বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের অভিনেত্রীদের কথা উঠলে তাঁর নাম আসবে প্রথম দিকেই। বড় বড় ডাগর চোখের মেয়েটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন আট থেকে আশি। তাঁর অভিনয় দক্ষতাও চমকে দিয়েছিল সকলকে। তিনি সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় (Sabitri Chatterjee)। পরিবারে কেউ চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত হওয়া তো দূরে থাক, ওপার বাংলা থেকে এপারে এসে তিনিই প্রথম পা রাখেন রূপোলি জগতে। কেমন ছিল সেই সফর, নিজের মুখেই সে গল্প শুনিয়েছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী।
অপুর সংসার শো তে এসে সাবিত্রী জানিয়েছিলেন তাঁর সিনেমায় পা রাখার গল্প। কুমিল্লার মেয়ে সাবিত্রী বেড়ে ওঠেন কলকাতায়। তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর পাশের বাড়ির একটি ছেলের চোখ টাইফয়েডে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাঁকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার সময় সঙ্গে যাওয়ার জন্য জেদ ধরেছিলেন সাবিত্রী। অভিনেত্রী বলেছিলেন, তাঁর বংশে কেউ কোনোদিন কলকাতা দেখেনি। তাঁর খুব শখ ছিল কলকাতা দেখার, ট্রাম গাড়ি, বাসে চড়ার। এমনকি কলকাতায় আসার টাকাও তিনি নিজেই জোগাড় করেছিলেন। কীভাবে?
সাবিত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁর ছোট বেলায় এক সময় টাইফয়েড হয়েছিল। তখন ওষুধ খাওয়ার জন্য তাঁকে অনেকে অনেক টাকা দিয়েছিল। সেই সব টাকাই জমিয়ে রেখে দিয়েছিলেন সাবিত্রী। সেই টাকা নিয়েই বাবাকে বোঝাতে বলেছিলেন তিনি। কলকাতায় আসা হয়েছিল সাবিত্রীর। সাতদিনের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন তাঁরা। সঙ্গে যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা সাতদিন পর ফিরে গেলেও সাবিত্রী কলকাতায় থেকে যান। তাঁর বাবা চিঠি পাঠিয়েছিলেন। দিদির বাড়ি ছিল কলকাতায়, সেখানেই থেকে যান সাবিত্রী।
এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছিলেন, ফ্রক পরার বয়স থেকে অভিনয় শুরু করেছিলেন তিনি। পরিবারের অতজনের পেট চালানোর দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। প্রত্যেকের জন্য সারা জীবন ধরে করে গিয়েছেন তিনি। ১৯৫২ সালে ‘পাশের বাড়ি’ নামক ছবিতে প্রথম অভিনয় করেছিলেন ছোট্ট সাবিত্রী। পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ২০০ টাকা। সেখান থেকে বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।