বাঙালীর স্বর্ণযুগ মানে মহানায়ক উত্তম কুমার (uttam kumar), সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় (sabitri chatterjee), তুলসী চক্রবর্তী (tulsi chakraborty), মাধবী মুখোপাধ্যায় (madhabi mukherjee), ছবি বিশ্বাস (chobi biswas)-এর মতো ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি। আসলে যুগটা যেমনই হোক, সোনার ছোঁয়া এনে দিয়েছেন তাঁরা। চলচ্চিত্র মহিমান্বিত হয়েছে তাঁদের অবদানে। কঠিন চরিত্রের পিতার চরিত্র মানেই ছবি বিশ্বাসের অভিনয়। সাবিত্রী মানেই ‘ধন্যি মেয়ে’-র নরম, মাতৃস্নেহে পরিপূর্ণা বৌদি। মাধবী তো আপামর বাঙালির চিরকালীন ‘চারুলতা’। তুলসী চক্রবর্তীকে কি বলে বর্ণনা করব? ওনার প্রতিভা যে আন্তর্জাতিক মানের। কয়েকটি শব্দ তাঁর জন্য অপ্রতুল। মহানায়ক উত্তমকুমার একদিকে ‘চৌরঙ্গী’-র ‘স্যাটা বোস’, অপরদিকে ‘নায়ক’-এর অরিন্দম। কিন্তু এখন সবাই তাঁদের কথা শুনে নস্টালজিক হয়ে যান। প্রত্যেক জন্মদিনে মহানায়কের ছবিতে ঘটা করে মালা পরানো হয়। সাবিত্রী দেবী, মাধবী দেবী সিরিয়ালের সেটে এলে সবাই তটস্থ হয়ে থাকেন। কিন্তু সত্যিই কি চলচ্চিত্রে তাঁরা যে অবদান রেখেছেন, তার জন্য সঠিক মূল্যায়ন পেয়েছেন। না, পাননি। তাহলে তুলসী চক্রবর্তী অথবা ছবি বিশ্বাসের জন্মদিনে তাঁদের স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন হত। খুব বিতর্কিত লাগছে না কথাগুলি? কিন্তু এগুলি শুধুমাত্র শব্দের মধ্যে আবদ্ধ থাকা লেখনী নয়, বাঙালি হিসাবে বড্ড আফশোসের জায়গা। যে আফশোসের সুর শোনা গিয়েছে সাবিত্রী দেবীর কন্ঠে।
সম্প্রতি শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (saswata chatterjee)-এর সঙ্গে সাবিত্রী ও মাধবীর একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই সাক্ষাৎকারে সাবিত্রীকে বলতে শোনা গেছে, তাঁর সঙ্গেও পক্ষপাতিত্ব হয়েছে। জীবনে তাঁর যা যা প্রাপ্তিযোগ্য ছিল তা তিনি পাননি। এমনকি ছবি বিশ্বাস বা উত্তমকুমারও যথেষ্ট বঞ্চিত হয়েছেন। সাবিত্রী বলেছেন, মৃত্যুর পর উত্তমকুমারের প্রতি যে সম্মান দেখানো হয়, তার কণামাত্র বেঁচে থাকতে পাননি তিনি। সাবিত্রী জানিয়েছেন, মহানায়কও তাঁর কাছে দুঃখ করেছেন। তবে মহানায়ক সাবিত্রীকে যা বলেছেন তা মহানায়কের ব্যক্তিগত মতামত। ফলে সাবিত্রী তা জনসমক্ষে আনতে রাজি হননি। তবে বঞ্চনার কারণে উত্তমকুমারও ব্যথিত হয়েছিলেন, তাঁর চোখেও জল এসেছিল, বলেছেন সাবিত্রী। এই কথা শুনে স্পষ্টবক্তা শাশ্বত বলেন, এই কারণেই উত্তমকুমারের অবর্তমানে আজ মানুষ তাঁর জন্য চোখের জল ফেলছে।
সাবিত্রী ও আপামর বাঙালি জানেন তুলসী চক্রবর্তীর মতো আন্তর্জাতিক মানের কমেডিয়ানের সংসারেও লেগে থাকত দারিদ্র্য। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পাওয়া থিয়েটারের মেডেল বেচে সংসার চালাতেন তাঁর বৃদ্ধা স্ত্রী। কেউ একবারের জন্য তাঁর খোঁজ নেননি। শেষ জীবনে অনাহারে, চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছিলেন তুলসী চক্রবর্তীর স্ত্রী। এমনকি তাঁর মৃত্যুসংবাদও অনেক পরে ইন্ডাস্ট্রিতে পৌঁছায়। কিন্তু এই বঞ্চনা কি সত্যিই প্রাপ্য ছিল তাঁদের মতো প্রতিভাদের?
তবে সাবিত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)-কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, শিল্পীদের সংরক্ষণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী অনেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। আজ আর তুলসী চক্রবর্তী নেই, নেই ছবি বিশ্বাসদের মতো অগণিত প্রতিভা। তাঁদের বঞ্চনার উত্তর কে দেবে? উত্তর কি আদৌ আছে?