মঙ্গল চক্রবর্তীর ‘প্রণয় পাশা’ ছিল মহানায়িকার জীবনের শেষ চলচ্চিত্র। কেউ জানতেন না যে তিনি রুপোলি পর্দা, ঐশ্বর্য, খ্যাতি ছেড়ে বিদাই নেবেন। শুরু করেছিলেন ১৯৫২ সালে ” শেষ কোথায় ” দিয়ে। তারপর আর থামতে হয়নি তাকে এক মুহূর্তের জন্য। এগিয়েই গিয়েছিলেন তিনি। ৭০ টির উপর সিনেমা করেছিলেন এক জীবনে, যার মধ্যে উত্তম কুমারের সঙ্গেই একাধিক সিনেমায় তাকে জুটি বাঁধতে দেখা যায়। এরপর ১৯৭৮ সালে সুদীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর তিনি চলচ্চিত্র থেকে অবসরগ্রহণ করেন। এরপর তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন।
আমাদের আলোচ্য বিষয় শুধু মাত্র সুচিত্রা সেন নয়, এই কাহিনীতে রয়েছেন রাজ কাপুর। হ্যাঁ, বলিউড ঘরানার কাপুর ফ্যামিলির অন্যতম প্রভাবশালী অভিনেতা রাজ কাপুর। তবে রাজ কাপুরকে নিয়ে আলোচনার আগে মহানায়ক উত্তম কুমারের প্রসঙ্গ আসতেই হয়। উত্তম কুমার মারা যান ১৯৮০ সালে। এই ব্যাপারে সুচিত্রা সেন তার এক বাইটে বলেছিলেন, “ও গ্রেট…তবু যেন মনে হয়, ওকে ঠিক মতো আবিষ্কার করা গেল না।” এই মানুষটার মৃত শরীর দেখতে গিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। উত্তমের শেষ শয্যা দেখার পর নিজের বাড়ি ফেরেন এবং এরপর আর তিনি বাইরে আসেননি। সকলের অন্তরালে চলে যান তিনি।
ঠিক দুই বছর পর নিজের ইচ্ছায় সকলের সামনে আসেন সুচিত্রা সেন। কোথায়? রবীন্দ্রসদনে আয়োজিত কলকাতা ফিল্ম ফেস্টভ্যালে। খোলা চুল, ঝোলা দুল, গাঢ় কাজল আর বড় কাঁচের টিপে ধরা দিয়েছিলেন তিনি। সেই ফেস্টিভ্যাল দেখা হয় শশী কাপুরের সঙ্গে। হাতে হাত মিলিয়ে প্রাণভরে হাসেন। কিন্তু এই কাপুর ফ্যামিলির রাজ কাপুরকে একদিন মহানায়িকা এক হাত নেন। কীভাবে?
পরিচালক, প্রযোজক এবং অভিনেতা রাজ কাপুর একবার মুম্বাই থেকে সোজা চলে আসেন কলকাতায়। এসেই সুচিত্রা সেনের বাড়িতে উপস্থিত। এবং সুচিত্রার পায়ের সামনে বসে গোলাপ দিয়ে বলেন, ” মিসেস সেন আমার ছবিতে কাজ করুন, আমি ধন্য হব “। সেদিন সুচিত্রা রাজ কাপুরকে নিজের বাড়ি থেকে বের করে দেন। এই প্রসঙ্গে সুচিত্রা সেন একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ” আমার পিত্তি জ্বলে গিয়েছিল। ও পুরুষ মানুষ নাকি, মেয়েদের পায়ের কাছে বসে, দূর! আর তাই না বলে দিতে কোনো দ্বিধা করেনি”।
সুচিত্রা সেন, বরাবর নিজের দাপটে ও নিজের মেজাজে চলা একজন মানুষ। জীবনকে একটা সময় মেলে ধরেছিলেন আবার একটা সময় সম্পূর্ণরূপে গুটিয়েও নিয়েছিলেন। আর এই জন্যেই হয়তো তিনি রাজ কাপুরের মতন প্রভাবশালী ও বিত্তশালী অভিনেতাকে ” না ” বলতে পেরেছেন।
[তথ্যসূত্র-» শুভদীপ বন্দোপাধ্যায়]