Hoop PlusTollywood

Sohini Sengupta: মহালয়ার ভোরে মা ডাকলে রেগে যেতেন, এবার উঠতে হল একাই, আক্ষেপ সোহিনীর!

মহালয়ার সকাল প্রতি বছরের মতোই এসেছে সোহিনী সেনগুপ্ত (Sohini Sengupta)। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, একরাশ শিউলি, আশ্বিনের সকাল সব আছে নিজের জায়গায়। শুধু উমারূপী সোহিনীর ঘর শূণ্য করে চলে গেছেন তাঁর মা দুর্গা স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত (Swatilekha Sengupta)। এই প্রথম মা নেই পুজোয়। তবু ভোরবেলা উঠেছেন সোহিনী। শুনেছেন মহালয়া। একসময় বাড়ির অলিখিত নিয়ম ছিল ভোরে উঠে মা-বাবার সঙ্গে মহালয়া শোনা। স্বাতীলেখা এই দিনটায় সোহিনীকে ভোরবেলা জাগালে রাগ করতেন মেয়ে, বলতেন পরে মহালয়া শুনে নেবেন। কিন্তু কোনকালেই বা মায়েদের কাছে মেয়েদের জোর খেটেছে? তাই উঠতেই হত সোহিনীকে। ঘুমজড়ানো চোখে মায়ের সঙ্গে শুনতেই হত ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে’। এবারেও ভোরে উঠেছেন সোহিনী। শুধু ধাক্কা মেরে জাগিয়ে দেওয়ার কেউ ছিলেন না। ঘুমভাঙা রাগী চোখে অভিযোগ শোনার ছিলেন না কেউ।

আগের দিন রাত থেকে বাবা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত (Rudraprashad Sengupta)-র কাছে ছিলেন সোহিনী। জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখা রুদ্রপ্রসাদ জানেন, আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। কিন্তু তবু মন যে মানে না। মেয়ের সামনে সহধর্মিণী স্বাতীলেখাকে হারানোর কষ্ট প্রকাশ না করলেও তিনি যে ভিতরে ভিতরে ভেঙে যাচ্ছেন, তা চোখ এড়ায় না সোহিনীর। তাই মহালয়ার আগের দিন বাবার কাছে চলে এসেছেন। ঘুমিয়েছেন মায়ের ঘরে। মায়ের প্রতিচ্ছবি মেয়ে উদ্দ‍্যোগী হয়েছেন স্বাতীলেখার ছোঁয়া সংসারে বজায় রাখতে। পুজো বড্ড ভালোবাসতেন স্বাতীলেখা। মহালয়ার দিন বাড়িতে লুচি করতেই হবে। এই বছরেও সোহিনী কাজে বেরোনোর আগে লুচির ব্যবস্থা করেছিলেন। অষ্টমীর দিন নিরামিষ ও নবীর দিন মাছ হতেই হবে, স্বাতীলেখার এই নিয়ম পরিবারে বছরের পর বছর ধরে চলে এসেছে।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Ruku Sultana (@rukusultana)

যে বয়সে মেয়েরা ভিড় এড়িয়ে বাড়িতে থাকতে চান, স্বাতীলেখা কিন্তু সেই বয়সে নতুন শাড়ি পরে পুজোর চারটে দিন বিকেল চারটের মধ্যে বেরিয়ে পড়তেন ঠাকুর দেখতে। শুধু যেদিন নাটকের শো থাকত, সেদিন ছুটি। সকলকে নিয়ে আনন্দ করে বাঁচতে চেয়েছিলেন স্বাতীলেখা। দশমীর দিন নিজের হাতে ঘুগনি বানাতেন স্বাতীলেখা। সোহিনীকে মটর ডাল বেছে দিতে হত। তার সঙ্গে চলত নারকেল নাড়ু বানানো। স্বাতীলেখাকে প্রণাম করতে এলে নারকেল নাড়ু না খাইয়ে ছাড়তেন না। নাটকের দলের সকল সদস্যরা বাড়িতে আসতেন।

চলে গেছেন স্বাতীলেখা। সোহিনীর উপর আকস্মিক দায়িত্ব অশ্রুজলকে নিজের হৃদয়ে চেপে রেখে বাবাকে ভালো রাখার। মানুষটা বড্ড একা। কিন্তু এই বছর পুজোর পোশাক কিনতে পারেননি সোহিনী। বারবার মনে হচ্ছিল মায়ের কথা। স্বাতীলেখা পছন্দ করে দিতেন সোহিনীর পুজোর পোশাক। পুজোর দিনগুলোয় তা পরার জন্য তাড়াও দিতেন। গত বছর অনেক উপহার দিয়েছিলেন সোহিনীকে। আরও কটা বছর থেকে গেলে কি হত?

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Sanu Satpati (@chandni_juju)

তাই এই বছর মন থেকে পুজোর আনন্দ করতে পারছেন না রুদ্রপ্রসাদ, সোহিনী, সপ্তর্ষি (Saptarshi Moulik)। তাঁরা পুজোয় কলকাতায় থাকছেন না। পুজোর কটা দিন মুসৌরির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যেই কাটাবেন তাঁরা। সোহিনী-সপ্তর্ষির বেঁচে থাকার তাগিদ রুদ্রপ্রসাদ অথবা রুদ্রপ্রসাদের তাগিদ তাঁরা! বাতিল হয়ে গিয়েছে নান্দীকারের নাটক। সদস্যদের মন ভালো নেই। সোহিনী বললেন, পরের বার থেকে খুব আনন্দ করে পুজো কাটানোর চেষ্টা করবেন, একদম মায়ের মতো করে। খুব সাজবেন তিনি। হবে নান্দীকারের পুজোর নাটক।

Hoophaap-এর গোটা প্রতিবেদন জুড়ে বড্ড ‘নেই’ কথাটা লেখা হল তাই না? “কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি?” আছেন স্বাতীলেখা। শরীর নশ্বর। পুনর্জন্ম কি আছে? জানেন না কেউই। কিন্তু স্বাতীলেখা বেঁচে আছেন তাঁর কর্মের মধ্যে, তাঁর ছেড়ে যাওয়া পরিবারের মধ্যে, সোহিনীর মধ্যে, রুদ্রপ্রসাদের হৃদয়ে, সপ্তর্ষির স্মৃতিতে আর অসংখ্য মানুষের চিন্তাধারায়। আনন্দের উত্তরাধিকার রেখে গেছেন তাঁর ছায়া, তাঁর সুযোগ‍্যা কন্যা সোহিনীর মধ্যে। তারার জগৎ থেকে স্বাতীলেখার দৃঢ় বিশ্বাস, ঘুরে দাঁড়াবে নান্দীকার, নান্দীকার ও সমগ্র পরিবারের সুরকে আবারও বাঁধবেন সোহিনী। শক্তি দেবে সময়। সোহিনীকে যে পারতেই হবে। চিন্তা নেই, তাঁর সঙ্গে রয়েছেন স্বাতীলেখা, অনেক আশীর্বাদ হয়ে, মাতৃস্বরূপা দুর্গা হয়ে।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by NANDIKAR (@nandikar1960)

whatsapp logo