whatsapp channel

শেষ বয়সে মৃত্যু নিয়েও কবিতা লিখেছিলেন কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রইলো সেই ছবি!

কখনো সে সত্যজিতের নায়ক তো কখনো সে অপুদা,কখনো সে নুন সাহেবের ছেলে তো কখনো সে পাবলো নেরুদা,কখনো সে ফেলুদা তো কখনো সে কনির ক্ষিতদা,কখনো সে পোস্তর দাদু আবার কখনো সে…

Avatar

HoopHaap Digital Media

কখনো সে সত্যজিতের নায়ক তো কখনো সে অপুদা,কখনো সে নুন সাহেবের ছেলে তো কখনো সে পাবলো নেরুদা,কখনো সে ফেলুদা তো কখনো সে কনির ক্ষিতদা,কখনো সে পোস্তর দাদু আবার কখনো সে এক বৃদ্ধার একান্ত প্রিয়তম স্বামী। অভিনয় জগতে নানা রুপে দীর্ঘ ৬০ বছর আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন একটাই মানুষ। তিনি আর কেউ না তিনি হলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। যে মানুষটা সম্পর্কে যতই বলোনা কেন খুব কম বলা হবে। আমরা এই মানুষটাকে নাট্যকার আর অভিনেতা হিসেবে জানি। এছাড়াও তিনি ছিলেন কবি সৌমিত্র, গায়ক সৌমিত্র, বাচিকশিল্পী সৌমিত্র, নাট্যকার সৌমিত্র, একলা ঘরে নিজের সঙ্গে কথা বলার সৌমিত্র,কমরেড সৌমিত্র। তিনি ছিলেন ঘরোয়া স্বামী এবং কন্যা সন্তানের বাবা। সব কিছুই সমানভাবে সব্যসাচীর মতো ব্যালেন্স করে চলেছেন। তাঁর মতো ব্যালেন্স করা খুব কম মানুষ জানেন।

যে মানুষটা জীবনের ৮৫ টা বসন্ত হেসে খেলে বেড়িয়েছিলেন। সে ছিলেন পুরো জীবন শক্তিতে ভরপুর, উত্তেজনায় ছিল পরিপূর্ণ, তাঁর মঞ্চ-থিয়েটার-সিনেমা সর্বক্ষেত্রেই তাঁর অবাধ ছিল যাতায়াত। কোভিডকে ভয় পেয়ে যখন বাড়িতে কাচুমাচু হয়ে ঘরে ছিল তখন সেই মানুষটা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে নিজের প্রতিটি কাজ করে গেছেন। আসলে সেই মানুষটা ছিল ভিতর থেকে চিরনবীন ও চিরতরুণ। সকলেই আশা করেছিলেন আমাদের ক্ষিতদা সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে সকলের মধ্যে। কিন্তু অবশেষে তা আর হলোনা। ১৫ ই নভেম্বর দীপাবলির সব আলো নিভিয়ে দিয়ে অন্ধকার করে চলে গেলেন অপুদা।

অপুদার যে মুহূর্তে চোখ বুঝলেন তখন বাংলার প্রতিটি নবীন প্রবীনের চোখ থেকে বেরোলো অশ্রু। অভিনেতা সর্বদা ধর্মের নামে গোঁড়ামি এবং বিভাজনের রাজনীতির খেলা সর্বদা করতেন ঘৃণা। তিনি সর্বদা বিশ্বাস করতেন মাক্সবাদীতে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজের সংশয় এবং প্রত্যয় একই সঙ্গে মেলে ধরেছিলেন নিজের কলমে। দুর্গাপুজোয় অসুস্থ থাকলেও কোভিড পরিস্থতিতে হাতে কলম ধরেছিলেন। লিখেছেন নিজের মনের ভাব সম্পসারণ। কোনোদিন থেমে থাকতে দেখা যায়নি। বরং নিজের জীবনীর ওপর এক খসড়া বানিয়ে গিয়েছেন সকলের প্রিয় সৌমিত্র জ্যেঠু। শেষ ইচ্ছে ছিল নিজের জীবনী নিয়ে সিনেমা নিজেই অভিনয় করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়ে উঠলোনা।

সৌমিত্র চ্যাটার্জির ছিল আরো এক সুপ্ত প্রতিভা। তাঁর মধ্যে বিরাজমান এক ঘুমন্ত কবি সত্ত্বা । যে সত্ত্বাকে লোকসমুক্ষে বের রে আনতে বড্ডো লজ্জা পেতেন অপু দা নিজেই । কিন্তু কবিতা যেন তাঁর কলমের ডগায় আঁকিবুকি কাটতো। শুধু লিখনি নয়, কবিতা পাঠেও বেশ সাবলীল ছিলেন সৌমিত্র। ‘প্রাক্তন’-এ তাঁর কণ্ঠে রবি ঠাকুরের ‘হঠাৎ দেখা’ আজও মানুষ ভুলতে পারেনি। তিনি তাঁর জীবনে কবিতার বই লিখেছেন ১৪টি। এমনকি তিনি তাঁর ছেলে মেয়ের জন্মদিনে বালিশের নীচে একটি করে কবিতা লিখে রাখতেন। আর সেই মানুষটি এতটাই বিচক্ষণ ছিলেন মৃত্যু নিয়ে শেষ কবিতা লিখেছিলেন।

তিনি লিখেছিলেন, মৃত্যুর কোনো নিশ্চিয়তা নেই। চোখ বুজলেই চলে যেতে এক নিমেষে ইলেকট্রিক চুল্লিতে। তিনি জীবনকে আশ্চর্য দ্বীপের সাথে তুলনা করেছিলেন। মানুষ মারা গেলে নীহারিকা হয়ে নক্ষত্রের দিকে ছুটে যায়। ক্ষুদা, ভালোবাসা, সারাদিন খাটাখাটুনি সবই হয়ে যায় বৃথা,এক নিমেষে হয়ে যায় বরফের মতো ঠান্ডা। কৃষ্ণা দশমীর চাঁদ নেমে হয় কালো অন্ধকার। তবু মানুষ বেঁচে থাকে অভিলাষে। মৃত্যুর মধ্যে যে ভয়াবহতা আছে তা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন কিছুদিন আগেই।

whatsapp logo
Avatar
HoopHaap Digital Media