তাঁর কণ্ঠস্বরে বাসস্থান ছিল স্ময়ং দেবী সরস্বতীর। তাঁর চলে যাওয়া এই সংগীত জগতের কাছে মা হারানোর মতো। সারা বিশ্বও তাঁর শূন্যতা উপলব্ধি করছে। লতাজির প্রয়াণের ২৪ ঘন্টা পার হয়েছে অথচ শোকাকুল মন থেকে নিস্তার নেই। মহাপ্রয়াণের আগের ৪৮ ঘন্টা কেমন ভাবে কেটে ছিল সুর সম্রাজ্ঞী লতাজির? সদা হাসমুখ মানুষটির মুখের হাসি মিলিয়ে যায়নি তো?
লতাজির চিকিৎসক প্রতিত সামদানি প্রথমেই বলেন, “অত কষ্টের মধ্যেও তাঁর মুখে যে মৃদু হাসি টা লেগে থাকতো। তা কখনোই ভোলবার নয়।” শুধু প্রতিত নয় তাঁর সাথে সাথে তাঁর আট বছরের বাচ্ছা মেয়েও পেয়েছিলেন এই জীবন্ত সরস্বতীর সান্নিধ্য। এটা অনেকটা আশীর্বাদ বলে মনে করছেন তিনি। ভিডিও কল অথবা চিঠিতে কথা হত মেয়েটির সাথে। তাই তাঁর চলে যাওয়া মেয়েটির কাছেও অনেক কষ্টের। প্রতিটি এও জানান, গত ৩ বছর ধরে একইভাবে অসুস্থতার দরুন বেশি কথা বলতে পারতেন না লতাজি। অথচ ভাবনা ছিল সবার জন্য। হাসপাতালে ভর্তি হলেই বলতেন, “সবার যেন সমান চিকিৎসা হয়।”
ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের আই সি ইউ ওয়ার্ডের আরও দুজন নার্স ছিলেন যাঁরা বিগত ২৯ দিন কিছুদিন ধরেই লতাজির কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। এবং তাঁর শেষমুহূর্তেও তাঁর পাশে ছিলেন। ৩০ বছরের সারিকা দেবানন্দ ভিঁসে ও অশ্বিনী। সারিকা কান্নায় ভেঙে পড়ে জানান, “শিবাজী পার্কে যখন ভারতরত্ন লতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হচ্ছে, তখন উপস্থিত ছিলেন আমি। ওঁকে খুব মিস করবো। শেষ দুদিন লতাজির অবস্থার অত্যধিক অবনতির কারণে ওনাকে ভেন্টিলেশনে ফিরিয়ে আনা হয়। তাঁর অক্সিজেন লেভেল ক্রমশ কমতে শুরু করেছিল কারণ আরও দুটো নিউমোনিয়ার প্যাচ তৈরি হয়েছিল তাঁর ফুসফুসে। তখনও উনি আমাদের চিনতে পেরেছিলেন। আমরা যখনই কোনো মজার কথা লতাজির সামনে বলতাম, উনি বেশ বুঝতে পারতেন।”
৮ জানুয়ারি করোনার কবলে পড়ে ওই ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হন লতাজি। শুধু তাই নয় নিউমোনিয়া ও বার্ধক্যজনিত সমস্যাও কাবু করে ফেলেছিল তাঁকে। ৩০ জানুয়ারি করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। শরীরের অবনতি কিছুটা হ্রাসও পেয়েছিল। নার্স সারিকা এও জানান, “শনিবার রাত থেকে লতাজির প্রস্রাব, কিডনি সব বন্ধ হয়ে যায়। দুবার ধরে ডায়ালিসিস করেও সারা দেননি তিনি। শেষমেষ রবিবার সকাল ৮টা ১২ মিনিটে তাঁর আত্মা মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায়।”