কলকাতায় উনিশ শতকে থিয়েটার একটি বিশেষ স্থান দখল করেছিল। তবে সেই সময় যেসব মহিলারা থিয়েটার করতে আসতেন, প্রায় সকলেই ছিলেন বারবণিতারা। সাধারণ ঘরের মেয়েদের চিকের আড়াল থেকে থিয়েটার দেখার অনুমতি মিললেও অভিনয়ের অনুমতি ছিল না। কিন্তু ক্রমে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। সাধারণ পরিবারের মহিলারা আসতে শুরু করেন রঙ্গমঞ্চে। একসময় শুরু হয় বায়োস্কোপের দুনিয়া যার আধুনিক নাম সিনেমা। সেখানে বারবণিতাদের পাশাপাশি অন্য নারীরাও স্থান পেতে শুরু করেন যদিও সংখ্যায় তাঁরা ছিলেন কতিপয়। ধীরে ধীরে বিনোদন জগতে নারীর উত্থান নিয়ে সংস্কার কেটেছে। একবিংশ শতকে পা দিয়েছে পৃথিবী। কিন্তু সত্যিই কি সংস্কার মুক্ত হয়েছে সমাজ? যদি তাই হত, তাহলে কাস্টিং কাউচের সমস্যার অস্তিত্ব থাকত না। বিনোদন জগতের সাথে যুক্ত মহিলাদের সহজলভ্য মনে করতেন না সমাজের একাংশ। রূপাঞ্জনা মিত্র (Rupanjana Mitra) টলিউডের সিনিয়র অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু তাঁকে এবার কুপ্রস্তাবের শিকার হতে হল।
এর আগে পরিচালক অরিন্দম শীল (Arindam Shil)-এর বিরুদ্ধে কাস্টিং কাউচের অভিযোগ তুলেছিলেন রূপাঞ্জনা। কিন্তু এবার যাঁর বিরুদ্ধে তাঁর কুপ্রস্তাবের অভিযোগ, তিনি বিনোদন জগতের কেউ নন। রূপাঞ্জনা জানিয়েছেন, ইন্সটাগ্রামে দেওয়া ইমেল আইডিতে তাঁর কাছে প্রথমে একটি ইমেল এসেছিল। তাঁকে ওই ইমেলে কাজ সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে রূপাঞ্জনাও তাঁর ফোন নম্বর শেয়ার করেছিলেন। এরপরেই শুরু হয় উপদ্রব। যে ব্যক্তি ইমেল করেছিলেন, তিনিই হোয়্যাটসঅ্যাপে রূপাঞ্জনাকে মেসেজ করে জানতে চান তাঁর ফি কত!
View this post on Instagram
এমনকি ওই ব্যক্তি বলেন, রূপাঞ্জনার সাথে দেখা করে সময় কাটাতে চান তাঁর ক্লায়েন্ট। রূপাঞ্জনা এরপরেও জিজ্ঞাসা করেন, তাঁর ক্লায়েন্ট কোনো কাজের সূত্রে দেখা করতে চান কিনা! যদিও ‘দেখা করে সময় কাটানো’-র কথায় রূপাঞ্জনার সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বারবার তাঁকে দেখা করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হতে থাকে। ওই ব্যক্তি বলেন, তাঁর ক্লায়েন্ট একজন বাঙালি ব্যবসায়ী। রূপাঞ্জনা ওই বাঙালি ব্যবসায়ীর পরিচয় জানতে চান ও ছবি দেখতে চান। তিনি বলেন, ওই ব্যবসায়ীকে তাঁর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে। কিন্তু ওই ব্যক্তি এই কথা এড়িয়ে যান। ওই ব্যক্তি নিজের নাম বলেছেন মৃন্ময়।
রূপাঞ্জনা বলেন, ওই ব্যবসায়ী তাঁকে অ্যাফোর্ড করতে পারবেন না। তাঁরা বোধ হয় হারেম সেন্টার খুঁজছেন বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। রূপাঞ্জনা ওই ব্যক্তিকে হুমকি দিয়ে লিখেছেন, ভুল জায়গায় কড়া নেড়েছেন তাঁরা। ওই ব্যক্তি ও তাঁর বাঙালি ব্যবসায়ী ক্লায়েন্টকেও খুঁজে বার করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। কথোপকথনের স্ক্রিনশট ফেসবুকে শেয়ার করে রূপাঞ্জনা তাঁর অনুরাগীদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, সকলে মিলেও মতামত তৈরি করা যায়। গত কয়েক বছর ধরে উপেক্ষা করেও এই ধরনের মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন আসেনি। তারা এখনও নারীদের পণ্য বলে মনে করে ও সমাজও এই চাহিদা পূরণ করে বলে মনে করেন রূপাঞ্জনা।