Hoop PlusRegional

বিশ্বকে বিদায় জানালেন এই মহান গায়িকা, শোকের ছায়া সংগীত জগতে

একের পর এক ইন্দ্রপতন ঘটে চলেছে বিনোদন জগতে। স্বর্ণযুগ ধীরে ধীরে লুপ্ত হতে চলেছে। অসমিয়া শিল্পী সুদক্ষিণা সরমা (Sudakshina Sarma)-ও ছিলেন স্বর্ণযুগের অংশ। সঙ্গীতশিল্পী সুদক্ষিণার কন্ঠস্বর মুগ্ধ করেছিল অসম সহ সমগ্র ভারতবর্ষকে। কিন্তু অমরত্ব মানুষের ভাগ্যে নেই। ফলে সুদক্ষিণাকেও তাঁর যাত্রাপথে ইতি টেনে পাড়ি দিতে হল সরস্বতীলোকে। 3 রা জুলাই উননব্বই বছর বয়সে প্রয়াত হলেন সুদক্ষিণা।

কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকা (Bhupen Hazarika)-র বোন হওয়া সত্ত্বেও নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলেছিলেন সুদক্ষিণা। হাজারিকা পরিবার বিখ্যাত ছিল অহমীয়া সঙ্গীতের জন্য। শৈশব থেকেই সুদক্ষিণা বড় হয়েছেন সাঙ্গীতিক পরিবেশে। বড় দাদা ভূপেনের কাছেই সুদক্ষিণার গানে হাতেখড়ি। মাত্র নয় বছর বয়সে অসমের আরও এক কিংবদন্তী সাংস্কৃতিক কর্মী বিষ্ণু রাভা (Vishnu Rava)-র তত্ত্বাবধানে কলকাতায় গ্রামোফোন রেকর্ডের জন্য চারটি গান রেকর্ড করেছিলেন সুদক্ষিণা। 1946 সালে মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi)-র শেষ রাজ্য সফরের সময় ‘জয় রঘুনন্দন’ গানটি তাঁকে গেয়ে শোনান সুদক্ষিণা।গান্ধীজি তাঁকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, তিনি যেন কখনও গান না ছাড়েন। গান ও সুদক্ষিণা সমার্থক হয়ে উঠেছিলেন। ‘পারঘাট’, ‘চিকমিক বিজুলি’ সহ একাধিক অহমীয়া চলচ্চিত্রে প্লে ব্যাক করেছেন সুদক্ষিণা।

বিয়ে করেছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী দিলীপ সরমা (Dilip Sarma)-কে। বিয়ের পর দিলীপ ও সুদক্ষিণা একসাথে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠান পরিবেশন করতেন। শুধুমাত্র সঙ্গীতজগৎ নয়, পাঁচের দশকে ‘ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন’-এর অসম শাখার সদস্য হেমাঙ্গ বিশ্বাস (Hemanga Biswas)-এর প্রভাবে দিলীপ ও সুদক্ষিণা উক্ত সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন। অসমের সাংস্কৃতিক আইকন জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়াল (Jyotiprashad Agarwal) রচিত সঙ্গীতের উপর ওয়ার্কশপ করাতে শুরু করেন তাঁরা। মূলতঃ তাঁদের হাত ধরেই জনপ্রিয় হয়েছিল জ্যোতিসঙ্গীত। প্রেম, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বাণীকে সঙ্গীতের মাধ্যমে সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দিলীপ ও সুদক্ষিণা।

দিলীপের মৃত্যুর পরেও সঙ্গীত পরিবেশন ছাড়েননি সুদক্ষিণা। তবে ভেঙে পড়েছিলেন দুই পুত্রের মৃত্যুতে। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা ঘিরে ধরেছিল তাঁকে। উপরন্তু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সুদক্ষিণা। গত 23 শে জুন গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আইসিইউ-এ ভর্তি করা হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে সুদক্ষিণাকে কেবিনে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। কিন্তু রবিবার রাতে হঠাৎই অসুস্থতা বাড়ে। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসকের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে সোমবার সকালে প্রয়াত হন কিংবদন্তী সুদক্ষিণা। রেখে গিয়েছেন তাঁর একমাত্র কন্যাকে। সুদক্ষিণার কন্যা ও তাঁর দৌহিত্র প্রয়াস মজুমদার (Prayash Majumdar) সঙ্গীতজগতের সাথে যুক্ত। এদিন সুদক্ষিণার পার্থিব শরীর প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর বাড়িতে। সেখানেই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান তাঁর পরিবার ও অনুরাগীরা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার জন্য সুদক্ষিণা তাঁর চোখ ও শরীর দান করেছিলেন। এই কারণে পরিবারের তরফে সুদক্ষিণার পার্থিব শরীর গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তরিত করা হয়েছে।

কিংবদন্তী গায়িকার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himant Biswa Sarma) টুইট করে লিখেছেন, সুদক্ষিণা ছিলেন রাজ্যের সাংস্কৃতিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর অতুলনীয় পরিবেশনা সমৃদ্ধ করেছিল সঙ্গীত জগতকে। সুদক্ষিণার প্রয়াণ রাষ্ট্রের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। প্রয়াত গায়িকার আত্মার শান্তি কামনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সুদক্ষিণার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি। ‘হুপহাপ’ (HOOPHAAP)-এর তরফে ভারতের উজ্জ্বল কিংবদন্তী গায়িকা সুদক্ষিণা সরমার আত্মার শান্তি কামনা করে একটিই বার্তা, সরস্বতীলোকে আপনি ভালো থাকুন।

whatsapp logo