বর্তমান ভারতে নারী-পুরুষের মেলবন্ধন সর্বত্র বিরাজমান। কিন্তু আজকের যুগে দাঁড়িয়ে পুরুষ সমাজের কাছে নারীরা আর পিছিয়ে নেই, আছে সাহসিকতার মনোভাব, পাশাপাশি আছে হাজারো ঝড় ঝঞ্জার মধ্যেও নিজেদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখা। প্রাচীণযুগ থেকে মধ্যযুগে, তাদের অবস্থার অবনতি আর কয়েকজন সমাজসংস্কারকের প্রচেষ্টায় আবার সমমর্যাদার অধিকারে উত্তরণের ইতিহাস বেশ ঘটনাবহুল।
নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। আধুনিক ভারতে নারীরা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার অধ্যক্ষ, বিরোধী দলনেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করছেন, এবং আশা করি আগামীদিনেও তা বজায় থাকবে। এবার চলে আসি আমাদের প্রধান বিষয়বস্তুতে তা হল গোটা ভারতের যে নারীরা পিছিয়ে নেই কোনও অংশে এর আগে তার খানিকটা প্রমাণ মিলেছে ইন্দিরা গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতন নারীরা রাজনৈতিক দলে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই।
শিক্ষা, অভিনয়, ওকালতি, ডাক্তার সব প্রফেশনের অভিজ্ঞ নারীরা এখন রাজনীতিতে তাদের পা রাখছেন বা যোগ দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অভিনয় জগতের নাম বারবার প্রধান শিরোপায় উঠে আসে। শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রে নয় অন্য অনেক বিষয়ে অভিনয় জগতের মানুষকে হয়তো মানুষ প্রাধান্য দেয় বেশি। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি, বেশকিছু চলচ্চিত্র অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রেও।
কিভাবে এই সকল অভিনেত্রী নিজেদের প্রিয় প্রফেশন কে ছেড়ে রাজনীতিতে নাম লেখালেন চলুন চটপট জেনে নেওয়া যাক,
অভিনেত্রী শতাব্দী রায় বঙ্গ ইন্ডাস্ট্রির একটি উজ্জ্বলতম অভিনেত্রী, যিনি বাংলা ছবিতে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আটের দশকের শেষের দিক থেকে। অজস্র মুভিতে নায়িকা হিসেবে কাজ করলেও একসময় তিনি ফিল্ম জগত থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিয়ে শেষমেশ রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে ১৫ তম লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি। ২০১৪-য় ১৬তম লোকসভা নির্বাচনে শতাব্দী পুনরায় নির্বাচিত হন। এবং নারী কল্যাণ ও ন্যায় বিচার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসাবেও বহু কাজ করেন তিনি। সম্প্রতি তাকে ঘিরে বেশ গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছিল দাবি উঠেছিল তিনি চুপিসারে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন কিন্তু আদতে তা হয়নি। তৃণমূলেই রয়েছেন।
অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলীও, একজন ভারতীয় অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও অবশেষ জীবন কিন্তু তাঁর রাজনীতিবিদ হিসেবেই অতিবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে তিনি বিজেপি নেত্রী। এই অভিনেত্রী ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান মুখ এবং মৃণাল সেন, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ ও ঋতুপর্ণ ঘোষের মত প্রখ্যাত পরিচালকদের ছবিতে অভিনয় করেছেন। কিন্তু অভিনয় জগত থেকে বেরিয়ে ২০১৫ সালে তিনি যোগ দিয়েছেন রাজনীতিতে, তাঁর মতে রাজনীতির মাধ্যমেই এ দেশে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে কাছে পৌঁছনো যায়। তাই রাজনীতিতে আসা তাঁর।
অভিনেত্রী লকেট চ্যাটার্জি, তিনিও একজন সফল অভিনেত্রী তা সত্ত্বেও এখন তাঁর সম্পূর্ন জীবন এখন বিজেপি দলীয় সংগঠনকে কেন্দ্র করে। অভিনেতা যীশুর সঙ্গে একাধিক বাংলা ছবিতে কাজ করলেও শেষমেশ অভিনয় জগত থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টির মহিলা শাখার সভানেত্রী তিনি। তবে লকেট রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরে। কিন্তু ২০১৫ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন লকেট। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে হুগলি কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জেতেন তিনি। মহিলা নেত্রী হয়ে তাঁর অনেক প্রভাবও রয়েছে হুগলি জেলায়।
এরপর হট টপিকে নাম অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীর নাম। ‘গানের ওপারে’ ধারাবাহিকের ‘পুপে’ চরিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জগতে আসেন তিনি। চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পূর্বে একজন মডেল ছিলেন তিনি তারপর থেকেই টলিউড কে দিয়ে যাচ্ছেন বহু ছবি। অভিনয় কে সঙ্গে রেখেই ২০১৯ সালের ভারতের লোকসভা নির্বাচনে তাকে যাদবপুর থেকে প্রার্থী করে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল জেতার পর থেকেই তিনি যাদবপুরের সাংসদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। চলছে সিনেমার শুটিং পাশাপাশি দাঁপিয়ে করছেন রাজনেতৃত্ব। তবে সাংসদ পদে থেকে তাকে অনেকবার বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছিল কিন্তু সবকিছুকে সামলে তিনি এখন রাজনীতি এবং অভিনয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে দাঁড়িয়ে। কারণ সাধারণ মানুষও তাকে ভালোই সাপোর্ট করেন।
সর্বশেষে যার নাম তাকে মোটামুটি সবাই চেনেন। ইদানিং কন্ট্রোভার্সিয়াল টপিকে যে বারবার খবরের শিরোনামে উঠছে তিনি হলেন অভিনেত্রী নুসরত জাহান। টলিউডের একটু জনপ্রিয় মুখ। তাঁর অভিনয়, রিলেশন, রাজনীতি প্রতিটা ক্ষেত্রে তিনি বর্তমানের নিউজ, নেট দুনিয়ায় এক্কেবারে হট টপিক। সম্প্রতি তাঁর স্বামী নিখিলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উঠেছিল জোরকদমে জল্পনা, তারপর অভিনেতা যশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উঠেছিল অনেক গুঞ্জন। আপাতত সব সমস্যা কাটিয়ে উঠে নায়িকা এখন অনেকটাই কুল। তবে তিনি অভিনয় জীবনে পা রাখেন জিৎ-এর বিপরীতে অভিনয় করে, ‘শত্রু’ ছবির মাধ্যমে। তারপর থেকেই তিনি গোটা কয়েক সাফল্যমন্ডিত ছবি উপহার দিয়েছেন টলিউডকে। তবে অভিনয়ের পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন রাজনীতির কাজকর্মও। তিনি তৃণমূলের হয়ে ২০১৯ সালের এপ্রিলে রাজনীতির ময়দানে নামেন। তিনি সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জেতেন এবং সেখানকার সাংসদ হন। তবে রাজনীতিতে নামার পর তাঁকে অনেক বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয়। তবে আমজনতাকে তিনি সবসময় পাশে পেয়েছেন। দেখা যাক আগামী রাজনীতিতে কার ভাগ্যে কি সাফল্যতা লুকিয়ে আছে! তারই অপেক্ষা!