টিআরপি তুললেও দর্শকদের মন ছুঁতে ব্যর্থ জুটি, রসায়নে ঘাটতি পড়ছে সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকার!
বিনোদনের হাজার একটা মাধ্যম এখন উপলব্ধ হলেও দৈনন্দিন বিনোদনের জন্য অধিকাংশ মানুষের ভরসা এখনো সিরিয়ালের উপরেই। সারা দিনের কাজের শেষে অবসর সময়টুকু কাটানোর জন্য টেলিভিশন ধারাবাহিকগুলিকেই (Television Serial) বেছে নেন। আর দর্শকদের পছন্দ বুঝে নিত্য নতুন চ্যানেল আর সিরিয়াল আসারও কোনো অন্ত নেই। এই সমস্ত সিরিয়ালগুলিই এক সময় দর্শকদের প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। আর ধারাবাহিকের অভিনেতা অভিনেত্রীরা হয়ে ওঠেন ঘরের লোক। কিছু কিছু জুটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে গোটা বাংলার মানুষ তাদের অনুরাগী হয়ে ওঠে। অতীতে ‘বউ কথা কও’এর মৌরি-নিখিল, বোঝে না সে বোঝে না’র অরণ্য-পাখি, ‘তুমি আসবে বলে’র রাহুল-নন্দিনী থেকে এখনকার ‘মিঠাই’এর মিঠাই-সিদ্ধার্থ বা ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র সূর্য-দীপা, এরা সকলেই দর্শকদের মনে একটা স্থায়ী জায়গা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে এমন অনেক সিরিয়ালই সম্প্রচারিত হয়েছে বা সম্প্রচারিত হচ্ছে, যেগুলি টিআরপির দিক দিয়ে সফল হলেও নায়ক নায়িকা কিন্তু জুটি হিসেবে দর্শকদের মন ছুঁতে পারেননি। নায়ক নায়িকাই যে কোনো গল্পের মূল চরিত্র। তাদের অনস্ক্রিন রসায়ন যত ভালো হবে ততই দর্শকদের মনের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবেন তারা। কিন্তু ইদানিং এমন বেশ কিছু সিরিয়াল এসেছে যেগুলির গল্প হয়তো দর্শকদের আকর্ষিত করেছে কিন্তু নায়ক নায়িকার জুটি তেমন মন জয় করতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ প্রথমেই উঠে আসবে ‘গৌরী এলো’র নাম। জি বাংলার এই সিরিয়াল এক বছর পুরনো হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। অতিলৌকিক কাহিনির ছোঁয়া মেশানো ধারাবাহিকটি হাজারো ট্রোল সত্ত্বেও দর্শকদের মন ছুঁয়েছে। বাংলা সেরাও হয়েছে গৌরী এলো। কিন্তু ঈশান-গৌরী জুটিকে দর্শক ভালোবাসলেও তাঁদের ঘিরে উন্মাদনার ভাঁটা সহজেই চোখে পড়ে।
ঈশান গৌরীর অনস্ক্রিন রসায়ন নিয়ে দর্শকদের কোনো আপত্তির অবকাশ নেই। বয়সের পার্থক্য অনেকটাই হলেও অন্তরঙ্গ দৃশ্যেও তাঁদের মধ্যে তাল কাটেনি। তবুও কোনো কারণে ঈশান গৌরী নয়নের মণি হয়ে উঠতে পারেনি দর্শকদের। দ্বিতীয় স্থানে থাকবে এই চ্যানেলেরই আরেক সিরিয়াল ‘মন দিতে চাই’। ঋত্বিক মুখোপাধ্যায় এবং অরুনিমা হালদারের সিরিয়ালটি কখনোই দর্শকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করতে পারেনি। প্রথম থেকেই টিআরপি তালিকার সেরা দশের বাইরেই থেকেছে ধারাবাহিকটি। কিন্তু জুটি হিসেবে ব্যর্থ হয়েছেন সোমরাজ-তিতির। ঋত্বিকের আগের সিরিয়াল ‘আমাদের এই পথ যদি না শেষ হয়’তে তাঁর আর ঊর্মি ওরফে অন্বেষা হাজরার জুটি হয়ে উঠেছিল দর্শকদের মনের মতো। কিন্তু তিতিরের নায়ক হয়ে উঠতে ব্যর্থ সোমরাজ। জি এর আরেক জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘ইচ্ছে পুতুল’ এর সম্প্রচারের দিন সম্প্রতি বাড়ানো হয়েছে দর্শকদের আবেদনে। মেঘের প্রতি অবিচার আর মেনে নিতে পারছেন না তারা।
বর্তমানে মেঘ নীলের মধ্যে দূরত্ব আকাশছোঁয়া। কিন্তু সিরিয়ালের শুরুর দিকে, যখন দুজনের কাছাকাছি আসার পর্ব চলছিল তখনো দর্শকদের মনে টোকা দিতে পারেনি তাঁদের রসায়ন। মেঘ এবং নীলের অভিনয় সকলের বেশ পছন্দ হলেও তাঁদের রসায়ন জমাট বাঁধতে পারেনি। তার আগেই গল্পের মোড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে মেঘ নীল। এখানেও কি অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে নায়ক নায়িকার বাস্তবে বয়সের পার্থক্য? একই প্রশ্ন উঠে আসে ‘খেলনা বাড়ি’ সিরিয়ালের ক্ষেত্রেও। ধারাবাহিক ভালো টিআরপি এনে দিয়েছে, কিন্তু নায়ক নায়িকার রসায়ন? মিতুল গল্পের সিংহভাগ জুড়ে ইন্দ্রর প্রাণই বাঁচিয়ে গিয়েছে ‘অতিমানবীয়’ কায়দায়। কিন্তু দুজনের মধ্যে রসায়নের আগুন স্তিমিতই থেকেছে। স্টার জলসার ‘গাঁটছড়া’য় খড়ি-ঋদ্ধি, রাহুল-দ্যুতি, বনি-কুণালের রসায়ন নিশ্চিহ্ন বর্তমানের জুটিগুলিতে। দর্শকদের মনের খোঁজই পাচ্ছে না ধারাবাহিকের জুটিগুলি। বাড়ছে দূরত্ব। এই ভাবেই এক সময় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন দর্শকরা।