1958 সালের 24 শে সেপ্টেম্বর জন্ম হয়েছিল শিপ্রা (Shipra)-র। কিন্তু বিনোদন জগত তাঁকে চিনল মহুয়া নামে। একের পর এক হিট ফিল্ম টলিউডকে উপহার দিয়েও নিজে থাকতে পারলেন না মহুয়া। হয়তো তাঁকে থাকতে দেওয়া হল না। কারণ মহুয়া হয়তো গন্ডি থেকে বেরোতে চেয়েছিলেন। মহুয়া বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর বাবা ও স্বামীর কাছে তিনি হয়ে গিয়েছেন সোনার ডিম পাড়া হাঁস। বাবার খরচ চালানোর পাশাপাশি মহুয়াকে চালাতে হত তাঁর স্বামী তিলক (Tilak)-এর খরচ। কিন্তু হঠাৎই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল এক জুলাই মাসে।
আগুনে পুড়ে গিয়েছিল নব্বই শতাংশ। মহুয়া জানতেন, তিনি আর বাঁচবেন না। ফলে শিশুপুত্র গোলার দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন প্রিয় বান্ধবী রত্না ঘোষাল (Ratna Ghoshal)-কে। এখনও অবধি রত্নার ধারণা, আত্মহত্যা করেছিলেন মহুয়া। কিন্তু মহুয়ার ‘মাধু মা’ মাধবী মুখোপাধ্যায় (Madhabi Mukherjee)-কে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার বলেছিলেন, মহুয়ার মুখে টেপ লাগিয়ে দিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তদন্তে উঠে এসেছিল আরও একটি তথ্য। মহুয়ার গা জুড়ে ছিল কেরোসিনের গন্ধ। গায়ে কেরোসিন ঢাললে এই গন্ধ হওয়া সম্ভব। কিন্তু যদি সত্যিই স্টোভ বার্স্ট করে মহুয়ার অ্যাকসিডেন্ট হয়ে থাকত, তাহলে গায়ে তীব্র কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া সম্ভব ছিল না।
View this post on Instagram
রত্না জানিয়েছেন, দূর্ঘটনা (নাকি আত্মহত্যা)-র দিন বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত তাঁর বাড়িতে ছিলেন মহুয়া। বাংলাদেশে কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন তিনি। মহুয়ার ভিসার জন্য দরকার ছিল বাংলাদেশের প্রযোজনা সংস্থার চিঠি যা আসতে দেরি হচ্ছিল। ফলে মহুয়া, রত্নাকে অনুরোধ করেছিলেন, বাংলাদেশের হাই কমিশনারের সাথে কথা বলতে। অত্যন্ত টেনশনে ছিলেন মহুয়া। টেনশন হলে মদের নেশা করার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল তাঁর। রত্নার বাড়ি থেকে ফিরে অঞ্জন চৌধুরী (Anjan Chowdhury)-র ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন মহুয়া। সেখানে মদ খান তিনি। অঞ্জনের বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফিরে আবারও মদ খেয়েছিলেন তিনি। মাত্রা ছাড়িয়েছিল অ্যালকোহলের নেশা। এরপরেই নিজের গায়ে মহুয়া আগুন দিয়েছিলেন বলে ধারণা রত্নার।
কারণ রত্নার মতে, অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্খী ছিলেন মহুয়া। তাঁর ইচ্ছামতো কিছু না পেলে মহুয়ার মনে হত, তাঁর বেঁচে থেকে লাভ নেই। এমনকি তিলকের সাথে ঝগড়া করে নিজের হাতের শিরা কাটার চেষ্টা করেছিলেন ক্ষুর দিয়ে। তবে মাধবীর মতে, গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে মহুয়া সামনে থেকে লাগাতেন। পিছন থেকে নিজের গায়ে আগুন লাগানোর ঘটনা অস্বাভাবিক। গোলার জন্য দুধ গরম করতে গিয়েছিলেন যে স্টোভে তা অক্ষত ছিল। অথচ উঠে এসেছিল স্টোভ বার্স্ট করার তত্ত্ব।
মাধবী জানান, তিলক নির্দোষ ছিলেন। কিন্তু মহুয়ার শ্বশুর ও তাঁদের এক আত্মীয় পছন্দ করতেন না মহুয়াকে। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর ক্যালকাটা হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছিল মহুয়াকে। পরের দিন এসে পৌঁছেছিল মহুয়ার কাঙ্খিত বাংলাদেশের চিঠি। কিন্তু জীবনের শেষ লড়াই হেরে গেলেন মহুয়া। এত বছর পর আজও মহুয়ার মৃত্যু রহস্যাবৃত। চলে গিয়েছেন তাঁর স্বামী তিলক। মহুয়ার পুত্র গোলা ওরফে তমাল চক্রবর্তী (Tamal Chakraborty) পছন্দ করেন না ক্যামেরার সামনে আসতে। কিন্তু মহুয়া যে পরিবারের জন্য নিজেকে নিঙড়ে দিয়েছিলেন, মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন! এত সহজে সবাই সব কিছু ভুলে গেলেন! কোনোদিনই কি বিচার পাবেন না মহুয়া?
View this post on Instagram