সাইন্সের স্টুডেন্ট রূপা গাঙ্গুলি। সিনেমা তাঁর পছন্দের বিষয় ছিল না। স্কুল লাইফে গাইতেন রবীন্দ্র সঙ্গীত। শেষে গ্রাজুয়েশনের পরে পরিবার ও আত্মীয়দের জোরাজুরিতে টেলিভিশনের জন্য শর্ট স্টোরি দিয়ে শুরু করেন কেরিয়ার। এরপর বিজয় চট্টোপাধ্যায়ের ‘নিরুপমা’ ছবি দিয়ে বড় পর্দায় পা দেন তিনি। একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে পরিচালক বিজয় চট্টোপাধ্যায়ের সাথে পরিচয় হয় তাঁর, এরপরেই আসে সিনেমার প্রস্তাব। স্ক্রিপ্ট শোনার পরেই হিন্দি ছবি ‘নিরুপমা’ নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। যেহেতু অভিনয় শিল্প নিয়ে কোন পূর্ব পরিকল্পিত চিন্তা ভাবনা ছিল না তাই প্রথমে ইতস্তত ছিলেন তিনি, কিন্তু পরবর্তীতে রাজি হয়ে যান রূপা।
সেইসময় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও স্ক্রিন শেয়ার করেন রূপা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প দেনা পাওনা অবলম্বনে নির্মিত ছবিতে অভিনয় করেন। এছাড়া সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ের সঙ্গেও পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প স্ত্রীর পত্র অবলম্বনে তৈরি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন। ১৯৮৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত প্রায় ৪০ টি মুভিতে অভিনয় করেছেন। তিনি যে শুধু বাংলাতেই আবদ্ধ থেকেছেন তা নয়, কন্নাড-হিন্দি-ইংরাজি মুভিতেও সমান ভাবে অভিনয় করে গেছেন।
৫৪ টি অগ্রহায়ণ পার করে দেওয়া রূপা গাঙ্গুলিকে দর্শক আজও মনে রেখেছেন মহাভারতের ‘দ্রৌপদী’ হিসেবে। রূপার কথায় ১৯৮৮ সালে দূরদর্শনে ‘গণদেবতা’ নামে একটা হিন্দি সিরিয়াল কাজ করতেন তিনি। ঠিক তখনই বি আর চোপড়ার প্রযোজনা সংস্থার নজরে আসেন। সারা দেশের ২০০ অভিনেত্রীর অডিশন নেওয়া হয়েছিল, শুধুমাত্র ‘দ্রৌপদী’ চরিত্রের জন্য, অবশেষে অডিশন দিয়ে হয়ে উঠলেন সেরা ‘দ্রৌপদী’। অবশ্য এও গুঞ্জনে আছে যে এই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য জুহি চাওলাকে প্রথম অফার করা হয়, সেই সময় জুহি এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন, তাঁর হাতে তখন ছিল ‘কেয়া মত সে কেয়ামত তাক’ ছবি। এরপরেই অফার এসে পৌঁছায় রূপার কাছে। জুহির ফেরানো স্ক্রিপ্ট যেন সাপে বর হয়ে উঠলো রূপার কাছে।
২০১৫ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভারতীয় জনতা পার্টির একজন সদস্য রূপা গাঙ্গুলি। অভিনয়ের ব্যস্ততা কাটিয়ে এখন তিনি রাজনীতির ময়দানে, তবে আজও রূপা গাঙ্গুলির কথা উঠলেই ‘দ্রৌপদী’ চরিত্রের কথা আগে ভেসে ওঠে। এই লক ডাউনে নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’,আবারও পর্দায় পুনঃপ্রচার হচ্ছে। পুরনো ‘দ্রৌপদী’ আবারও টেলিভিশনের পর্দায় দর্শক টানছেন।
টিভির পর্দায় সফলতা পেলেও ব্যক্তিগত জীবনে বহু আঘাত পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে রাজনীতি নিয়েই মেতে রয়েছেন তিনি। সাইন্সের স্টুডেন্ট, রবীন্দ্র সঙ্গীত ভালোবাসা মেয়ে আসে অভিনয়ে, হিন্দিও শিখতে হয় তাঁকে, বিয়ে করেন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার ধ্রুব মুখোপাধ্যায়কে, বিচ্ছেদ হয় প্রায় ১৪-১৫ বছর পর। পরবর্তীতে নিজের চেয়ে ১৩ বছরের ছোট গায়কের সঙ্গেও দীর্ঘদিন লিভ-ইনে ছিলেন, যদিও সেই সম্পর্ক টেকেনি তাঁর। বর্তমানে একাকী সময় কাটাচ্ছেন ৯০ দশকের সেরা ‘দ্রৌপদী’। এই অঘ্রহায়নে ৫৪ তে পা দিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।