জনি লিভার (johny lever) কিছুদিন আগেই দিলীপ কুমার (Dilip kumar)-এর শেষকৃত্যের সময় মিডিয়ার প্রতি সৌজন্য দেখিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চূড়ান্ত ট্রোল হয়েছিলেন। এবার তাঁকে কিছুটা হলেও বলিউডের মনে পড়েছে। কারণ একসময় এই কিংবদন্তী কমেডিয়ানও দুঃখ করে বলেছিলেন, তাঁর হাতে কাজ নেই। তবে সম্প্রতি কয়েকটি ফিল্মে তিনি অভিনয় করেছেন এবং সহজাত ভঙ্গীতেই মাতিয়ে দিয়েছেন দর্শকদের।
সম্প্রতি ষাট বছর বয়সে পা রাখলেন জনি। অন্ধ্রপ্রদেশের প্রকাসম-এ একটি খ্রিস্টান তেলেগু পরিবারে জন্ম হয়েছিল জন রাও প্রকাশ রাও জানুমালা ওরফে জনির। শৈশবেই তাঁর পরিবার মুম্বইয়ের ধারভি অঞ্চলে চলে আসেন। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। তাঁর বাবা ছিলেন হিন্দুস্তান ইউনিলিভার কোম্পানির অপারেটর। ফলে সংসারে দারিদ্র্য লেগেই ছিল। ক্লাস সেভেনে পড়াকালীন অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন জনি। সেই সময় সংসার চালাতে মুম্বইয়ের রাস্তায় পেন-পেনসিল ফেরি করতেন তিনি।
কিন্তু শৈশব থেকেই জনি অসম্ভব ভালো নকল করতে পারতেন। জনির বরাবর ইচ্ছা ছিল কমেডি চরিত্রে অভিনয় করার। কিন্তু জনির মনে হত, এ যেন ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে স্বপ্ন দেখা। একটু বড় হতেই জনির বাবা হিন্দুস্তান ইউনিলিভার কোম্পানিতে তাঁকে কাজে ঢুকিয়ে দেন। সেখানে জনি প্রায়ই সহকর্মীদের বিভিন্ন অভিনেতার মিমিক্রি করে দেখাতেন। তাঁরাও জনির মিমিক্রির প্রশংসা করতেন। কিন্তু ভাগ্যে লেখা ছিল অন্য কিছুই। একবার জনি হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের কয়েকজন সিনিয়র অফিসারদের সামনে অফিসিয়াল ফাংশনে মিমিক্রি করে দেখিয়েছিলেন। সিনিয়র অফিসাররাই মজা করে তাঁর নাম দিয়েছিলেন জনি লিভার। ‘লিভার’ অর্থে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার-এর ‘লিভার’শব্দটি।
View this post on Instagram
সিনিয়র অফিসারদের সূত্র ধরে জনি ধীরে ধীরে কমেডি শোয়ের অফার পেতে থাকেন। তাঁর কমেডি শো এতটাই বিখ্যাত হতে শুরু করেছিল যে একসময় শোয়ের চাপে 1981 সালে হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল জনিকে। কমেডি শোয়ের সূত্র ধরেই কল্যাণজী-আনন্দজীর গ্রুপে যোগ দেওয়ার সুযোগ এল জনির কাছে। এই গ্রুপের মাধ্যমেই জনি আন্তর্জাতিক মানের কমেডিয়ান হয়ে উঠলেন। জনিই হলেন সমগ্র ভারতবর্ষের প্রথম ‘মাস পপুলার স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান’।
View this post on Instagram
জনির প্রথম ফিল্ম ছিল ‘তুম পর হাম কুরবান’। সেই ফিল্মে অভিনয় করতে গিয়ে সুনীল দত্ত (sunil dutt)-এর চোখে পড়ে গেলেন জনি। জহুরী জহর চিনলেন। 1982 সালে সুনীল দত্ত ‘দর্দ কা রিস্তা’ ফিল্মে একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জনিকে মনোনীত করেন। কিংবদন্তীর হাত ধরেই কিংবদন্তী হয়ে ওঠার শুরু হয়েছিল। এখনও অবধি সাড়ে তিনশোর বেশি ফিল্মে অভিনয় করেছেন জনি। অদ্ভুত এই মানুষটি। লেজেন্ড হওয়া সত্ত্বেও এখনও অবধি অহঙ্কার দেখাতে শিখলেন না। সানগ্লাস পরে স্টার সেজে শেষকৃত্যে ঢুকতে শিখলেন না। তাই হয়তো তাঁর অবদান ভুলে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা তাঁকে ট্রোল করলেন। দিলীপ কুমার (Dilip kumar) যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে হলফ করে বলা যায়, তিনি জনির এই অপমান মেনে নিতে না। কারণ একজন সত্যিকারের শিল্পীই আরেক শিল্পীর কদর করতে জানেন।