Kolkata Durga Puja: কলেজ স্ট্রিটের আশেপাশেই রয়েছে তিন তিনটে জমজমাট পুজো মন্ডপ, দেখে নিন ঘরে বসেই
কলকাতায় ঠাকুর দেখার ভিড় সেই মহালয়া থেকে শুরু হয়ে গেছে। কলকাতার যে গুরুত্বপূর্ণ ঠাকুরগুলি সেগুলি বাদ দিয়েও যে তিনটি ঠাকুর না দেখলে আপনার মনটা কেমন একটা যেন খুঁতখুঁত করে। সেই তিনটি ঠাকুর হল মহম্মদ আলী পার্ক, সন্তোষ মিত্র স্কয়ার এবং কলেজ স্কয়ার। মধ্য কলকাতার এই তিনটি ঠাকুর কিন্তু অসাধারণ হয়, প্রত্যেকবারই যে যার মতন করে থিমের পুজোর আয়োজন করে, আর প্রত্যেকবারই সেগুলি হয়, একেবারে সুপারহিট। একবার কলেজ স্ট্রিতে গিয়ে ঢুঁ মেরে আসুন, এই তিনটে পুজোতে। তবে যারা ভিড়ের মধ্যে গিয়ে ঠাকুর দেখতে পাচ্ছে না, তাদের জন্য আজকে আমাদের এই নিবেদন।
কলকাতা তে গিয়ে যতই শ্রীভূমি ঠাকুর দেখেন না কেন কলেজস্ট্রিট পাড়ায় এই তিনটে ঠাকুর না দেখলে কিন্তু পুজোটাই যেন একেবারে মাটি হয়ে যায়, যারা মফস্বল থেকে আসবেন, তারা শিয়ালদা বা হাওড়া স্টেশনে এসে কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে কিন্তু খুব সহজেই এই তিনটে ঠাকুর দেখে ফেলতে পারবেন। তবে সন্তোষ মিত্র স্কয়ার আর কলেজ স্কয়ার এই দুটিতে কিন্তু বেশ আলোর খেলা দেখানো হচ্ছে, সন্ধ্যেবেলা থেকে তাই সকালে এলে সেটা মিস করবেন।
আর দেরি না করে চলুন দেখে নিন তিনটি পুজো –
১) মহম্মদ আলি পার্ক: প্রথমেই যে পুজোটির কথা বলতে হয় সেটি হল মহম্মদ আলী পার্ক। এরা ৫৫ তম বর্ষে পদার্পণ করল এই পুজো। এই পুজোর এবারের থিম কেদারনাথের মন্দির। যারা শিব ভক্ত আছেন তারা একবার হলেও জীবনে কেদারনাথ মন্দির দর্শন করতে যান।
তবে যাদের এখনো পর্যন্ত সেই সাধ মেটেনি, তারা কিন্তু দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতেই পারেন অর্থাৎ একবার মহম্মদ আলী পার্কে ঘুরে আসুন কেদারনাথের ফ্লেভার পেয়ে যাবেন। যাকে বলে একেবারে মিনি কেদারনাথ। শুধুমাত্র প্যান্ডেলেই নয়, তার সঙ্গে অনেক বেশি আকর্ষণীয় ভেতরের। প্রতিমাকেও বানানো হয়েছে একেবারে প্যান্ডেল এবং থিম এর সঙ্গে মানানসই ভাবেই।
কেদারনাথে পৌঁছতে গেলে অনেক দুর্গম পথ, পাহাড় পেরিয়ে তারপরে আপনাকে কেদারনাথের মন্দিরের দর্শন করতে পারবেন, কিন্তু মহম্মদ আলী পার্কে, যদি যেতে চান তাহলে কলেজ স্ট্রিটে এলেই কিন্তু দেখতে পাবেন ছোট্ট এক টুকরো কেদারনাথ। উত্তরাখণ্ডের চারধাম ও পঞ্চকেদারের একটি অংশ এই কেদারনাথ মন্দির। যা এবারে মহম্মদ আলী পার্কের থিম। প্রতি বছর নানান রকম থিম করে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে তারাও কোন অংশে কারুর থেকে কম নয়।
যেহেতু তাদের থিম কেদারনাথ মন্দির তাই মা কেউ দেখানো হয়েছে ‘শিব শক্তি রূপে’। মায়ের এই মূর্তি তৈরি করেছেন মেদিনীপুরের বিখ্যাত কারিগর কুশবেরা। আলোকসজ্জা আছে চন্দনগর। তাহলেই বুঝতে পারছেন সব মিলিয়ে কিন্তু একটা ফাটাফাটি ব্যাপার রয়েছে, আর যদি না দেখেন তাহলে অবশ্যই মিস করবেন। তবে এ বছরই নয়, প্রতি বছরে তারা কিন্তু একেকবার একেক রকম চমক নিয়ে আসে। শুরুটা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। তারপরে একইভাবে ধারাবাহিকতা বজায় আছে।
২) সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার: ৮৮তম বর্ষে পদার্পণ করল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো। এবারে তাদের থিম রাম মন্দির। অযোধ্যার রাম মন্দিরের আদলে গড়ে তুলেছে তারা তাদের মণ্ডপকে। যদিও প্রতি বছর তাদের থিমের মধ্যে থাকে একটা নতুনত্ব, এবারেও কিন্তু কোন অংশে কম নয়।
অযোধ্যা থেকে এক টুকরো রাম মন্দির যেন কলকাতায় এনে কে বসিয়ে দিয়েছে। কে বলবে বাঁশ, কাপড় দিয়ে এত সুন্দর একটি রাম মন্দির তৈরি করা যায়, শুধু কলকাতাতেই সম্ভব। এবারে পূজোয় ছিল আরো চমক এবারে পূজো উদ্বোধন করতে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
প্রতিবছরের সন্তোষ মিত্র স্কয়ার অথবা লেবুতলা পার্কের পুজোর একটা নতুনত্ব ব্যাপার থাকে। এ বছরও সব্বাইকে চমকে দিয়ে অসাধারণ রাম মন্দির করেছে তারা।
৩) কলেজ স্কোয়ার: এরপরে যে পুজটির কথা বলতেই হয় সেটি হল কলেজ স্কোয়ারের পুজো। এবারে কোন স্কুলের পুজোর ৭৬ তম বর্ষে পদার্পণ করল। বরাবরই এরা থিমের পুজো করলেও এদের মাতৃরূপ কিন্তু একেবারে সাবেকিয়ানাকেই ফলো করে। এবারে তাদের থিম মাইসোরের রাজপ্রাসাদ। প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু হয়েছে মন্ডপ।
আসল মাইসরের রাজপ্রাসাদ আছে সেটি অম্বা বিলাস নামেও পরিচিত। এখানে মাইসর রাজারা থাকতেন, তবে প্রথম দিকে এটি কাঠ দিয়ে বানানো ছিল পরবর্তীকালে এটিকে পাথর, ইঁট দিয়ে সুন্দর করে বানানো হয় নির্মাণকার্যও শেষ হয়েছিল ১৯১২ সালে।
যাদের পক্ষে মাইসোরে গিয়ে এত সুন্দর নির্মাণ কার্য দেখার সম্ভব হচ্ছে না তারা কিন্তু কলেজ স্কয়ার যেতে একেবারে মিস করবেন না, তবে যারা সকালে যাচ্ছেন তারা এর অসাধারণ আলোক সজ্জা কিন্তু মিস করে যাবেন।
আমরা যারা কলেজ স্কয়ারে গেছি, তারা প্রত্যেকেই জানি ঢোকার মুখে রয়েছে একটি ঝিল। সেই ঝিলের এই পাড় থেকে মন্ডপ দেখতে কিন্তু দুর্দান্ত লাগছে, আর প্রতিমার দিকে তাকালে যেন চোখ একেবারে ঝলসে যাচ্ছে, অসাধারণ কারুকার্যের জন্য।