Vacation: ইতিহাসের গন্ধ মেখে নিরালা সি বিচে শীত-যাপন, কলকাতার কাছেই এই স্বর্গের খোঁজ জানতেন!
পাহাড় প্রেমী মানুষের কমতি নেই। গ্রীষ্ম হোক বা বর্ষা, পাহাড় বারেবারে পর্যটকদের হাতছানি দিয়েছে, দেবেও। এমনকি অনেকে বরফের টানে কনকনে শীতেও পাড়ি দেন পাহাড়ে। তবে পাহাড় প্রেমীদের মতো শীতকাতুরে মানুষও তো কম নেই। কলকাতার ঠাণ্ডাতেই যারা কেঁপে অস্থির হন, শীতে পাহাড়ে গেলে তো কথাই নেই! শীতের ছুটিতে তাই অনেকেরই গন্তব্য হয় সমুদ্র সৈকত (Sea Beach)। সমুদ্রের শিরশিরে হাওয়া গায়ে মেখে বালিতে বসে মিঠে রোদ পোহাতে ভালোবাসেন অনেকেই।
শীতকাল এলেই তাই দীঘা, মন্দারমণি, পুরীর হোটেল রিসর্টগুলি উপচে পড়ে ভিড়ে। সি বিচগুলিতেও তিল ধারণের জায়গা থাকে না। কিন্তু কাজ থেকে ছুটি নিয়ে কয়েকদিনের জন্য কেউই ভিড়ভাট্টা পছন্দ করেন না। তাই খোঁজ পড়ে লোকের ভিড় এড়িয়ে অফবিট লোকেশনের। আপনিও যদি এই তালিকাতেই থাকেন তাহলে এই প্রতিবেদনটি খুব কাজে লাগতে চলেছে আপনার। কারণ এই প্রতিবেদনে খোঁজ থাকছে এমন এক সমুদ্র সৈকতের যেখানে লোকের ভিড়ও কম আবার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অফুরন্ত।
জায়গাটির নাম হল খেজুরি (Khejuri)। শুধু নিরালা সমুদ্র সৈকত নয়, এই জায়গাটির সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ইতিহাসের গন্ধ। রাজা রামমোহন রায়, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্মৃতি জড়ানো খেজুরি হল তৎকালীন উত্তর পূর্ব ভারতের প্রথম সামুদ্রিক বন্দর। ইতিহাসের পৃষ্ঠা ওলটালে জানা যায়, ১৫১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পর্তুগিজদের জাহাজ এসে ভেড়ে এই বন্দরে। এরপর ১৬৭২ খ্রিস্টাব্দে রেবেকা নামের একটি পালতোলা জাহাজ আসে এখানে। সে সময়ে অবশ্য জায়গাটির নাম ছিল কেডিগিরি। এরপর দীর্ঘ এক শতাব্দী পর ইংরেজদের হাত ধরে গড়ে ওঠে খেজুরি বন্দর। কিন্তু তখন নীলের আমদানি রপ্তানি, এমনকি দাসপ্রথার জন্যও ব্যবহার করা হত এই বন্দর। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে এখানে স্থাপন করা হয় ভারতের প্রথম ডাকঘর, যার মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির খবর আদান প্রদান হত। জানা যায়, ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় এই ডাকঘরে থেকেছিলেন। এর পরবর্তীকালে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরও এই বন্দর দিয়েই বিদেশ যাত্রা করেছিলেন।
ইতিহাসের নিদর্শন এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এখানে। রয়েছে হিজলি শরিফ, প্রাচীন লাইটহাউস, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সাহিত্যে পাওয়া কপালকুণ্ডলা মন্দির। দেশের সবথেকে বড় মৎস্য বন্দরও রয়েছে এখানেই। উপরন্তু শীতকালে প্রচুর পরিযায়ী পাখির আস্তানাও হয় এই স্থান। এবার প্রশ্ন কীভাবে আসবেন খেজুরিতে? থাকবেনই বা কোথায়? সড়ক পথে আসতে হলে কলকাতা বা হাওড়া থেকে বাসে আসতে পারেন। রেলপথে এলে দীঘা-হাওড়া লাইনের ট্রেন ধরে নামতে হবে হেঁড়িয়া স্টেশনে। সেখান থেকে বাস ধরে আসা যাবে খেজুরি। এখানে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল এবং বেসরকারি লজও পেয়ে যাবেন।