কম্পিউটার ও প্রযুক্তির যুগে হারিয়ে যাচ্ছে শখের সেই হলুদ রঙের রেলের টিকিট
ছেলেবেলায় বেড়াতে যাওয়া কিংবা মামার বাড়ি ট্রেনে করে যাওয়া মানেই হাতে চলে আসত দুটো তিনটে পিচবোর্ডের হলুদ রঙের টিকিট। ট্রেন থেকে নামার পর বাবা, মায়ের কাছ থেকে টিকিট গুলি জোগাড় করে সযত্নে রেখে দেওয়া কোনো ব্যাগের মধ্যে। এমন ঘটনা ছেলেবেলায় অনেকেই ঘটিয়েছেন। গ্রিটিংস কার্ড, বিয়েবাড়ির কার্ড, বাসের টিকিট, মেনু কার্ড এইসব জমানোর পাশাপাশি সে যুগের ছেলেমেয়েরা ট্রেনের টিকিটও সংগ্রহ করত। বাবা-মায়েরা যদিও এগুলোকে জঞ্জাল ভাবতেন তবে তারাও কিন্তু ছোটবেলায় এমন কোন না কোন কাজ করে থাকতেন। তাই ছেলেমেয়েদের উপর যত রাগই হোক তারাও বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন।
বর্তমানের যুগ পাল্টেছে। পিচবোর্ডের টিকিটের জায়গায় এসেছে পাতলা ফিনফিনে কাগজের টিকিট। তবে এখনকার ছেলেমেয়েরা আর গ্রিটিংস কার্ড, বাসের টিকিট, বিয়ের কার্ড, মেনু কার্ড ট্রেনের টিকিট জমায় না। কারণ তাদের হাতে সময় নেই। তারা অবসর কাটায় ভিডিও গেম খেলে। মা-বাবারও ছোট ছোট কচি কাঁচাদের হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন তুলে দিতে পেরে নিজেদের ছেলেমেয়েদের বেশ স্মার্ট বলে ভাবতে ভালোবাসেন। তবে এখন এই ডিজিটাল যুগে গ্রিটিংস কার্ড হারিয়ে গেছে। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের মাধ্যমেই চলে হ্যাপি নিউ ইয়ার এর শুভেচ্ছা বার্তার আদান প্রদান।
তবে এক-দু দিনের জন্য হলেও সেই পুরনো স্মৃতিকে উস্কে দিল কলকাতার রেলের দফতরে অগ্নিকাণ্ড। এই অগ্নিকাণ্ডের জেরে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক সাধারণ মানুষ। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড ফিরিয়ে এনেছে পুরনো দিনের স্মৃতি। শ্রীরামপুর থেকে কলকাতায় কাজে যাবেন বলে টিকিট কাটতে দাঁড়িয়ে ছিলেন শ্রীরামপুরের শংকর দাস। টিকিট কাটতে গিয়েই তার মেজাজ একেবারে বিগড়ে যায়। একেই কাজের তাড়া তার উপরে টিকিট দিতে বিলম্ব হচ্ছে। সব মিলিয়ে একেবারে বিশ্রী অবস্থা। তবে মেজাজ খারাপের মধ্যেও ঘটে গেল এক অসাধারণ ঘটনা। অবশেষে কাউন্টারে যখন হাতে টিকিট পেলেন দেখলেন সেই খাকি রঙের শক্ত পিচবোর্ডের টিকিট। যার উপরে মোটা কালো কালিতে লেখা রয়েছে শ্রীরামপুর-হাওড়া।
হাতে টিকিট পেয়েই কয়েক যুগ পেছন ফিরে গেলেন তিনি। মনে মনে ভাবতে লাগলেন এই কম্পিউটারের যুগে তার হাতে এসব কি? তবে শংকর বাবুর মতন এমন স্মৃতিচারণা কিন্তু গত মঙ্গলবার অনেকেই করেছেন কারণ গত সোমবার স্ট্যান্ড রোডের পূর্ব রেলের সদর দফতরে যে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড ঘটে যায় তাতে অনলাইনে টিকিট বুকিং পরিষেবা সোমবার রাত থেকেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কাগজের কম্পিউটারাইজড টিকিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না অগত্যা এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সার্ভার পুরোপুরি ভষ্মীভূত হয়ে যাওয়ায় শহরতলি ট্রেনের কম্পিউটারাইজড টিকিট পরিষেবা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। সেকেন্দ্রাবাদের সার্ভার এর মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি, মানুষের মৃত্যু, চারিদিকে হাহাকার সবমিলিয়ে যা ঘটেছে তা কখনই কাম্য নয়। তবে একদিনের জন্য হলেও হাতের পিচবোর্ডের টিকিট পেয়ে অনেকেই যে নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।