Sabyasachi Chowdhury: অপ্রিয় স্মৃতিকে ভুলতে চান অভিনেতা সব্যসাচী!
অবশেষে সব্যসাচী চৌধুরী (Sabyasachi Chowdhury) ফিরছেন স্টার জলসার নতুন ধারাবাহিক ‘রামপ্রসাদ’-এর মাধ্যমে। নামভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। এই চরিত্রের জন্য প্রায় চার বছর পর ক্লিন শেভড হলেন সব্যসাচী। ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এ বামদেবের চরিত্রে অভিনয়ের পর আবারও রামপ্রসাদের চরিত্রে অভিনয় তাঁর কাছে টাইপকাস্ট নয়, বরং একটি চ্যালেঞ্জ। তবে তার মাঝে চ্যানেলের সাথে দশ-বারোটা প্রোজেক্টের কথা হয়েছে যার কোনোটাই পৌরাণিক নয় বলে জানালেন সব্যসাচী। কিন্তু তিনি মনে করেন, বামা বা রামপ্রসাদের মতো চরিত্র তাঁর সত্ত্বাকে প্রতিফলিত করে। তাঁর শৈশবের স্বপ্ন ছিল অভিনয়। ফলে ব্যবসায়িক দিক নিয়ে কোনোদিন ভাবেননি সব্যসাচী। ব্যক্তিগত পছন্দকে গুরুত্ব দেন তিনি।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সব্যসাচী বরাবর অ্যাভারেজ ছাত্র ছিলেন। লিলুয়া ডন বসকোর টিচাররা প্রায়ই তাঁর নামে অভিযোগ করতেন। ফলে ওই স্কুল ছাড়িয়ে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল ঝাড়খন্ডের একটি স্কুলে। স্কুলটি সব্যসাচীর পছন্দ হয়েছিল। অভিনয়ের শখ থাকলেও অন্তর্মুখী সব্যসাচী কোনোদিন তালিম নেননি। মা-বাবার ইচ্ছায় এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে একটি কেন্দ্রীয় সরকারী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা ছেড়ে পরে তারাতলায় হোটেল ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হন। এরপর হোটেলে কাজ করেছেন সব্যসাচী, কর্পোরেট সেলস জবও করেছেন। পরে মা-বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও সব্যসাচী বিদেশে পড়তে গিয়েছিলেন। মা-বাবার অনিচ্ছার কারণ ছিল মূলতঃ সব্যসাচীর পড়ার বিষয় যার নাম ডার্ক ট্যুরিজম অর্থাৎ ট্যুরিজম রিলেটেড টু ডেথ। সব্যসাচীর রিসার্চ টপিক ছিল হলোকাস্ট যার মূল ভিত্তি ছিল কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প।
উপরন্তু চাকরি ছেড়ে স্টুডেন্ট লোন ও সঞ্চিত অর্থ নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন সব্যসাচী যা তাঁর মা-বাবার পছন্দ ছিল না। অক্সফোর্ডের ব্রুকস থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেছেন তিনি। সেই সময় সব্যসাচী দেখেছিলেন জীবনের কঠিন রূপ। বিদেশে পড়তে গিয়ে একসময় দেখা দিয়েছিল অর্থাভাব। সেইসময় কেএফসি-তে হাউসকিপিং-এর চাকরি করেছেন সব্যসাচী। এরপর একটি গ্রিলড চিকেন শপে চাকরি করতে শুরু করেন তিনি। ওই শপের মালিক ছিলেন পাকিস্তানি। রাত তিনটে পর্যন্ত সেখানে কাজ করতে হত তাঁকে।
একসময় পিএইচডি করতে করতেই ছেড়ে চলে আসেন ভারতে। ইচ্ছা ছিল অভিনেতা হওয়ার। তবে হিন্দি ভালো না হওয়ার কারণে কয়েকটি প্রোজেক্টে অডিশনের সুযোগ পেয়েও যাননি। অভিনয়ে নিজস্বতা বজায় রাখতে পছন্দ করেন সব্যসাচী। ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এ অভিনয়ের সময় বাড়িয়েছিলেন ওজন। ‘রামপ্রসাদ’ হওয়ার জন্য দশ-বারো কেজি কমাতে হয়েছে। বরাবরের মতোই চরিত্রের ম্যানারিজমের খুঁটিনাটিও আয়ত্ত করেছেন তিনি। তবে বারবার সাধকের চরিত্রে অভিনয় করলেও সব্যসাচী আধ্যাত্মিক নন। কিন্তু বিশ্বাস করেন কোনো এক অসীম শক্তিতে। তবে কয়েক মাস আগে যখন ঐন্দ্রিলা (Aindrila Sharma)-র জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ পুজো দিয়ে ফুল, প্রসাদ, কবচ, তাবিজ নিয়ে আসছিলেন তাঁদের মর্যাদা দিয়েছেন সব্যসাচী। কারণ তিনি ঈশ্বরকে অস্বীকার করেন না। তবে মূর্তিপুজাও বিশ্বাসও করেন না।
ইদানিং ‘রামপ্রসাদ’-এর প্রোমোয় ভুল তথ্য নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে নেটদুনিয়ায়। এই প্রসঙ্গে সব্যসাচীর মত, একেক জন এক-একটি স্থান থেকে এক-একরকম তথ্য পেয়েছেন। এই ধরনের ছোট ছোট বাধাকে অতিক্রম করে রামপ্রসাদকে গ্লোরিফাই করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
View this post on Instagram
চলতি বছরের বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল ‘নেপোলিয়ন সমগ্র’। বইটি অর্ধেক লিখে আর শেষ করতে পারেননি সব্যসাচী। আর লেখার ইচ্ছাও নেই। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ফিরতে চান না তিনি। বাইক নিয়ে কবে বেরিয়ে পড়বেন, তাও জানেন না। আপাতত শুধু কাজ নিয়ে বাঁচতে চান সব্যসাচী। সময় পেলেই চলে আসেন নিজের ক্যাফেতে। কিচেনের দায়িত্ব সামলান তিনি। ঐন্দ্রিলা (Aindrila Sharma)-কে নয়, অপ্রিয় স্মৃতিকে ভুলতে চান সব্যসাচী।