নগ্নতা ও অশালীনতা থেকে কয়েক যোজন দূরে থাকা এক নায়িকা আর অন্যদিকে নগ্নতাকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে কঠিন আবরণে নিজেকে ঢেকে রাখা এক নায়িকা। এই দুই নায়িকার বসবাস ভিন্ন প্রান্তে। জীবন যাপনের ধরন এক্কেবারে আলাদা। একজন খুব সুন্দর ভাবে অভিনয় জগতে পা রেখেছেন, একজন দীর্ঘ বছর মানসিক-শারীরিক লড়াই চালিয়ে অবশেষে বড় পর্দায় সুযোগ পান। দু’জনের জীবন সম্পূর্ণ আলাদা, দু’জনের দর্শন আলাদা, দু’জনের ইতিহাস আলাদা, কিন্তু তাও একবার ২০০৬ এ ফিরে যাব। বয়সের বিচারে এই দুই নায়িকা একে অপরের থেকে বয়সে ৫ বছরের ছোট। শুধু বয়সেই নয় অভিনয়ের অভিজ্ঞতাতেও প্রায় ৩ বছরের ছোট।
‘নাটের গুরু’ দিয়ে শুরু ২০০৩ এ, পাশে অভিনেতা জিৎ। টলিউডে একটা নতুন রসায়ন তৈরি হয় জিৎ-কোয়েল এর। ‘বন্ধন’, ‘মানিক’, ‘হিরো’ করে এই জুটি পাকাপাকি স্থান করে নেয় টলিউডে। সেইসময় রঞ্জিত তনয়া কোয়েল মল্লিক একাই রাজ করছিলেন টলি ইন্ডাস্ট্রিতে। ২০০৬ এ কোয়েলের ৫ টি ছবি মুক্তি পায়। সেইবছর অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে অভিনয় করেন ‘এম.এল.এ ফাটাকেষ্ট’ মুভিতে। অর্থাৎ কোয়েলের জনপ্রিয়তা সেইসময় তুঙ্গে।
কথা বলব আরেক নায়িকাকে নিয়ে যিনি এই কোয়েলের থেকে প্রায় ৫ বছরের ছোট, কিন্তু যার মধ্যে জমে ছিল বহু বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা। বলিউডে পা রাখার সময় তাঁর ঠাঁই হয়েছিল তাঁর থেকে বয়সে অনেক বড় আদিত্য পাঞ্চোলির বাড়িতে। চলে লাঞ্ছনা, মানসিক নির্যাতন এমনকি যৌন নির্যাতন। সুশান্ত সিং এর মৃত্যুর পর পুরনো রাগ আরও একবার উগড়ে দিয়েছিলেন তিনি। ট্যাক্সিতে হোক বা পার্টিতে অবাধ যৌনতার লাঞ্ছনা সহ্য করা কঙ্গনা রানাউত এখন বলিউডের কুইন। খুব কম বয়সে মুম্বাইয়ের ভিতরের চেহারা দেখা মেয়ে প্রথম সুযোগ পান মহেশ ভাটের ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমায়। এই সিনেমার নির্দেশনায় ছিলেন অনুরাগ বসু। কঙ্গনাকে স্নেহ করতেন যা কঙ্গনা নিজেও স্বীকার করেছেন।
মুভি ‘গ্যাংস্টার’ যা ২০০৬ এ মুক্তি পায়। প্রধান চরিত্রে কঙ্গনা রানাউত। সেদিনও হয়তো কঙ্গনার অভিনয় জীবনে ফেরা হত না, যদি না রঞ্জিত মল্লিক তনয়া কোয়েল মল্লিক অফারটা ফিরিয়ে না দিতেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, বঙ্গসুন্দরী কোয়েল মল্লিকের কাছে মহেশ ভাট তাঁর ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমার জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু স্ক্রিপ্ট পছন্দ হয়নি সেদিন কোয়েলের। অন্তরঙ্গ মুহূর্ত এবং ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত থেকে নিজেকে বিরত রাখার জন্য সেই ছবি সেদিন তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ঐ যে প্রথমেই বললাম দুইজনেই অভিনেত্রী, একজন রাজকুমারী তো অন্যজন লড়াকু ভিখারিনী। সেদিন কঙ্গনার ভাগ্য সহায় হয়েছিলো বটে। তাইবলে ভুলেও ভাববেন না কোয়েল কঙ্গনার জন্য ইচ্ছা করে মুভি ছেড়ে দিয়েছেন। তা একেবারেই নয়। আসলে টলিউড এখন যেমন বেপরোয়া গতিতে এগোচ্ছে, সেইসময় টলিউড অতটাও বহির্মুখী বিশ্বের স্বাদ পায়নি। পাশ্চাত্যের কালচার হালে টলিউডে প্রবেশ করল। ২০০৪, ০৫, ০৬ এও শর্ট ড্রেস বা অন্তর্বাস পরে নাচাগানার দৃশ্য প্রবলভাবে আসেনি। ওয়েস্টার্ন কালচার তখন সবে মাত্র টলিউডে পা রেখেছে, অন্যদিকে মুম্বাই তো অন্য জগত। তাইতো ২০০৬ এর ‘গ্যাংস্তার’ সিনেমায় কঙ্গনা তাঁর সর্বস্ব প্রতিভা উজাড় করতে পেরেছিলেন। যেই জগতে থেকে তিনি অভিনেত্রী হওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন সেই জগত তাঁকে দেয় গ্যাংস্টারের মতো সুপার হিট মুভি। এভাবেই উত্থান হয় কঙ্গনার। এখন তিনি ‘মণিকর্ণিকা’, ‘কুইন’ ও প্রতিবাদী এক চরিত্র। বাংলার কোয়েল সেও কম যান না, স্পষ্ট কথা স্পষ্ট করে বলা এই মেয়ে এখন এক সন্তানের মা। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও ফিরছেন বড় পর্দায়, তবে সেই পুরনো আদর্শেই রয়েছেন কোয়েল।