BollywoodHoop Plus

Bela Bose: একসময় নাচে টেক্কা দিতেন হেলেনকেও, প্রয়াত হলেন স্বর্ণযুগের বাঙালি অভিনেত্রী

অঞ্জন দত্ত (Anjan Dutta)-কে কি তিনিই একসময় অনুপ্রাণিত করেছিলেন? হয়তো তা কোনোদিনই জানা যাবে না। কারণ না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন বেলা বোস (Bela Bose)। ষাট ও সত্তরের দশক জুড়ে ছিল বম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির স্বর্ণযুগ। সেই সময়ের অত্যন্ত পরিচিত মুখ বেলা। একের পর এক সিনেমায় বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। নৃত্যশৈলীতে টেক্কা দিয়েছেন হেলেন (Helen) সহ তৎকালীন নামী নৃত্যশিল্পীদের। মায়া নগরী মুম্বইয়ের বুকেই উনআশি বছর বয়সে প্রয়াত হলেন বেলা।

1943 সালের ব্রিটিশ অধ্যুষিত ভারতবর্ষের কলকাতা শহরে জন্ম হয়েছিল বেলার। কিন্তু 1951 সালে কলকাতার একটি ব্যাঙ্কে লালবাতি জ্বলার কারণে আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছিলেন বেলার পরিবার। ফলে তাঁরা পাড়ি দিয়েছিলেন বম্বেতে। মণিপুরি নৃত্যশৈলীতে পারদর্শী বেলা বম্বের বুকেই এক মর্মান্তিক পথ দূর্ঘটনায় পিতৃহারা হন। সংসার চালানোর জন্য তাঁর মা বম্বের এক হাসপাতালে নার্সের চাকরি নিলেও অত্যন্ত স্বল্প বেতনে কোনো সুরাহা হচ্ছিল না। ফলে মাত্র বারো বছর বয়সে বেলা ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসাবে সিনেমায় কাজ করা শুরু করেন। প্রকৃতপক্ষে, সিনেমায় কাজ করতে করতেই বিভিন্ন ঘরানার নৃত্যশৈলী আয়ত্ত করেছিলেন বেলা। ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসাবে কাজ করার সময়ই পরিচালক নরেশ সেহগল (Naresh Sehgal)-এর নজরে পড়েন তিনি।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Pavan Jha (@p1jha)

1959 সালে হিন্দি ফিল্ম ‘ম্যায় নশে মে হুঁ’-র টাইটেল সং-এ রাজ কাপুর (Raj kapoor)-এর বিপরীতে একক নৃত্যশিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন বেলা। তবে শুধু নৃত্যশিল্পী নন, বেলা ক্রমশ প্রবেশ করেন অভিনয়ের গন্ডিতেও। হিন্দি ফিল্ম ‘সওতেলা ভাই’-এ গুরু দত্ত (Guru Dutt)-এর বিপরীতে নায়িকা রূপে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে তাঁর। 1962 সালে ‘হাওয়া মহল’ ফিল্মে হেলেন (Helen)-এর বোনের ভূমিকায় নজর কেড়েছিলেন বেলা। 1964 সালে চন্দ্রশেখর (Chandrashekhar) পরিচালিত বিখ্যাত ফিল্ম ‘চা চা চা’-য় একটি দৃশ্যে কোনো গান ছাড়াই নাচ করেছিলেন হেলেন, বেলা ও অরুণা ইরানি (Aruna Irani)। পরবর্তীকালে একটি সাক্ষাৎকারে বেলা জানান, কোনোরকম মহড়া ছাড়াই ওই দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল। ‘সিআইডি 909’, ‘নাগিন অউর সাপেরা’-র মতো একের পর এক হিট ফিল্মের মাধ্যমে তৎকালীন হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর নায়িকার আসনের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছিলেন বেলা।

পাশাপাশি বাংলা থিয়েটারেও অভিনয় করতেন তিনি। ভালো ছবি আঁকতেন বেলা। লিখতেন কবিতাও। জাতীয় স্তরের সুইমিং চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্ত্বেও তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অনস্ক্রিন সুইমসুট পরার প্রস্তাব। অভিনেতা-পরিচালক আশীষ কুমার (Ashish Kumar)-কে বিয়ে করে ধীরে ধীরে কাজ কমিয়ে দিয়েছিলেন বেলা। 1980 সাল থেকে তিনি একরকম অন্তরালেই চলে যান। 2013 সালে প্রয়াত হন আশীষ। প্রায় দুশোর কাছাকাছি হিন্দি ও আঞ্চলিক ভাষার ফিল্মে কাজ করেছেন বেলা। ‘বন্দিনী’, ‘জয় সন্তোষী মা’, ‘প্রফেসর’-এর মতো আইকনিক ফিল্মের অংশ ছিলেন তিনি। শ্রীমতী মোহিনী গিরি (Mohini Giri)-র সাথে ভারতীয় সেনানীদের বিধবা স্ত্রীদের জন্য কাজ করেছেন বেলা। নির্দিষ্ট সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিও ছিল তাঁর অগাধ আগ্রহ।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ইদানিং বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন বেলা। গত পঁচিশ দিন যাবৎ মুম্বইয়ের ভাসি অঞ্চলের এমজিএম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। গত 20 শে ফেব্রুয়ারি ওই হাসপাতালেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন বেলা। 21 শে ফেব্রুয়ারি সকালে মুম্বইয়ের একটি শ্মশানভূমিতে বেলার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। চলে গিয়েছেন বেলা। রেখে গিয়েছেন এক কন্যা, এক পুত্র ও এক পৌত্রকে।

Related Articles