whatsapp channel

রঞ্জিত মল্লিকের উৎসাহেই স্ক্রিপ্ট লিখতে শুরু করেছিলেন অঞ্জন চৌধুরী, তারপর বাকিটা ইতিহাস!

মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar)-এর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে নেমে এসেছিল কর্মহীনতার অন্ধকার। বহু কলাকূশলীর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, দারিদ্র্য ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল বাংলা সিনেমাকে। তখনও ফিল্ম ‘সিনেমা’ নামেই পরিচিত…

Avatar

HoopHaap Digital Media

Advertisements
Advertisements

মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar)-এর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে নেমে এসেছিল কর্মহীনতার অন্ধকার। বহু কলাকূশলীর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, দারিদ্র্য ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল বাংলা সিনেমাকে। তখনও ফিল্ম ‘সিনেমা’ নামেই পরিচিত ছিল। বাংলা ইন্ডাস্ট্রি সবে তখন হাঁটতে শিখেছে। সেই সময় মহানায়কের চলে যাওয়া বজ্রপাত ঘটিয়েছিল ইন্ডাস্ট্রিতে। অত্যন্ত খারাপ সময়ে ইন্ডাস্ট্রিকে উজ্জীবিত করতে যে কজন পরিচালক ও কলাকূশলীরা এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী (Anjan Chowdhury)।

Advertisements

Advertisements

সেই সময় তিনি বাড়ির বধূদের লড়াইকে কমার্শিয়ালি জনসমক্ষে নিয়ে এসেছিলেন। ‘মেজ বৌ’-এর মতো বেশ কিছু সিনেমা যেগুলির কাহিনী মূলতঃ ছিল বাড়ির বৌয়ের অত্যাচারের প্রতিবাদে একই সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানো ও পরিবারের দুঃসময়ে তাঁদের পাশে থাকার কথা। নারীশক্তিকে অন্য রূপে দেখাতে চেয়েছিলেন অঞ্জন চৌধুরী। বাড়ির নিপাট গৃহবধূর মধ্যেও তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন মা দুর্গার রূপ। কিন্তু অঞ্জন চৌধুরী হয়ে ওঠার নেপথ্যে ছিলেন একজন মানুষ। তাঁর নাম রঞ্জিত মল্লিক (Ranjit Mullick)।

Advertisements

বাংলা সিনেমায় রঞ্জিত তখন রীতিমতো প্রতিষ্ঠিত নায়ক। সেই সময় অঞ্জন ‘চুমকি’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। সেই পত্রিকার তরফে রঞ্জিতের সাক্ষাৎকার নিতে তিনি এসেছিলেন। সময়টা ছিল 1974-75 সাল। সেই সময়ে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’, ‘মৌচাক’-এ অভিনয় করে রীতিমত প্রশংসিত রঞ্জিত। ‘চুমকি’ পত্রিকাটি পড়ে তাঁর ভালো লেগেছিল। অঞ্জনের লেখনী তাঁর দারুণ লেগেছিল। তার উপর সিনেমা সম্বন্ধে অঞ্জনের অসাধারণ জ্ঞান রঞ্জিতের নজর কেড়েছিল। রঞ্জিত একজন অঞ্জনকে বলেন, তাঁর লেখার হাত অসাধারণ। তিনি অনায়াসেই ফিল্মের চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখতে পারেন। অঞ্জন নিজেও হয়তো এইরকম কিছু পরিকল্পনা করেছিলেন। সিনেমার প্রতি তাঁর আকর্ষণ বরাবর ছিল। এরপরেই ‘শঠে ‍শাঠ‍্যং’, ‘লাল গোলাপ’, ‘সংকল্প’-এর মতো ফিল্মের চিত্রনাট্য লেখেন অঞ্জন। ফিল্মগুলি সুপারহিট হয়। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে শুরু হয় চিত্রনাট্যকার অঞ্জন চৌধুরীর জার্নি।

Advertisements

কিন্তু শুধু চিত্রনাট্যেই থেমে থাকতে চাননি অঞ্জন। নিজের বিস্তার ঘটাতে চেয়েছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ফলে এলেন পরিচালনায়। সেই সময়ের কিছু নীতিবাগীশ বোদ্ধা তাচ্ছিল্য করলেন তাঁকে। কারণ তিনি কোনোদিন কারো সহকারী পরিচালক ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে, রঞ্জিতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হওয়ার সুবাদে প্রায়ই তাঁর শুটিং ফ্লোরে উপস্থিত থাকতেন অঞ্জন। রঞ্জিত সেই সময় দীনেন গুপ্ত (Dinen Gupta), অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় (Aravinda Mukhopadhyay)-দের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করছেন। অঞ্জন ফ্লোরে বসে দেখতেন, কিভাবে কাজ হয়! হয়তো বাংলা সিনেমার বিধিলিপি তখন তাঁর হাতেই লিখেছিলেন ভাগ্যবিধাতা।

অঞ্জন চৌধুরীর পরিচালনায় তৈরি হল প্রথম ফিল্ম ‘শত্রু’। বাণিজ্যিক ভাবে চূড়ান্ত সফল এই ফিল্ম বাঁচিয়ে দিল বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রি ধীরে ধীরে তাঁর হাত ধরে পরিণত হল ‘টলিউড’-এ। শত্রুর অসাধারণ স্ক্রিপ্ট ও রঞ্জিত মল্লিকের অভিনয় সকলের নজর কাড়ল। এই ফিল্মে অভিনয় করতে রঞ্জিতকে তাঁর লুকে পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। পুলিশের চরিত্রে রঞ্জিতের গোঁফ থাকবে, এই আইডিয়া ছিল অঞ্জনের। এরপর থেকেই গোঁফ রঞ্জিতের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হয়ে ওঠে। রোম‍্যান্টিক হিরো রঞ্জিত মল্লিকের প্রতিবাদী ইমেজ তৈরি হয়।

অঞ্জনের চিত্রনাট্য তৈরি হত বাস্তবের মাটি থেকে। ড্রামায় পরিপূর্ণ চিত্রনাট্যে যে বড় ভাই সাত চড়ে রা কাড়ে না, সে ছোট ভাই তার বৌয়ের গায়ে হাত তুললে তাকে বেল্ট দিয়ে পেটায়। ‘শত্রু’ ফিল্মের সংলাপের ক্যাসেট রেকর্ড বিক্রি হয়েছিল। স্ক্রিপ্ট রিডিং-এর সময় রঞ্জিত বলেছিলেন ফিল্মটি বাম্পার হিট হবে। হয়েও ছিল তাই। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাননি অঞ্জন। ‘নবাব’, ‘ইন্দ্রজিৎ’, ‘মেজ বৌ’, ‘ছোট বৌ’ একের পর এক হিট ফিল্ম তখন তাঁর ঝুলিতে। রঞ্জিতের পরিবারের সঙ্গেও তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু খুব অল্প বয়সে থেমে গিয়েছিল অঞ্জন চৌধুরীর বিজয় রথের চাকা। ততদিনে টলিউডের মরা গাং-এ বান ডেকেছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইন্ডাস্ট্রি। চলে গেলেন অঞ্জন চৌধুরী। কিন্তু রেখে গেলেন অনেক সম্ভাবনাময় এক ইন্ডাস্ট্রিকে যার পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে সৃষ্টিশীলতা।

whatsapp logo
Advertisements
Avatar