কোয়েল মল্লিক আজ টলিউডের তারকাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসিত হয় দর্শকদের কাছে। কোয়েলের ব্র্যান্ড ভ্যালু যথেষ্ট ভালো। কিন্তু কোয়েল কি কোনোদিন ভেবেছিলেন এতটা সাফল্যের কথা?
কোয়েলের জন্ম হয়েছিল কলকাতার বনেদী মল্লিকবাড়িতে। মল্লিক পরিবার বরাবর রক্ষণশীল। তাঁদের পরিবারে বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষকের বাইরে অন্য ক্ষেত্রে কেরিয়ার তৈরীর কথা কোনোদিন কেউ ভাবতেও পারতেন না। কিন্তু প্রথা ভেঙেছিলেন কোয়েলের বাবা রঞ্জিত মল্লিক (Ranjit mullick)। এর জন্য পরিবারের সঙ্গে রীতিমত বিরোধ বেধেছিল তাঁর। রঞ্জিত অভিনয়কেই নিজের পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু 1982 সালের 28 শে এপ্রিল তাঁর ঘরে যখন রুক্মিণীর জন্ম হয়েছিল, তখন তিনি কিন্তু একবারের জন্য মেয়েকে অভিনয়ের দিকে নিয়ে আসার কথা ভাবেননি। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক।
প্রকৃতপক্ষে রুক্মিণী নিজেও কোনোদিন অভিনেত্রী হওয়ার কথা ভাবেননি। তখন সাইকোলজি অনার্স নিয়ে গোখেলে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। বাবা রঞ্জিত মল্লিকের সাথে বোলপুরে গিয়েছিলেন রুক্মিণী। সেখানেই একটি হলে গিয়ে প্রথমবার জিৎ(Jeet)অভিনীত ‘সাথী’ ফিল্মটি দেখেন রুক্মিণী। কিন্তু কোনোদিন ভাবতে পারেননি, এই রূপোলি পর্দাই তৈরী করবে তাঁর পরিচয়। কারণ রুক্মিণীর চোখেও তখন সাইক্রিয়াটিস্ট হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু ভাগ্যের লিখন কেউ খন্ডাতে পারে না। রুক্মিণীও পারেননি। তাঁর বাবা রঞ্জিত মল্লিকের বন্ধু হরনাথ চক্রবর্তী (Haranath chakraborty) সেই সময় ফিল্ম বানাচ্ছেন। তাঁর নতুন মুখের দরকার ছিল। জিৎও তখন অপেক্ষাকৃত নতুন মুখ। ফলে জিৎ-কে ফিল্মের নায়ক মনোনীত করলেন হরনাথ। কিন্তু নায়িকা কে হবেন? রঞ্জিতের মেয়ে রুক্মিণীকে নায়িকা করার প্রস্তাব দিতেই রঞ্জিতের তরফ থেকে প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হল। কিন্তু শেষ অবধি নাছোড়বান্দা হরনাথের কাছে হার মানতেই হয়েছিল রঞ্জিত মল্লিককে। ইন্ট্রোভার্ট রুক্মিণী দাঁড়ালেন ক্যামেরার সামনে। কিন্তু রুক্মিণী নামে নয়, তাঁর ডাকনাম ‘কোয়েল’ নামে। 2003 সালে মুক্তি পেল হরনাথ চক্রবর্তী পরিচালিত ফিল্ম ‘নাটের গুরু’ যা বক্স অফিসে যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছিল। এভাবেই ধীরে ধীরে কোয়েল এগিয়ে গেলেন তাঁর মাইলস্টোন কেরিয়ারের দিকে।
নিসপাল সিং রানে (nispal singh rane) তখন নতুন করে তৈরী করছেন ‘সুরিন্দর ফিল্মস’-কে। এইসময় একদিন একটি স্টুডিওয় কোয়েলের পোস্টারে তাঁর চোখ আটকে গিয়েছিল। নিসপালের মুখ দিয়ে মুগ্ধতার সঙ্গে একটিই কথা শোনা গিয়েছিল ‘হিরোইন’। এরপর কাজের সূত্রে নিসপালের সঙ্গে কোয়েলের আলাপ হয়েছিল যা একসময় প্রেমে পরিণত হলেও নিসপাল বা কোয়েল কোনোদিন তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন মিডিয়ার সামনে প্রকাশ হতে দেননি। দীর্ঘ সাত বছরের সম্পর্ক পরিণতি পায় 2013 সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি। বিয়ে হয় কোয়েল-নিসপালের। 2020 সালে জন্ম হয় তাঁদের একমাত্র পুত্রসন্তান কবীর (kabir singh)-এর। কিন্তু এত বছরেও কোনোদিন কোয়েল বা নিসপাল একে অপরের সিদ্ধান্ত বা কেরিয়ারে হস্তক্ষেপ করেননি। এটাই তাঁদের সুখী দাম্পত্যের মূল চাবিকাঠি।