তাঁদের দেখে একসময় অনেকেই মনে করতেন ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’। কয়েক মাস আগে ঘটে গিয়েছে সেই ঘটনা। প্রেক্ষাগৃহে রিলিজ করেছে ‘প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা’। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee)-র প্রযোজনায় তৈরি এই ফিল্মের প্রোমোশনে উপস্থিত ছিলেন তিনি নিজে ও অবশ্যই ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta)। মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar) ও মহানায়িকা সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen) -এর পর বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম হিট জুটি প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণা। অনেকেই মনে করেন, প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণার মধ্যে ছিল প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু তা কি সত্যিই গুঞ্জন নাকি এটাই সত্য?
View this post on Instagram
এই প্রসঙ্গে একবার মুখ খুলেছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)। তিনি বলেছিলেন, ধোঁয়া যখন উঠেছে তখন আগুন লেগেছে। শুধুমাত্র মিঠুনই নন, সেই সময় দর্শকদের পাশাপাশি সেলেবদের একাংশ এই অভিমত পোষণ করতেন। অথচ খুব অদ্ভুত ব্যাপার হল, প্রফেশনাল ইভেন্ট ছাড়া কোনোদিনই কোনো পার্টি বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে একসাথে দেখা মেলেনি প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণার। এই প্রসঙ্গেই চলে আসে বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের কথা যখন অনেকেই মনে করতেন উত্তম ও সুচিত্রার মধ্যে রয়েছে প্রেমের সম্পর্ক। এই গুঞ্জনের আঁচ এসে লেগেছিল মহানায়কের পরিবারেও। কিন্তু বুদ্ধিমতী গৌরী দেবী (Gauri Devi) সেদিন পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন। তবে সুচিত্রার পরিবারে বহুদিন অবধি তা নিয়ে অশান্তি জারি ছিল। হয়তো এটাই ছিল উত্তম – সুচিত্রা জুটির সফলতা যার কারণে তাঁদের অনস্ক্রিন রসায়নকে মানুষ বাস্তব ভাবতে শুরু করেছিলেন। একই ঘটনা ঘটল প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণার ক্ষেত্রেও।
View this post on Instagram
তাঁদের সম্পর্কের গুঞ্জন যখন রটে, তখন প্রসেনজিৎ বিবাহিত। তাঁর জীবনে রয়েছেন দ্বিতীয় স্ত্রী অপর্ণা গুহঠাকুরতা (Aparna Guhathakurta)। প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণার জুটিকে অন্তত একবার সকলে ছুঁতে চাইতেন। দর্শকরা তাঁদের বাস্তব জীবনের সাথে এই জুটিকে মিলিয়ে নিতে পারতেন অনায়াসেই। সেই সময় প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণা অভিনীত ফিল্মগুলি ছিল মূলতঃ কমার্শিয়াল। এই ধরনের ফিল্মের জনপ্রিয়তা গ্রামীণ অঞ্চলগুলিতে ছিল অসামান্য। বাংলা জুড়ে এই জুটি ছিল দারুণ হিট। সেলিব্রিটিদের একাংশের আজও অভিযোগ, এই জুটির কারণেই নাকি তাঁরা প্রাপ্য স্থান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অনেকে হারিয়েছেন কাজ। কিন্তু প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণার পরিবর্তে প্রকৃতপক্ষে সেদিন প্রযোজক ও পরিচালকরাই এই ঘটনার জন্য দায়ী। কারণ বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিশ্বায়ন তখনও হয়নি। অন্য ঘরানার বাংলা ফিল্ম শুধুমাত্র মধ্যবিত্তের ড্রইং রুমেই সীমাবদ্ধ। ফলে টলিউডের মতো ছোট ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম ভরসা ছিলেন প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণা। তাঁদের জনপ্রিয়তায় ভর দিয়ে প্রযোজকদের ঘরে উঠে আসত টাকা। ফিল্ম পরিণত হত ব্লকবাস্টার হিটে। ঋতুপর্ণার মতে, কখন যে কাজ করতে করতে রাত ভোর হয়ে যেত বুঝতে পারতেন না তাঁরা। একশো শতাংশ কমিটেড ছিলেন কাজের প্রতি। ডেডিকেশন ও হার্ডওয়ার্ক তৈরি করেছিল এই জুটির হারমোনি। ফলে উত্তম-সুচিত্রার মতোই তাঁদের অনস্ক্রিন রসায়ন দেখে অনেকেই মনে করতেন বাস্তবেও হয়তো তাঁরা প্রেমিক-প্রেমিকা। নিঃসন্দেহে তা প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটির সফলতা। বাস্তবে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে না জড়িয়েও চিরন্তন রূপ দিয়েছেন অভিনীত চরিত্রগুলির সম্পর্ককে।
পরিশেষে অনেকেই হয়তো বলবেন, কেন হয় না আরও একটা উত্তম-সুচিত্রা অথবা প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা। এর মূল কারণ দর্শকদের চাহিদা। বিশ্বায়ন ও পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে দর্শকদের মনোভাবকে। বিনোদন বর্তমানে বাস্তবের সম্মুখীন। বদলেছে ফিল্মের ঘরানা, চিত্রনাট্য। বেড়ে গিয়েছে প্রতিযোগিতাও। ফলে জুটি নয়, বর্তমানে প্রয়োজন সঠিক কাস্টিং-এর। এই কারণেই জুটির কনসেপ্ট সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন না হলেও কোথাও চিড় তো খেয়েইছে। কারণ পরিবর্তন তো প্রকৃতির নিয়ম।
View this post on Instagram