whatsapp channel

‘কী সুন্দর মুখ তোমার! গান করো?’ কানন দেবীর ঠোঁট ছুঁয়ে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ

দেশে তখন ব্রিটিশ শাসন চলছে। সেই সময় থেকেই রক্ষিতা ব্যাপারটা ছড়িয়ে পড়ে। আগেকার দিনে একজন পুরুষ তাও একাধিক বিয়ে করতেন এবং স্ত্রীর সন্মান দিতেন। এখনও বহু মানুষ আছেন একের অধিক…

Avatar

HoopHaap Digital Media

দেশে তখন ব্রিটিশ শাসন চলছে। সেই সময় থেকেই রক্ষিতা ব্যাপারটা ছড়িয়ে পড়ে। আগেকার দিনে একজন পুরুষ তাও একাধিক বিয়ে করতেন এবং স্ত্রীর সন্মান দিতেন। এখনও বহু মানুষ আছেন একের অধিক বিয়ে করছেন। কিন্তু ভাবুন, যিনি রক্ষিতা অর্থাৎ যিনি স্ত্রীর সন্মান পান না অথচ তার জীবন দারিদ্র্য ভরা এবং কোলে দুই কন্যা সন্তান সেই মায়ের ও মেয়েদের জীবন কতটা অভাগা হতে পারে তা হয়তো অনুমান করা যায়। হ্যাঁ, আজ কথা হবে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম গুণী অভিনেত্রী কানন দেবীকে নিয়ে যিনি কানন বালা নামেও পরিচিত।

কানন ছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রে নায়িকাদের মধ্যে প্রথম গায়িকা এবং বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম তারকা। বহু প্রতিভার কানন দেবী অভিনয়ের পাশাপাশি নৃত্য এবং সঙ্গীতেও ছিলেন পারদর্শী। প্রায় ৭০-এর অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়াও বিজ্ঞাপন চিত্রেও দেখা যায় তাকে।

'কী সুন্দর মুখ তোমার! গান করো?' কানন দেবীর ঠোঁট ছুঁয়ে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ

কানন দেবীর জন্ম ১৯১৬ সালে হাওড়া, বেঙ্গল, ব্রিটিশ ভারতে। অভিনেত্রীর বাবা রতন চন্দ্র দাস ছিলেন সওদাগর অফিসের কেরানি। তার বাবার একটি ছোট দোকানও ছিলো। নয় বছর বয়সে তার বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর কাননের মা তার দুই কন্যাকে নিয়ে এক দুরসম্পর্কের আত্নীয়ের বাড়িতে রাঁধুনী ও ঝিয়ের শুরু করেন। শুরু হয় দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই। এই দারিদ্রতার কারণে কানন মাত্র বার-তের বছর বয়সেই ম্যাডানের স্টুডিওতে হাজির হন অভিনয় করতে। এবং সেই সময়েই নির্বাক চলচ্চিত্র জয়দেবে (১৯২৬) অভিনয় করেন। আজ তার জন্মদিবস হিসেবে এই প্রতিবেদন, কিন্তু তার জন্ম দিবসের নির্দিষ্ট তারিখ নেই। এক মতে স্থির হয়েছে কানন দেবীর জন্ম ২২ এপ্রিল, ১৯১৬। আরেক মতে— যা আরওই সম্ভাব্য— সালটা ১৯১২।

নাচে, গানে অভিনয়ে পারদর্শী এই দরিদ্র মায়ের মেয়েকে ভারত সরকার ১৯৬৪ সালে পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করে। এবং ১৯৭৬ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন। কি আশ্চর্য, এই মেয়ে যখন পেটের ভাত জোগাড় করার জন্য স্টুডিও পাড়ায় আসেন তখন অনেকে তার দারিদ্রতার সুযোগ নেয়।

শিল্প মাধ্যমে অসাধারণ অবদানের জন্যে ভারত সরকার তাকে ১৯৬৪ সালে পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন।নানাভাবে তাকে অর্থের লোভ দেখিয়ে নগ্ন দৃশ্যে অভিনেয়ের জন্যে বাধ্য করা হতো। যেমন, ১৯৩১ সালে মুক্তি পায় একটি পূর্ণাঙ্গ সবাক চলচ্চিত্র। সেখানে জয়তিশ বন্দোপাধ্যায়ের ‘জোর বরাত’ ছবিতে একটি দৃশ্যে নায়ক কাননকে জড়িয়ে ধরে ঠোটে চুমু খায়। এতে তিনি অপমানিত ও ব্যাথিত বোধ করেন, কিন্তু পরিচালক এমন নির্দেশ দেন। এখানেই শেষ নয়, ১৯৩৫ সালে সতীশ দাশগুপ্তের ‘বাসব দত্তা’ চলচ্চিত্রে তার অনিচ্ছায় নগ্নতার প্রদর্শন করতে হয় তাকে। অভিভাবকহীন এই মেয়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে পরিচালকেরা অর্থিকভাবেও তাকে ঠকাতেন।

সুচিত্রা সেনের অনেক আগে বাংলা সিনেমায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন একা হাতে তিনি হলেন এই কানন বালা। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত কানন দেবীর জন্য সবচেয়ে বেশি খ্যাতির সময় ছিল। এরপর তিনি সম্ভ্রান্ত কানন দেবীতে পরিণত হন কানন বালা থেকে। ১৯৪৪ এর পর থেকে তিনি রোমান্টিক নায়িকার বদলে স্ত্রী ও মায়ের ভূমিকাতেই বেশি অভিনয় করেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে তিনি শ্রীমতি পিকচার্স গড়ে তোলেন যার বেশির ভাগ ছবিই ছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে।

'কী সুন্দর মুখ তোমার! গান করো?' কানন দেবীর ঠোঁট ছুঁয়ে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ

ইচ্ছা, মনোবল, ও লড়াই করার মানসিকতা থাকলে যে ভবসাগর পাড় করা যায় তা বুঝিয়েছেন কানন দেবী। শুধুমাত্র দারিদ্রকে অবলম্বন করে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন। একটা সময় রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এই কানন কন্যাকে চুমু দিয়ে আদর করে বলেছিলেন, “কী সুন্দর মুখ তোমার! গান করো?”

whatsapp logo
Avatar
HoopHaap Digital Media