‘মনুষ্যত্ব, বিবেক, বুদ্ধি সব ঢুকিয়ে…’ বন্ধু কাঞ্চন মল্লিককে ত্যাগ করলেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী
আর জি কর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। রাজ্যের বাইরে দেশ দেশের বাইরে গোটা বিশ্বের মানুষ যে যেখানে রয়েছেন এবং যেমন ভাবে পেরেছেন এই বিষয়ের প্রতিবাদ করেছেন এবং বিচার চেয়েছেন। বাংলা জুড়ে যেখানে সেখানেই মাঝে মধ্যেই মুহুর্মুহু প্রতিবাদের আওয়াজ গর্জে উঠছে। সমাজের সকল স্তরের মানুষ এই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন যে যার নিজের মতন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, এই আবহে এই নির্যাতিতা চিকিৎসকের মৃত্যুর বিচার চেয়ে একাধিক পুজো কমিটির রাজ্য সরকারের তরফ থেকে দেওয়া পূজোর অনুদানকে ফেরত দিয়ে দিয়েছে। জাতি, ধর্ম, পেশার সমস্ত নির্বিশেষে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে এবং চাইছেন বিচার।
তবে এবার পাল্টা সুর ছড়িয়েছেন তৃণমূলের একাংশ সরকারি কর্মীদের নিশানা করলেন, তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক। তার কথার আবার পাল্টা উত্তর দিয়েছেন অভিনেত্রী ও কাঞ্চনের সতীর্থ সুদীপ্তা চক্রবর্তী। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি কি লিখেছেন চলুন জেনেনি।
কেন কাঞ্চন মল্লিককে ত্যাগ করলেন সুদীপ্তা?
আর জি কর কান্ডের প্রতিবাদে যে আন্দোলনের ঝড় উঠেছে, সেখানে অন্যতম অভিনেত্রী হলেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। রবিবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনয় জগতের সতীর্থ এবং তৃণমূলের বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিককে তিনি ত্যাগ করে লিখেছেন মাননীয় বিধায়ক শ্রী কাঞ্চন মল্লিক এটা আপনি কী বললেন? কর্মবিরতিতে থাকা ডাক্তাররা সরকারি চাকরি করেন বলে তাঁদের কর্মস্থলে দিনের পর দিন ধরে ঘটে যাওয়া সরকারের অন্যায় কাজ নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলতে পারবেন না? সরকারি পদক্ষেপ নিয়ে হতাশা বা উষ্মা প্রকাশ করতে গেলে একজন সরকারি চাকুরিজীবীর মাইনে নেওয়া যাবে না? বিচারের দাবিতে মিছিলে গেছেন বলে তাঁদের পুজোর আগে প্রাপ্য বোনাস নিয়ে খিল্লি করে বলবেন ‘বোনাস টোনাস যে হয়, সেটা নেবেন তো, না নেবেন না?’ ‘চাকরি’ শব্দটা তো আপনি আক্ষরিক অর্থে নিয়ে নিয়েছেন মশাই! সরকারি হাসপাতালের সরকারি কর্মচারী নৃশংসভাবে ধর্ষিত ও খুন হয়ে যাওয়া তিলোত্তমার মা বাবাকে ‘মেয়ে আত্মহত্যা করেছে’ বলল কেন – এই প্রশ্ন করার আগে সরকারের দেওয়া পুরস্কার ফেরত দিয়ে দিতে হবে? না, মানে, বিবেকের তাড়নায় কেউ ফেরত দিতেই পারেন। কিন্তু সেটাই পূর্ব শর্ত নাকি? দেওয়ালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি ঝুলিয়ে রেখে এই নির্লজ্জ কমেডি করার আগে একবারও ভাবলেন না? আপনার কমেডি অভিনয়ই কিন্তু মানুষের মনে একদিন আপনার পাকাপাকি স্থান দিয়েছিল। আমিও তার ফ্যান। কিন্তু আজ যেটা করলেন, ওটা কমেডিও হয়নি, অভিনয়ও হয়নি। ওটা কিছুই হয়নি। আপনার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক শিগগিরই, এই কামনা করি। এই সরকারি পুরস্কার অনুষ্ঠানগুলোয় আমার বহু বছর যাওয়া হয়ে ওঠে না। আচ্ছা, ওখানে পুরস্কার দেবার আগে কি এইগুলো বলে দেওয়া হয়? মানে পুরস্কার পাওয়ার পরের Do’s and Don’ts গুলো কী ও কয় প্রকার? না, মানে জানতে চাইছি আর কী।’ (অপরিবর্তিত)
এখানেই শেষ নয়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী আরো লেখেন
তিনি লেখেন, ‘এক সময়ের বন্ধু/সহকর্মী কাঞ্চন মল্লিক, তোকে ত্যাগ দিলাম। অনুপ্রেরণার লকারে চোখ, কান, মাথা, মনুষ্যত্ব, বিবেক, বুদ্ধি, বিবেচনা, শিক্ষা সব ঢুকিয়ে রেখে চাবিটা হারিয়ে ফেলেছিস মনে হয়। চাবিটা খুঁজে পেলে খবর দিস বন্ধু। তখন আবার কথা হবে, আড্ডা হবে।’এরপর স্টেটাসের শেষে তিনি বলেন, ‘কথাগুলো ফোন করে বা মেসেজ করেও বলতে পারতাম হয়তো, যদি তোর বলা কথাগুলো ফোনেই শুনতাম। তুই যেহেতু নিউজ মিডিয়াকে বললি, আমিও তাই সোশ্যাল মিডিয়াতেই লিখলাম’।
ঠিক কী বলেছেন কাঞ্চন মল্লিক?
শনিবার কোন্নগরে তৃণমূল আয়োজিত ধর্নামঞ্চ থেকে কাঞ্চন মল্লিক বলেন, ‘অনেকে দুর্গাপুজোর অনুদান নেবেন না বলেছেন, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। যাঁরা কর্মবিরতি করছেন শাসকদলের বিরুদ্ধে, তাঁরা সরকারি বেতন, বোনাস নেবেন তো? সরকারি পুরস্কার ফেরত দেবেন তো ?’ তবে, তৃণমূল বিধায়কের এই মন্তব্য নিয়ে পাল্টা মন্তব্য করেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। তাঁদের তরফে বলা হয়, ‘নিজেই হাসির খোরাক হচ্ছেন কাঞ্চন মল্লিক। সরকার তো আন্দোলনকে বে আইনি ঘোষণা করেনি, কাঞ্চন মল্লিকের কি যোগ্যতা আছে এই প্রশ্ন তোলার?’
কাঞ্চন দাবি করেন, তিনি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ন্যায়বিচার চান। রবিবার কোন্নগরে এক প্রতিবাদ ধর্নামঞ্চ থেকে কাঞ্চন বলেন, “কর্মবিরতি পালন করছেন শাসকদলের বিরুদ্ধে, ভালো। কিন্তু, তাঁরা সরকারি বেতন নিচ্ছেন তো, না কি নিচ্ছেন না? এটা আমার প্রশ্ন। বোনাস নেবেন তো? না নেবেন না?” পাশাপাশি কাঞ্চন বলেন, “আজ আন্দোলনের নামে চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। সবাই বলেন, চিকিৎসক মানে ভগবান। গ্রামের মানুষ ছুটে আসেন শহরের হাসপাতালে, চিকিৎসার জন্য। আপনারা আন্দোলন করুন। তবে রোগীরা কী অপরাধ করেছেন? এমন কোনো কাজ আপনাদের করা উচিত নয়, যাতে তাঁরা ‘চিকিৎসকেরা ভগবান’ বলতে দ্বিধা করেন।”
সোমবার সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কাঞ্চন বলেছেন, “আমি শুধু এটুকুই বলেছিলাম, চিকিৎসকেরা তো বেতন পান। মুমূর্ষু রোগীরা কি পরিষেবা পাবেন না? আমি যদি আন্দোলন করছি বলে কাজ না করি, আমাকে কি আমার প্রযোজক টাকা দেবেন? পেশাদার হিসেবে আমাকে পরিষেবা দিতেই হবে। তিনি চিকিৎসক হতে পারেন, আমার মতো অভিনেতা বা সাংবাদিকও হতে পারেন।” কাঞ্চনের কথায় উঠে আসে দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখার প্রসঙ্গও।
এছাড়াও তিনি বলেন, “সকলের গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে বিরোধিতা করার। কিন্তু বিরোধিতা করলে সমগ্র ব্যবস্থার বিরোধিতা করতে হবে।”