী করিনার ডিজাইনার বিপাশাকে পোশাক বাছতে সাহায্য করেছিলেন। আর তাতেই চটে যান বেবো। এও সম্ভব! যেই নায়িকা নিজের স্টাইল নিয়ে এতটা সচেতন তিনি কখনো নিজের ডিজাইনারকে ভাগ করতে পারেন? এ হয়ে গেল সেই বিস্কুটের বিজ্ঞাপনের মত, এ স্বাদের ভাগ হবে না।
বিপাশাকে নিয়ে করিনা এতটাই উদবিঘ্ন ছিলেন যে বিপাশার সেই সময়কার প্রেমিক জন আব্রাহামেরও ত্রুটি ধরেছিলেন। রীতিমত ‘এক্সপ্রেশনলেস’ এর তকমা দিয়ে দেন বেবো। পাশাপাশি করিনা সাক্ষাৎকারে একদম অন্য সুরে বিপাশার উদ্দেশ্যে বলেন ও আবার একটা মেয়ে নাকি! ও একটা ‘কালো বিল্লি’।
করিনা কাপুর খান, বরাবরই উচ্চাকাঙ্ক্ষী, বোল্ড, ঠোঁট কাটা একজন নায়িকা। তাই তার থেকে বর্ণবিদ্বেষ মূলক কথা হয়তো আশা করা যায়। এই বর্ণবিদ্বেষ ও স্বজনপোষণের শিকার হয়েছেন অনেকে। বিপাশা বসু থেকে শুরু করে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, এরকম অনেকেই সাদা কালোর কনসেপ্টে এসে জর্জরিত হয়েছেন। এই মহাদেশে ওহ এই দেশে জন্মে এর থেকে বেশি গায়ের রং পেতে গেলে আমাদের তবে জিনের মিশ্রন ঘটাতে হবে। বাপ ঠাকুরদা যা থাকবে তার পরবর্তী প্রজন্ম সেই ধারাই বয়ে নিয়ে যায় বলে আমরা জানি। এরপরেও লিঙ্গবৈষম্য ও বর্ণবৈষম্য!