Haimanti Ganguly: নিয়োগ দূর্নীতিতে কে এই ‘রহস্যময়ী’ হৈমন্তী!
নিয়োগ দূর্নীতি রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। জালে একের পর এক ধরা পড়ছেন রাঘব বোয়ালরা। পাশাপাশি উঠে আসছে তাঁদের মডেল ও অভিনেত্রী সঙ্গিনীদের নাম। আগেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)-র বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (Arpita Mukherjee)-কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। এবার উঠে এল হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় (Haimonti Ganguly)-র নাম। হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh) গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তিনি একজন অভিনেত্রীর কথা বারবার বলেছেন যিনি নিয়োগ দূর্নীতিতে যুক্ত। কুন্তলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই জানা যায় গোপাল দলপতি (Gopal Dalpati)-র কথা। কুন্তল জানিয়েছিলেন, গোপালের মাধ্যমেই নিয়োগ দূর্নীতির অর্থের লেন-দেন হত। প্রকৃত অপরাধী গোপাল। কুন্তলই জানান, গোপালের দ্বিতীয় স্ত্রী হৈমন্তীর কথা।
তদন্তে নেমে সিবিআই জানতে পেরেছে মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya) ঘনিষ্ঠ ও বেসরকারি ডিএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডল (Tapas Mondal)-এর পরিচিত গোপাল অতীতে জড়িত ছিলেন চিটফান্ড কান্ডে। দিল্লির তিহার জেলে বন্দি থাকার পাশাপাশি সিবিআই দফতরেও হাজিরা দিতে হয়েছিল তাঁকে। কুন্তল দাবি করেছেন, হৈমন্তীর কাছেই রয়েছে সব টাকা।
জানা গিয়েছে, হাওড়ার উত্তর বাকসারার চড়কতলা এলাকায় মেয়ে হৈমন্তী বরাবর উচ্চাকাঙ্খী ছিলেন। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির কয়েকজন পরিচালকের মতে, চটকদার চেহারা ছাড়া হৈমন্তীর আর কোনো গুণ ছিল না। ফলে তাঁর পক্ষে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পাওয়া মুশকিল ছিল। এমতাবস্থায় হৈমন্তীর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, নিজে পছন্দ করে পূর্ব মেদিনীপুরের ভুপতিনগর থানার বাজকূলের বাসিন্দা গোপালকে বিয়ে করেন হৈমন্তী। যথেষ্ট ধূমধাম করে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। গোপাল তাঁর নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন আরমান গাঙ্গুলী (Armaan Ganguly)। কিন্তু এরপরেই চিটফান্ড কান্ডে গ্রেফতার হন গোপাল। দিল্লির তিহার জেলে থাকাকালীন হৈমন্তীর সাথে তাঁর যোগাযোগ না থাকলেও জেল থেকে বেরোনোর পর আবারও যোগাযোগ স্থাপন করেন তাঁরা।
এরপর হৈমন্তী কয়েকটি বি গ্রেড মিউজিক ভিডিওয় অভিনয় করার পাশাপাশি ‘জাল’ নামে একটি ফিল্মে বিনিয়োগ করেন। ওই ফিল্মের পরিচালক জানিয়েছেন, হাওড়ার এক ব্যক্তির মাধ্যমে এই ফিল্মে বিনিয়োগ করেছিলেন হৈমন্তী। এমনকি পরিচিত কাঠের মিস্ত্রির মাধ্যমে পরিচালক অতনু বসু (Atanu Basu)-র ফিল্ম ‘অচেনা উত্তম’-এ অভিনয়ের জন্য সুপারিশ করেছিলেন হৈমন্তী। কিন্তু এই ফিল্মে তিনি একটি নার্সের চরিত্রে সুযোগ পান। অতনু জানিয়েছেন, তিন-চার দিনের শুটিং শিডিউল থাকলেও প্রথমদিনই কাজ করতে এসে হৈমন্তী প্রযোজকের সাথে যোগাযোগের ছুতো খুঁজছিলেন। ফলে তাঁকে ফিল্ম থেকে বাদ দিতে বাধ্য হন অতনু। এমনকি হৈমন্তী ‘অচেনা উত্তম’-এর প্রযোজকের সাথে অন্য পরিচালকের যোগাযোগ করানোর চেষ্টায় ছিলেন।
তবে শুধুমাত্র ফিল্ম জগৎ নয়, হৈমন্তীর বিনিয়োগ ছিল ‘হৈমন্তী অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থায়। সংস্থাটির নাম উল্লেখ রয়েছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রকের অধীনে রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিস-এর নথিতে। 2013 সালের মার্চ মাসে তৈরি হওয়া এই সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। ডালহৌসিতে এই সংস্থার অফিসে বর্তমানে তালা ঝুলছে। অফিসের টাইমিং-ও যথেষ্ট রহস্যজনক, রাত বারোটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা।
মুম্বইয়ের নরিম্যান পয়েন্টে সিরোকো পার্টনার্স নামে একটি সংস্থার ডিরেক্টর পদেও রয়েছেন হৈমন্তী। কুন্তল জানিয়েছেন, নিয়োগ দূর্নীতির কোটি কোটি টাকা ওই সংস্থার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়েছে। এছাড়াও হৈমন্তীর নামে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট যার মধ্যে বেহালা ও টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট তালাবন্ধ রয়েছে। প্রতিবেশীরা দাবি করেছেন, 2015 সাল থেকে গোপালের সাথে টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে থাকতেন হৈমন্তী। 2023-এর জানুয়ারি মাসে তাঁদের শেষ বার ওই ফ্ল্যাটে দেখা গিয়েছিল।
অপরদিকে হৈমন্তীর মা দাবি করেছেন, মেয়ে-জামাই-এর সাথে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ প্রতিবেশীদের বয়ান অনুযায়ী, দু-তিন দিন আগেও বাকসারার বাড়িতে দেখা গিয়েছিল হৈমন্তীকে। ইতিমধ্যেই নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের ডিপি পরিবর্তন করেছেন হৈমন্তী। পরিবর্তন করেছেন প্রাইভেসি সেটিংস। খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বড়বাজারের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে গোপালের অ্যাকাউন্টের যেখানে তাঁর নাম আরমান। এই অ্যাকাউন্টের নমিনি হিসাবে রয়েছে হৈমন্তীর নাম। এছাড়াও হাওড়ার জগাছা এলাকায় হৈমন্তীর একটি সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও হৈমন্তীর প্রতিবেশীদের দাবি, বিভিন্ন দামি গাড়ি ব্যবহার করতেন তিনি।