গত দুদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে চলছে ঝড়ের ভ্রুকুটি। 26 মে ‘ইয়াস’ আসার কথা থাকলেও দিনের বেলা কিছু সময়ের জন্য রোদ উঠেছিল। কিন্তু এই ঝলমলে রোদ যে নীলাঞ্জন (Nilanjan Ghosh)-এর জীবনে তুমুল ট্রোলের ঝড় নিয়ে আসবে, তা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি।
নীলাঞ্জন ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট অ্যাকটিভ থাকেন। ‘ইয়াস’ আসার খবর আর পাঁচটা বাঙালির মতোই চিন্তিত করেছিল নীলাঞ্জন ও ইমন (Imon chakraborty)-কে। কিন্তু বারোটা নাগাদ ‘ইয়াস’ আসার খবর থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা ও হাওড়ায় তা শক্তি হারিয়ে ঘুর্ণিঝড়-এ পরিণত হয়েছিল। প্রশাসন থেকে সতর্কবার্তা ছিল, আম্ফানের মতো প্রভাব না পড়লেও পশ্চিমবঙ্গে ‘ইয়াস’ ক্ষয়ক্ষতি ঘটাবে। কিন্তু দীঘা, মন্দারমণি, তাজপুর, সুন্দরবন প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হলেও কলকাতা ও হাওড়ায় তুলনামূলক কম প্রভাব ফেলেছে ঝড়। সবাইকে অবাক করে দিয়ে রোদ উঠেছে। ফলে নীলাঞ্জন সোশ্যাল মিডিয়ায় মজা করে লিখেছিলেন, ঝড় আসার কথা বলা হয়েছিল না রোদ ওঠার কথা বলা হয়েছিল!
নীলাঞ্জনের এই সামান্য মজাদার পোস্ট চটিয়ে দেয় নেটিজেনদের। অযথা এই সাধারণ পোস্ট নিয়ে তৈরী হয় বিতর্ক। নীলাঞ্জনের অনুরাগীরা বলেন, তারকা হলেও নীলাঞ্জন একজন মানুষ। একটি মানুষ কি নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবেন না! অপরদিকে নীলাঞ্জনের বিরোধী পক্ষ বলতে শুরু করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে অমানবিক মন্তব্য করেছেন নীলাঞ্জন। প্রতিবেদকের বক্তব্য নীলাঞ্জনের এই সামান্য কথা যদি অমানবিক হয়, তাহলে বিগত কয়েক দিন ধরে ‘ইয়াস’ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মিম, কিংবদন্তী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (Hemanta mukhopadhyay)-এর একটি বিশেষ গান যাতে ‘ঝড়’ নিয়ে কিছু শৈল্পিক শব্দ রয়েছে, সেগুলি তো অনেক বেশি অমানবিক। সেগুলি নিয়ে কেন প্রতিবাদ করলেন না নীতিবাগীশরা?
অনেকেই নীলাঞ্জনকে বলেছেন, ডায়মন্ডহারবার বা দীঘার ক্ষয়ক্ষতির কথা ভাবতে। অনেকে অত্যন্ত অশ্লীল কটুক্তি করেছেন। ইমন প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেছেন, তাঁকে নিয়ে মানুষের বিরক্তির কারণেই অযথা নীলাঞ্জনকে ট্রোল করা হচ্ছে। ইমন প্রশ্ন করেছেন, প্রযুক্তির উন্নতি কি মানুষের মনকে বিকৃত করে তুলেছে? তবে নীলাঞ্জন পুরো ব্যাপারটাই যথেষ্ট স্পোর্টিংলি নিয়ে বলেছেন, নীতিবাগীশরা মানুষকে খুঁটিয়ে আনন্দ পান। নীলাঞ্জন জানিয়েছেন, তাঁর কাছে এই ঘটনা বিনোদন ছাড়া আর কিছুই নয়।
নীতিবাগীশদের উদ্দেশ্যে এবং প্রিভিলেজড-এর উদ্দেশ্যে একটাই বার্তা, ঝড় নিয়ে অযথা সোশ্যাল মিডিয়ায় তর্ক করা বন্ধ করুন। দীঘা, মন্দারমণি, ডায়মন্ডহারবার, সুন্দরবন সহ পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা এবং ওড়িশার বালেশ্বর, ধামড়া, পারাদ্বীপ সংলগ্ন এলাকাবাসীর বাসিন্দা এবং পশু-পাখিরা জীবনের অংশ। সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার করে ঝড় নিয়ে তর্ক, ট্রোল ও মিম না করাই উচিত। কারণ ভারতীয় সভ্যতার একটি অংশ তথা বাংলা ও ওড়িশার বৃহদাংশ কিন্তু এই ঝড়ের কারণে প্রায় সর্বহারা হয়ে বাঁচার লড়াই লড়ছেন। অন্তত তাঁদের কথা ভেবে একটু মানবিক হন।
ঘটনার রেশ কাটলেও, ট্রোলের বন্যা অব্যাহত। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ বন্টন করতে যান গায়িকা স্বয়ং। এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার পরই তীব্র আক্রমণ ধয়ে আসে ইমনের দিকে। কেন তিনি ফলাও করে ত্রাণের ছবি পোস্ট করেছেন সেই নিয়েও প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন অনেকে। বিকৃত মানসিকতার ট্রোল ও মিম নিয়ে বারংবার সরব হয়েছেন ইমন। তাকে এবং নীলাঞ্জনকে নিয়ে চলা ক্রমাগত ট্রোল কি যুক্তিযুক্ত নাকি বিকৃত মানসিকতার পরিচয়!
View this post on Instagram