একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও সন্তানরা ভুল করলে আঙুল ওঠে মা-বাবার দিকে। গত শুক্রবার রাত থেকে বদলে গিয়েছে বেলঘরিয়ার দেওয়ানপাড়ার বাসিন্দা মিনতি মুখোপাধ্যায় (Minati Mukherjee)-র। তাঁর মেয়ে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (Arpita Mukherjee) রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)-র রক্ষিতা, এই কথা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না মিনতি। তাঁর সাফ কথা ছিল, মেয়ের কেলেঙ্কারি জানলে অনেক আগেই বিয়ের ব্যবস্থা করতেন তিনি।
দেওয়ানপাড়ার বাড়িতে থাকেন অসুস্থ মিনতি। বাড়ির দেওয়ালে দীনতার ছাপ স্পষ্ট। শুক্রবার রাত থেকে টিভি ও পরদিন থেকে খবরের কাগজের মাধ্যমে মেয়ের খবর জানতে পারছেন মিনতি। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা তাঁর শরীরে। বর্তমানে মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েছেন মিনতি। তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূলের কয়েকজন সদস্য তাঁর বাড়িতে এলেও পার্থ কোনোদিন আসেননি। এদিন ইডির তদন্ত আধিকারিকরা মিনতির বেলঘরিয়ার বাড়ি সার্চ করে কিছুই পাননি। অর্পিতার বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরে। মিনতিও ছোটখাট চাকরি করতেন। একসময় অত্যন্ত কষ্ট করে দুই মেয়েকে বড় করেছেন মিনতি। অর্পিতা তাঁর মায়ের যত্ন করতেন।
View this post on Instagram
মিনতি জানতেন, অর্পিতা সিরিয়াল ও ফিল্মে অভিনয় করেন। প্রযোজনা সংস্থার সাথেও যুক্ত রয়েছেন। কিন্তু তাঁর বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ও কোটি কোটি টাকা কার্যতঃ অবাক করে দিয়েছে মিনতিকে। মেয়ের অর্থ ভোগ করেননি, ফ্যামিলি পেনশন ছিল তাঁর সম্বল বলে জানিয়েছেন অর্পিতার মা। তবে ইদানিং অর্পিতার লাইফস্টাইল তাঁর মায়েরও চোখে পড়েছিল। মেয়েকে সতর্ক করেছিলেন মিনতি। নিজে কোনো গয়না পরেন না তিনি। হাতে একটা লোহার চুড়ি পরতেন। তা ভেঙে যাওয়ার পর আরেকটি নতুন লোহার চুড়ি কিনেছেন মিনতি। তাঁর স্পষ্ট উত্তর, অর্পিতা যদি দোষ করে থাকেন, তাহলে শাস্তি ভোগ করতে হবে তাঁকে।
অর্পিতা বাড়ি ফিরলে মিনতিও মেয়ের জন্য যা করণীয়, তা করবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি পেয়েও তা ছেড়ে মডেলিং শুরু করেছিলেন অর্পিতা। কাজ করেছেন একাধিক ওড়িয়া ফিল্মে, বাংলা ফিল্মেও অভিনয় করেছেন। নাকতলা উদয়ন সংঘের দুর্গাপুজোর ফেস মডেল ছিলেন অর্পিতা। রাজ্যবাসীর মতোই অর্পিতার মা মিনতি চান, সত্য উদঘাটন হোক, দোষীরা শাস্তি পাক। জীবনের পড়ন্ত বেলায় মিনতির গলায় আক্ষেপের সুর, ছেলে-মেয়েদের কর্মফল বাবা-মাকে ভোগ করতে হয়, তাঁকেও করতে হবে। আপাতত সত্যিটা শোনার অপেক্ষায় রয়েছেন মিনতি।
View this post on Instagram
